Logo
Logo
×

শেষ পাতা

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে বেচাকেনা কমল ২০ শতাংশ

দাম কমার লক্ষণ নেই ভোগ্যপণ্যের * ফের বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম

Icon

আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে বেচাকেনা কমল ২০ শতাংশ

দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে দাম কমার লক্ষণ নেই। বেশির ভাগ পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে হাতেগোনা কয়েকটি ভোগ্যপণ্যের দাম সামান্য কমলেও রমজানের আগে যে হারে বেড়েছিল সে হারে কমছে না। আর দাম বাড়ার কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায়

এ বছর গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেচাকেনা কমেছে বলে জানান খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। স্বাভাবিক দামের চেয়ে এখনো অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্য। পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব নেই বললেই চলে। খুচরায় আগের মতোই রয়েছে ভোগ্যপণ্যের উত্তাপ।

এদিকে রমজানের শুরুতে কয়েকদিন নিম্নমুখী থাকার পর আবার বাড়তে শুরু করেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। দুই দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামে কাঁচাবাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ২২০ টাকা থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে মাছ ও ডিমের দামও।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে। মানুষের আয়ের সিংহভাগ খরচ হচ্ছে নিত্যপণ্য কিনতেই। মানুষ এখন ভোগ্যপণ্য ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে। ফলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে অন্যান্য বছরের মতো পণ্যের চাহিদা নেই। অন্যান্য বছর রমজান মাসে বান্দরবান, কক্সবাজার জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় ট্রাকে-ট্রাক ভোগ্যপণ্যের চাহিদা ছিল। কিন্তু এ বছর এ চাহিদায় ভাটা পড়েছে। রমজান মাস ঘিরে দেশের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ব্যবসা চাঙ্গা থাকার কথা থাকলেও এবার ধস নেমেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেচাকেনা কমেছে।

খাতুনগঞ্জে ৪ হাজারের উপরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গুদাম রয়েছে। বরাবরের মতো এসব গুদামে এবারো চিনি, ভোজ্যতেল, আটা-ময়দা, ডাল, ছোলা, চাল, মসলাসহ সব ধরনের পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। কিছু পণ্যের দাম সামান্য কমতির দিকে থাকলেও সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ক্রেতা সংকটে কমেছে খাতুনগঞ্জের বেচাকেনা।

অন্যান্য বছর রোজায় ছুটির দিন শুক্রবারও জমজমাট থাকত চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বাজার। এবছর দৃশ্যপট পালটে গেছে। আগের মতো নেই বেচা-বিক্রি। এবার আগের মতো ব্যস্ততা চোখে পড়েনি। খাতুনগঞ্জের সড়কে নেই গাড়ির দীর্ঘ সারি। আগে শ্রমিকরা বড় বড় ট্রাকে পণ্য লোড-আনলোডে ব্যস্ত থাকত। এবার শ্রমিকরা কিছু ঠেলাগাড়ি, রিকশাভ্যান ও ছোট পিকআপে পণ্য লোড-আনলোড করছেন। তাও হাতেগোনা।

গতবছর রোজায় খাতুনগঞ্জে প্রতি লিটার তেল ১৭০ টাকা, প্রতি কেজি ছোলা ৮০ টাকা ও প্রতি কেজি চিনি ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর রোজায় খাতুনগঞ্জে প্রতি লিটার তেল ১৯০ টাকার বেশি, ছোলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা ও চিনি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ বিভিন্ন পণ্যের দামে পরিবর্তন আসেনি। তবে ছোলার দাম কেজিতে কিছুটা কমেছে। পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪০ টাকা থেকে ৪২ টাকা, দেশি রসুন কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা, আমদানি করা রসুন কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, দেশি আদা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, ছোলা ৯০ টাকা, মসুর ডাল (ছোট) ১৪০ টাকা, বড় মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, পোলাও চাল (খোলা) প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা আর প্যাকেটজাত ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কিছুটা কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে মনপ্রতি ১শ টাকা কমে সয়াবিন তেল ৬ হাজার ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া মনপ্রতি ১৫০ টাকা কমে পামতেল ৪ হাজার ৮৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সুপার সয়াবিন মনপ্রতি আগের ৫ হাজার ১২০ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খুচরা তেল ১৯০ থেকে ১৯২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল খুচরায় ১৮৬ টাকা ও পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৯শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি পলিব্যাগ লিটারপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। চিনির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি মন চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫০ টাকায়। চারদিন আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা এবং সোনালি মুরগির দাম ছিল ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা।

সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ডিম ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাতুনগঞ্জের নিউ থ্রি স্টার ট্রেডিংয়ের মালিক মহিউদ্দিন সবুজ যুগান্তরকে জানান, ‘বেশির ভাগ পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। আর কিছু পণ্যের দাম কমছে না। বাজারে এখন আগের মতো বেচাকেনা নেই। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আগের মতো পণ্য কিনতে ব্যবসায়ীরা আসছেন না। ফলে চাহিদাও কিছুটা কম।’

বাজারদর : মাছ ও মাংসের দাম বাড়ায় সবজির চাহিদা বেড়েছে। ফলে সবজির দামও কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায় প্রতি কেজি। মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০-৫০ টাকা, চালকুমড়া পিস ৫০-৬০ টাকা। লাউ আকারভেদে ৬০-৭০ টাকা। লম্বা ও গোল বেগুনের কেজি ৬০-৮০ টাকা। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৫০ টাকায়। শিম ৫০-৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৮০-১০০ টাকা, পটল ৮০, করলা ৭০-৯০ টাকা ও আলু ২৭-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বরবটি ৮০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫৫-৭০ টাকা, ঝিঙ্গা ৭০-১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

স্বস্তি নেই মাছের বাজারে : বড় রুই প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা, মাঝারি রুই ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাতল মাছ কেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঙাশ কেজি ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় আকারের শিং মাছ ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, আইড় মাছ ৬৫০ টাকা, কই মাছ কেজি ২৬০ টাকা, পাবদা ৪৫০ টাকা, মাঝারি আকারের চিংড়ি কেজি ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম