Logo
Logo
×

শেষ পাতা

তৃণমূলের সঙ্গে দশ দিনব্যাপী মতবিনিময়

এক দফা আন্দোলনের বার্তা বিএনপির

কারও প্ররোচনায় ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না, ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ওপর জোর * সব বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ ঢাকাকে আরও সক্রিয় করার পরামর্শ

Icon

তারিকুল ইসলাম

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এক দফা আন্দোলনের বার্তা বিএনপির

মাঠপর্যায়ের প্রায় আড়াই হাজার সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিকে ঢাকায় এনে দশ দিন ধরে মতবিনিময় সভা করেছে বিএনপি। এ সভা থেকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে তৃণমূলকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এতে বর্তমান সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়টি আবারও পরিষ্কার করে জানানো হয়। তৃণমূল নেতারা এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। একই সঙ্গে নির্বাচনকে সামনে রেখে কারও প্ররোচনায় ফাঁদে পা না দেওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক থাকার বিষয়ে মত দেন জনপ্রতিনিধিরা।

চূড়ান্ত কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার আগে বিভিন্ন জেলা ও ইউনিটে দ্বন্দ্ব নিরসন করে ঐক্যবদ্ধ হওয়া, সব বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, ঢাকাকে আরও সক্রিয় করাসহ বেশ কিছু পরামর্শ দেন জনপ্রতিনিধিরা। তাদের প্রস্তাব সংক্ষিপ্ত আকারে রোববার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের কাছে দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে সোমবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

জানা গেছে, জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তাবগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বিএনপি। দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাদের সঙ্গে গ্রামের একেবারে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক রয়েছে। তারা যদি মাঠপর্যায়ের আন্দোলন-কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন, তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এর একটা প্রভাব পড়বে। এটি করা গেলে সাধারণ মানুষ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে সাহস পাবে। এছাড়া সরকার পতনের লক্ষ্যে ঘোষিত ১০ দফা দাবি এবং রাষ্ট্র সংস্কারের ২৭ দফার বিষয়ে মাঠপর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের একটি পরিষ্কার ধারণা দেওয়াও এ মতবিনিময় আয়োজনের লক্ষ্য ছিল।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা তৃণমূল নেতাদের আগামী আন্দোলনে আরও বেশি সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে উৎসাহ দিচ্ছি। তাদের কথা শুনে আমরাও উৎসাহবোধ করছি। কারণ অংশগ্রহণকারী সবাই এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যোগ না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে জনসাধারণকে ধীরে ধীরে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন আরও জোরদার করার পরামর্শও দিয়েছেন।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘সভায় প্রায় সবাই বলেছেন এই সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা হবে আত্মঘাতী ও একটি ভুল সিদ্ধান্ত। যে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য তৃণমূল পর্যন্ত তারা মানসিকভাবে এবং দলীয়ভাবে প্রস্তুত রয়েছেন।’ দশটি মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত এ সভাগুলোতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের একটি বার্তাই দেওয়া হয়েছে। সেটি হলো এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। তা না হলে দলের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে, দেশের মানুষেরও সংকট বাড়বে। এজন্য এক দফা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ বার্তার সঙ্গে সবাই একমত হয়েছেন। তবে তাদের বেশিরভাগই রাজধানী ঢাকায় আন্দোলন কীভাবে সফল করা যায়, সে কৌশল ঠিক করতে শীর্ষ নেতৃত্বকে পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া আন্দোলনের স্বার্থে বিভিন্ন সময়ে নানা কর্মকাণ্ডের জন্য দল থেকে যারা বহিষ্কার হয়েছেন, তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধও করেন জনপ্রতিনিধিরা।

সূত্রমতে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরকারবিরোধী একটি বৃহত্তর আন্দোলন গড়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠপর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে এ মতবিনিময় করেন। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলেন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রতিটি সভায় দলটির সিনিয়র নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। দশ দিনের রুদ্ধদ্বার এ মতবিনিময় সভায় সাবেক-বর্তমান মিলে ২ হাজার ৩৬৭ জন চেয়ারম্যান অংশ নেন। এর মধ্যে ৩৫৭ জন বক্তব্য দেন। এ সময় সবার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়।

সব সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, সব জনপ্রতিনিধিই কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। কারণ যারা অংশ নিয়েছেন তাদের সবাই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সামনে তাদের পরিচয় তুলে ধরেছেন। আর এ সুযোগে তারা এক-দুই মিনিট কথাও বলেছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অনেকের নাম ধরেও বক্তব্য দিতে বলেন। এতে করে অনেকে আবেগে আপ্লুত হয়েও পড়েন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এখন থেকে তৃণমূল পর্যায়ে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। এসব জনপ্রতিনিধির নাম ও মোবাইল নম্বর তার কাছে রয়েছে। যা আন্দোলন সফলে কাজে লাগবে।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। সবাই এক বাক্যে সরকার পতনের লক্ষ্যে এক দফা আন্দোলনের কথা বলেছেন। সেখানে তারা যার যার অবস্থান থেকে অংশ নিতে ঐকমত্যও হয়েছেন। তারা আন্দোলন সংগ্রামের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। তারা বিশ্বাস করেন তার নেতৃত্বের মধ্য দিয়েই এ দেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘৪২ জন সাবেক ছাত্রনেতা দশ সাংগঠনিক বিভাগের সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের নামের তথ্য ও তাদের সরাসরি দাওয়াত দেওয়াসহ সব সহযোগিতা করেছেন। ইতোমধ্যে জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া প্রস্তাব সংক্ষিপ্ত আকারে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে দেওয়া হয়েছে।’

সভায় অনেকে দলের স্থানীয় নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক বিষয়ে ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশও করেন। থানা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন। অবশ্য বিএনপির নেতারা মনে করেন, মতবিনিময় সভায় মাঠপর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে অভিযোগ, ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করলেও এটি দলের কাজে লাগবে। কারণ এর মধ্য দিয়ে মাঠের একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। এখন সাংগঠনিক দুর্বলতা বা ক্ষোভ-অসন্তোষ দূর করার সুযোগ মিলল। এ বিষয়ে শীর্ষ নেতৃত্ব উদ্যোগী হলে আন্দোলন-কর্মসূচিতে এর সুফল মিলবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম