নাজাতের দশ দিন
গরিবের মুখে ঈদের হাসি ফুটে সদকাতুল ফিতরে
মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
অফুরন্ত রহমত, বরকত, মাগফিরাত আর নাজাতের মাস রমজান শেষ হয়ে যাচ্ছে। রমজানের আমলভরা দিনগুলো বিদায় নিয়ে যাচ্ছে। মুমিনের হৃদয় কাঁদছে। তবে রমজান রেখে যাচ্ছে আমাদের জন্য মহান শিক্ষা। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা করে আমরা শিখেছি সাম্য, মৈত্রী, সমবেদনা আর সহমর্মিতা। নবিজি (সা.) বলেছেন-‘রমজান হলো সমবেদনা ও সহমর্মিতার মাস।’ (বায়হাকি)। আমাদের মাঝে তৈরি হয়েছে-সহমর্মিতা আর সম অনুভব।
রমজান মাসে ধনীরা গরিবের দুঃখ বুঝেছে; ক্ষুধায় জঠর জ্বালা অনুভব করেছে। তাই তো ইসলামে ধনীর পক্ষ থেকে গরিবের জন্য সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ করা হয়েছে। সদকাতুল ফিতর ইসলামের অনন্য একটি ইবাদত; যে ইবাদতে গরিবের মুখে হাসি ফোটে। রমজানের শেষে ঈদুল ফিতরের আগে এ ইবাদত পালন করতে হয়-অর্থাৎ সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। সদকাতুল ফিতর হলো রোজার ক্ষতি পূরণ। তাছাড়া সদকাতুল ফিতরের কারণে ধনী-গরিব উভয়ের মধ্যে সাম্য তৈরি হয়। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি হয়। ধনীদের মতো গরিবরাও উত্তম পোশাক পরতে পারে। ভালো খাবার ক্ষেতে পারে। সমাজের অসহায় মানুষগুলোর মনে ঈদের আনন্দ বয়ে যায়, হৃদয়ে সুখ অনুভব হয়, মুখে হাসি ফোটে। নবিজি (সা.) বলেছেন-সদকাতুল ফিতর আদায় করার আগ পর্যন্ত রমজানের রোজা আসমান জমিনের মাঝে ঝুলন্ত থেকে যায়।
ইসলামের বিধান হলো-ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময় যে ব্যক্তির কাছে কমপক্ষে সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সমমূল্য পরিমাণ সম্পদ থাকবে তার ওপর সদকাতুল ফিতর আবশ্যক বা ওয়াজিব।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক ঘোষিত এবারের নির্ধারিত ফিতরার পরিমাণ হচ্ছে-জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬৪০ টাকা এবং সর্বনিু ১১৫ টাকা। ইসলামে নির্দেশিত সাদকাতুল ফিতরের পরিমাণ হলো এক সা’ খাদ্যদ্রব্য, এক সা’ খেজুর, এক সা’ যব বা এক সা’ কিশমিশ। এক সা’ সমপরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন কেজি।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, নবিজি (সা.) যখন আমাদের মধ্যে ছিলেন তখন আমরা ছোট-বড়, মুক্ত ক্রীতদাস সবার পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা’ খাদ্য অর্থাৎ এক সা’ পনির বা এক সা’ যব বা এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ কিশমিশ। (মুসলিম) উত্তম হলো- ঈদের দিন সকালে ঈদের মাঠে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা।
প্রিয় পাঠক! আপনার নিজের পক্ষ থেকে ও আপনার নাবালেগ সন্তানদের পক্ষ থেকেও সদকাতুল ফিতর আদায় করা আবশ্যক। আপনার ওপর যদি সদকাতুল ফিতর আবশ্যক নাও হয়-তবুও আপনি সদকাতুল ফিতর আদায় করতে পারবেন, এ মহাপুণ্য অর্জন করতে পারবেন। সদকাতুল ফিতর অসহায়-গরিবের অধিকার। কোনো মসজিদ বা সাধারণ মাদরাসায় দান না করে গরিবের অধিকার গরিবদের বুঝিয়ে দিন। ঈদের দিন খুশির দিন। ঈদের আনন্দ হোক ধনী-গরিব সবার প্রাণে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে সদকাতুল ফিতর আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : খতিব, গাউসুল আজম জামে মসজিদ, সেক্টর-১৩, উত্তরা, ঢাকা।