Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সিটি করপোরেশন নির্বাচন

নৌকার মনোনয়নের অপেক্ষায় বরিশাল

Icon

আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নৌকার মনোনয়নের অপেক্ষায় বরিশাল

ফাইল ছবি

ধানের শীষবিহীন ভোট কতটা জমবে সন্দেহ থাকলেও কে হচ্ছেন নৌকার প্রার্থী, তা জানতে অধীর আগ্রহে আছেন বরিশালের মানুষ। বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ ৫ জন চাইছেন ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একেবারেই নতুন আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতও আছেন এই তালিকায়।

বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর চাচা খোকন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগিনা। নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে থাকা বিএনপির কেউ প্রার্থী না হলেও দলে পদ-পদবি নেই সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রুপন হচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। ভোটের মাঠে লড়তে এরই মধ্যে ইকবাল হোসেন তাপসকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি। নিজ এলাকার নগর ভবনের দখল নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে চরমোনাই পিরের দল ইসলামী আন্দোলনও। এমন পরিস্থিতিতে প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে অনিশ্চয়তার বার্তা এসেছে বাসদের ডা. মনীষা চক্রবর্তীর কাছ থেকে। তার দল এই নির্বাচনে যাবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

১২ জুন অনুষ্ঠিত হবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। ঢাকায় রোববার থেকে দলীয় প্রার্থীদের কাছে মনোনয়ন ফর্ম বিক্রি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। প্রথম দিনেই ফর্ম সংগ্রহ করেছেন বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিমউদ্দিন। যদিও মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে এর আগে কখনোই কিছু বলেননি তিনি। একইভাবে দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিএম কলেজ কর্মপরিষদের সাবেক ভিপি মঈন তুষার। সাবেক মেয়র মরহুম শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুবার্ষিকীতে ইফতার মাহফিল আয়োজনের পর ৮ এপ্রিল শনিবার ওই ঘোষণা দেন তিনি।

এ দুজন ছাড়াও এখানে দলের মনোনয়ন চাইছেন আরও ৩ জন। তারা হলেন বিএম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হক খান মামুন, খোকন আব্দুল্লাহ এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। শেষের এই ৩ জনকে নিয়েই মূলত বরিশালে চলছে জল্পনাকল্পনা। স্থানীয় রাজনীতিতে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিমের অনুসারী খান মামুন বহু বছর ধরেই আছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। রোববার দলীয় মনোনয়নের ফর্ম কিনেছেন তিনি। বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ এই নেতা এবার বেশ জোরেশোরেই নেমেছেন মাঠে। অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কার্যক্রমে।

যুগান্তরকে খান মামুন বলেন, ‘জীবনের ৪৩ বছর পড়ে আছি রাজপথে। বাবার রেখে যাওয়া জমি বেচে দল করছি। নেত্রী আমার মূল্যায়ন করবেন, সেই আশাতেই আছি।’ পিতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের পরিচয়ে বরিশালে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চাইছেন খোকন সেরনিয়াবাত। যদিও এখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কখনোই কোনো অংশগ্রহণ ছিল না তার। রোববার তিনিও সংগ্রহ করেছেন দলীয় মনোনয়ন ফর্ম। ৯ বছর আগে সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে রাজনীতির মাঠে নামার চেষ্টা চালিয়েছিল হিরন অনুসারীরা। খোকনের অনাগ্রহে সফল হয়নি তা। সত্তরোর্ধ্ব এই ব্যবসায়ী এবার চাইছেন মনোনয়ন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত সাড়ে ৪ বছরে কাঙ্ক্ষিত কোনো উন্নয়ন হয়নি বরিশালে। সুশীল সমাজসহ সাধারণ মানুষ চাইছে পরিবর্তন। যে কারণে আমি মেয়র পদে মনোনয়ন চাইছি।’

দলের অনেকে মনোনয়ন চাইলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের পূর্ণ সমর্থন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর দিকে। তার পক্ষে একাট্টা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। সোমবার জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা মিলে ঢাকায় দলীয় কার্যালয় থেকে মেয়র সাদিকের পক্ষে সংগ্রহ করেছেন মনোনয়ন ফর্ম। আজমীর শরিফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে বর্তমানে ভারতে রয়েছেন সাদিক।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজস্ব আয়ে চলার। একমাত্র সাদিকই পেরেছেন তার ওই নির্দেশনা মানতে। টানা সাড়ে ৪ বছর উন্নয়ন খাতে তেমন কোনো বরাদ্দ না পেলেও বরিশালকে রেখেছেন সাজিয়ে-গুছিয়ে। নগর ভবনের আয়ে নগরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ পরিচ্ছন্ন রেখেছেন বরিশালকে।

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘৩০ ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতারা সাদিকের পক্ষে। এখানে দলকে সুসংগঠিত রেখেছেন তিনি। সাড়ে ৪ বছরে বরিশাল নগরে কোনো চাঁদাবাজি কিংবা সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া বাপ-দাদার পরিচয়েই কেবল নয়, রাজনীতির রাজপথে টানা ৮/৯ বছর পরিশ্রম করে মেয়র পদে মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। সরকারি বরাদ্দ ছাড়াই কেবল জনগণের সহযোগিতায় যে পুরো একটি নগরীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানো যায়, তার দৃষ্টান্ত গড়েছেন সাদিক। পরিশ্রম, দক্ষতা আর যোগ্যতার ভিত্তিতেই আবারও সাদিককে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি আমাদের।’

বিএনপির সাবেক মেয়র মরহুম আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রুপন ঘোষণা দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার। দলে কোনো পদ-পদবি না থাকা রুপন এখানে বিএনপির টেস্ট কেস কি না, সেই আলোচনাও চলছে। একসময়ের ছাত্রদল নেতা রুপন নির্বাচনে নামলে বিএনপির ভূমিকা কী হবে, সেটি স্পষ্ট নয়। নৌকা ঠেকাতে গিয়ে ধানের শীষের ভোট যাতে অন্য কোনো বাক্সে না যায়, সেজন্যই প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানান রুপন। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘দলে যেহেতু কোনো পদ-পদবি নেই, তাই রুপনের হার কিংবা জিত, দুটিতেই লাভ বিএনপির। জিতলে প্রমাণ হবে দলের জনপ্রিয়তা আর হারলে মিলবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতদুষ্টতার প্রমাণ। তাই এখনই রুপনের ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলছে না বিএনপি।’

নির্বাচন প্রশ্নে সবচেয়ে পরিণত রাজনৈতিক আচরণের প্রমাণ দিয়েছে জাতীয় পার্টি। বহু আগেই তারা এখানে চূড়ান্ত করে রেখেছে তাদের প্রার্থী। মাঠেও আছেন প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। আগের নির্বাচনেও তাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছিল দল। নির্বাচনের আগমুহূর্তে কেন্দ্র থেকে আসে প্রার্থী প্রত্যাহারের ঘোষণা। তবে এবার তেমন কিছু হবে না নিশ্চয়তা তাপসের। ৫ বছর ধরে ভোটের মাঠে আছেন তাপস। দরিদ্র-অসহায় মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে তার প্রতিষ্ঠিত ‘ফর এভার লিভিং সোসাইটি’।

যুগান্তরকে তাপস বলেন, ‘উন্নয়ন প্রশ্নে গত সাড়ে চার বছরে কিছুই পায়নি বরিশাল। স্বৈরতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থা চেপে বসে আছে এখানে। মানুষ এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চায়। আধুনিক বরিশালের রূপকার শওকত হোসেন হিরনের স্বপ্নের বরিশাল গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে চাই আমি।’

নির্বাচনে প্রার্থী দেবে চরমোনাইয় পিরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত দলের ৩ জনের নাম শোনা যাচ্ছে প্রার্থী হিসাবে। তারা হলেন বরিশাল জেলা সভাপতি পির সাহেবের ভাই আবুল খায়ের, প্রেসিডিয়াম সদস্য আশ্রাফ আলী আকন এবং কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ওবায়দুর রহমান মাহবুব। তাদের মধ্যে আবুল খায়েরের সম্ভাবনাই বেশি।

দলের কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া উপকমিটির সহকারী সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম কবির বলেন, ‘বরিশাল সিটির আসন্ন নির্বাচনকে সিরিয়াসভাবে নিয়েছে দল। পির সাহেবের নিজের এলাকা হিসাবে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামব আমরা।’

এদিকে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে নির্বাচনে বাসদ নেতা মনীষা চক্রবর্তীর অংশগ্রহণ। যুগান্তরকে মনীষা বলেন, ‘আমার দল নির্বাচনে অংশ নেবে কি না নিশ্চিত নয়। কেননা বাসদ মনে করে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তারপরও এখনই আমরা এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলছি না। সময়মতো সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম