অগ্নিঝরা মার্চ
ঢাকায় ২৫ মার্চের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করলেন ইয়াহিয়া
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অগ্নিঝরা মার্চের ২২তম দিন আজ। ১৯৭১ সালের ২২ মার্চ ছিল সোমবার। এদিন সকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের উভয় অংশের নেতাদের মধ্যে আলোচনাক্রমে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পরিবেশ সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ২৫ মার্চের অধিবেশন স্থগিত রাখা হয়েছে।
এ ঘোষণার আগে সকালে রমনার প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো বৈঠকে মিলিত হন। এটা ছিল ইয়াহিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ষষ্ঠ দফা বৈঠক। এই বৈঠকটি প্রায় ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল। ধানমন্ডি নিজ বাসভবনে ফিরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আন্দোলনে আছি এবং লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
দুপুরে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে কড়া সামরিক প্রহরায় হোটেলে ফিরে ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এই বৈঠক শেষে ভুট্টোর নেতৃত্বে পিপলস পার্টির নেতারা সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। রাতে সেখান থেকে ফিরে ভুট্টো হোটেল লাউঞ্জে এক অনির্ধারিত সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগপ্রধান বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তবে ওই ঐকমত্য অবশ্যই পিপলস পার্টির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পিপলস পার্টির অনুমোদন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত পশ্চিম পাকিস্তানিরা মেনে নিতে পারে না।
একাত্তরের আজকের দিনে সারা বাংলায় টানা ২২ দিনের মতো চলছিল অসহযোগ আন্দোলন। জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে জড়ো হয়। সমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকবার বক্তৃতা করেন। সংগ্রামী জনতার গগণবিদারী ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনি ও করতালির মধ্যে জনগণের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন-বন্দুক, কামান, মেশিনগান কিছুই জনগণের স্বাধীনতা রোধ করতে পারবে না। এদিন (২২ মার্চ) বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে শিশু-কিশোরদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে শিশু-কিশোররা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। আর পল্টন ময়দানে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকরা এক সমাবেশ এবং কুচকাওয়াজের আয়োজন করেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে উঠেছে তাতে সাবেক সৈনিকরা আর সাবেক হিসাবে বসে থাকতে পারে না। আমাদের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের মূল্যবান সম্পদ। আমরা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পালনে প্রস্তুত আছি।