Logo
Logo
×

শেষ পাতা

স্বাগতম মাহে রমজান

ইসলামের অন্যতম ভিত্তি রমজানের সিয়াম

Icon

মাওলানা মুহাম্মাদ সালমান শফী

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলামের অন্যতম ভিত্তি রমজানের সিয়াম

মহানবি (সা.) মাহে রমজানের সিয়াম পালনকে ইসলামের অন্যতম বুনিয়াদ বলে সাব্যস্ত করেছেন।

বুখারি ও মুসলিম শরিফে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, মহানবি (সা.) ইরশাদ করেন, ইসলাম পাঁচটি বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত এ মর্মে সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লহর রাসুল, সালাত আদায় করা, জাকাত দেওয়া, হজ করা ও রমজানের সিয়াম পালন করা।

বুখারি ও মুসলিমসহ হাদিসের প্রায় সব প্রসিদ্ধ গ্রন্থে একটি হাদিস সংকলিত হয়েছে, যা হাদিসে জিবরাইল নামে পরিচিত। মহানবি (সা.)-এর জীবনের শেষ ভাগে একদিন হজরত জিবরাইল (আ.) এসে ইসলামের মৌলিক কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্ন করেন এবং আল্লাহর রাসুল তার জবাব দেন। এ জন্য হাদিসটির এমন নাম দেওয়া হয়েছে। সেখানে ইসলাম কাকে বলে-এ প্রশ্নের জবাবে নবি করিম (সা.) বলেছিলেন, তুমি এ মর্মে সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই ও মুহাম্মদ (সা.) তার বান্দা ও রাসুল, নামাজ আদায় করবে, জাকাত দেবে, রমজানের রোজা রাখবে এবং বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য থাকলে হজ করবে। পাঁচ বিষয়কে ইসলামের ভিত্তি হিসাবে কেন সাব্যস্ত করা হলো, তার ব্যাখ্যায় রয়েছে অনেক অভিমত। প্রথমত, মহান রাব্বুল আলামিনের প্রতি দাসত্বের পাশাপাশি অনুরাগ ও প্রেমের প্রমাণ দিতে এ কটি বিষয়ের ভূমিকা অনন্য। কালেমায়ে শাহাদাত পাঠের মাধ্যমে আদম সন্তানেরা মহান স্রষ্টার প্রতি নিজের দাসত্ব ও আনুগত্যের অঙ্গীকার ঘোষণা করে। আল্লাহতায়ালার বিধান ও মহানবি (সা.)-এর আদর্শ মেনে নেওয়ার ও অনুসরণ করার শপথ নেওয়াই কালেমায়ে তৈয়্যেবা ও কালেমায়ে শাহাদাতের মূল তাৎপর্য। সালাতে প্রকাশ্যভাবে, জাকাতে আর্থিকভাবে ও সিয়ামে সংযম পালনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর প্রতি দাসত্বের প্রমাণ দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, স্রষ্টার প্রতি আনুগত্যের প্রধান বাধা অহঙ্কার দমন হয় সিয়াম পালনের মাধ্যমে।

তৃতীয়ত, আল্লাহর নির্দেশ পালনে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয় সিয়ামের মধ্য দিয়ে। চতুর্থত, একজন মুসলমানের ওপর যেমন কিছু করণীয় তেমনি কিছু বর্জনীয় কর্তব্য আরোপিত হয়। বর্জনীয় কর্তব্যগুলোর প্রথমেই আসে নির্দিষ্ট সময়সীমায় পানাহার বর্জনের বিষয়, যা সিয়াম নামে অভিহিত।

পঞ্চমত, মুসলমানদের পারস্পরিক সমবেদনা ও সহানুভূতির চেতনা জাগ্রত হয় সিয়ামের কারণে। হজরত আদম ও হাওয়া (আ.)-এর সন্তান হিসাবে বিশ্বের সমগ্র মানবগোষ্ঠী যে একই পরিবারের সদস্য, তার দাবি অন্যদের কষ্ট ও দুর্দশা অনুভব করা। সিয়ামের কারণে সেই অনুভূতি আসে। তাই সিয়াম আদায়ের ফলে মুমিন বান্দাদের মধ্যে যেমন তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি হয়, তেমনি মানবসমাজে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ সৃষ্টিতে এ ইবাদতের প্রভাব সুদূরপ্রসারী।

অতএব, এ পবিত্র মাসে সিয়াম পালন অপরিহার্য হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ কিংবা প্রশ্নের অবকাশ নেই। এটি ইসলামের অকাট্য প্রমাণিত বিষয়গুলোর অন্তর্গত। আর ইমানদার হিসাবে পরিগণিত হওয়ার জন্য শর্ত হলো ইসলামের অকাট্য বিষয়গুলো নির্দ্বিধায় মেনে নেওয়া। এসব বিষয়ে প্রশ্ন তোলার অর্থ ইসলামের সীমা থেকে বাইরে চলে যাওয়া। এমনকি বেশিরভাগ মেনে নিয়েও এক বা একাধিক বিষয়ে প্রশ্ন তোলাও ইমানের খেলাপ। সালাত, সিয়াম, জাকাত প্রভৃতি ইবাদত সন্দেহাতীতভাবে ফরজ। শুধু তা-ই নয়, এগুলো আদায়ের যে পদ্ধতি ও নিয়ম আল্লাহর রাসুল নির্দেশ করে গেছেন, ঠিক সেভাবেই করতে হবে। কেননা এসব নিয়মও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। অসংখ্য সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর রাসুলের উক্তি, আচরণ ও অনুমোদনের ভিত্তিতে এসব নিয়ম বর্ণনা করেছেন। সুতরাং আভিধানিক অর্থ কিংবা অন্য কোনো যুক্তির দোহাই দিয়ে এ নিয়মের ব্যতিক্রম করা যাবে না। বিদায় হজে মহানবি (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের কাছে যা রেখে যাচ্ছি, তোমরা যতদিন তা মজবুত করে ধরে রাখবে, ততদিন তোমরা বিচ্যুত হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ।

লেখক : ইমাম, দারোগা আমীর উদ্দিন ঘাট মসজিদ, বাবুবাজার, ঢাকা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম