গাজীপুর সিটি নির্বাচন
আ.লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগ, নানা গুঞ্জন
কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি?
শাহ সামসুল হক রিপন, গাজীপুর
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি, তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। ২৫ মে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে বিএনপির কোনো মেয়রপ্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী এখন আওয়ামী লীগ। দুজন হেভিওয়েট নেতাসহ আওয়ামী লীগের এক ডজন প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। তাদের সমর্থনে দলীয় কর্মী-সমর্থকরা নগরে ব্যানার, ফেস্টুন, রঙিন পোস্টার সাঁটিয়েছেন।
মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান রাসেল, ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণসহ আওয়ামী লীগের অর্ধডজন নেতা কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ ও লবিং করেছেন। রোববার থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফর্ম বিতরণ শুরু হয়েছে।
নৌকার মাঝি কে হচ্ছেন-বাজারঘাট, পাড়া-মহল্লা, চায়ের দোকানে আড্ডায় তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের জল্পনাকল্পনার যেন শেষ নেই? তবে সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনার শীর্ষে আছেন গাজীপুর সিটির সাময়িক বরখাস্ত মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। রোববার গাজীপুর প্রেস ক্লাবের ইফতার ও দোয়া মাহফিলে জাহাঙ্গীর আলম যোগ দেন।
এ অনুষ্ঠানের ফাঁকে যুগান্তরকে তিনি জানান, কতিপয় লোকের মিথ্যা অপপ্রচারে তাকে খেসারত দিতে হয়েছে। ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে তিনি দলে ফিরেছেন। নির্বাচন করতে তার কোনো বাধা নেই বলেও সুপ্রিমকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পার্টির সহায়তায় তিন বছর রাতদিন পরিশ্রম করে নগরের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। দেড় বছর ধরে দায়িত্বের বাইরে থাকলেও প্রতিমুহূর্তে আমি জনগণের পাশে থেকেছি। নগরবাসী আমার সঙ্গে আছে এবং দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেব।
নগরের ১৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল মালেক মিয়া যুগান্তরকে জানান, রাজধানী লাগোয়া এ শিল্পনগরীতে নির্বাচনি হাওয়া বইতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তোড়জোড় বেড়েছে। পবিত্র রমজান হওয়ায় প্রতিদিন ইফতার ও দোয়া মাহফিল, সামাজিক অনুষ্ঠান এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রার্থিতার বিষয়ে জানান দিচ্ছেন অনেকে। নগরের বাসন এলাকার ভোটার শরিফুল ইসলাম শরীফ যুগান্তরকে বলেন, আগামী নির্বাচনে একজন সৎ, দক্ষ ও জনদরদি ব্যক্তি নগরীর দায়িত্ব নিক।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা আসলাম উদ্দিন বলেন, ২০১৮ সালে সরকারি দলের প্রার্থী হিসাবে জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হন। তবে বরখাস্ত হয়ে তিনি দেড় বছর ধরে দায়িত্বের বাইরে। ক্ষমতার বাইরে থাকলেও তিনি সব সময় মানুষের কাছে আছেন। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল বলেন, যে কেউ দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন। কেন্দ্র সবার বিষয়ে খোঁজখবর রাখছে। সব বিষয় বিবেচনা করেই কেন্দ্র প্রার্থী দেবে। কেন্দ্র যাকে দেবে, আমরা তার পক্ষেই কাজ করব।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩৩ জন, নারী ভোটার ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮১২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) ভোটার ১৮ জন। তফশিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৭ এপ্রিল, মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮ মে, প্রতীক বরাদ্দ ৯ মে এবং ভোটগ্রহণ ২৫ মে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনি এলাকায় ব্যানার, বিলবোর্ড, পোস্টার সরিয়ে নিতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন রিটার্নিং অফিসার। কিন্তু সোমবার পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউই ব্যানার, ফ্যাস্টুন বা পোস্টার সরিয়ে নেননি।
বরং নতুন করে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের রঙিন পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। ২০১৩ সালের ৭ জুলাই গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান।
অপরদিকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ‘আনারস’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে নামেন। নানা নাটকীয়তায় তিনি (জাহাঙ্গীর আলম) ব্যাপক আলোচনায় আসেন এবং কেন্দ্রের নির্দেশে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
কিন্তু আজমত উল্লা খান বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক এমএ মান্নানের কাছে ১ লাখ ৬ হাজার ৫৭৭ ভোটে পরাজিত হন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আজমত উল্লা খান। ১৯৯৬ ও ২০০৩ সাল পর্যন্ত দুইবার তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি।
এর পাশাপাশি ২০১৮ সাল থেকে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য। ১৯৯৫ সালে তিনি টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তিন মেয়াদে ১৮ বছর টানা চেয়ারম্যান ও মেয়র ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রলীগের গাজীপুর জেলা শাখার সহসভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, সহসম্পাদক ও সহসভাপতি ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম।
গাজীপুর সদর ও টঙ্গী উপজেলা পরিষদের বিপুল ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। অনারেবল টেক্সটাইল অ্যান্ড কম্পোজিট এবং জেড আলম অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম।