অগ্নিঝরা মার্চ
অসহযোগে স্থবির সমগ্র প্রশাসন

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অগ্নিঝরা মার্চের নবম দিন আজ। ১৯৭১ সালের ৯ মার্চ ছিল মঙ্গলবার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে এদিন সর্বাত্মক অসহযোগে স্থবির হয়ে পড়ে সমগ্র প্রশাসন।
স্বাধিকার আন্দোলনের কর্মসূচি অনুযায়ী সচিবালয়, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস, হাইকোর্ট, জেলা কোর্টসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে হরতাল পালিত হয়।
বঙ্গবন্ধু যেসব সরকারি অফিস খুলে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন, শুধু সেসব অফিস চালু থাকে। মিছিল-সমাবেশে উত্তাল ছিল সারা দেশ। ফুঁসে ওঠা মুক্তিকামী বাঙালি তার সব শক্তি দিয়ে এবার নিতে চাইছে স্বাধীনতার স্বাদ।
১৯৭১ সালে মার্চের দিনগুলো যত এগিয়ে যাচ্ছে, ততই বেগবান হয় অসহযোগ আন্দোলন। প্রতিদিনই কিছু না কিছু নতুন সংযুক্তি আন্দোলনে আরও প্রাণের সঞ্চার করে। এদিন আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ন্যাপপ্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মধ্যে সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বিকালে পল্টন ময়দানের জনসভায় তুমুল করতালির মধ্যে ভাসানী বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকেও তাই বলি অনেক হয়েছে আর নয়। তিক্ততা বাড়াইয়া আর লাভ নাই। লা কুম দিনুকুম ওয়ালইয়া দিন।’ অর্থাৎ ‘তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার-এ নিয়মে পূর্ববাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করিয়া লও।’ তিনি আরও বলেন, ‘শেখ মুজিবের সঙ্গে মিলে ১৯৫২ সালের মতো তুমুল আন্দোলন শুরু করব। খামাখা কেউ মুজিবুরকে অবিশ্বাস করো না। তাকে আমি ভালোভাবে চিনি।’
সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ২মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগ ও ডাকসুর নেতৃত্বে গঠিত স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ছাত্রসভায় গৃহীত ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন হয়। এই সভায় আরেকটি প্রস্তাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বাংলাদেশে জাতীয় সরকার’ গঠনের জন্য অনুরোধ করা হয়।
পিআইএ’র বাঙালি কর্মচারীরা তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মিছিল করে ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এলে তিনি তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সামরিক কর্তৃপক্ষ রাত ৯টা থেকে রাজশাহী শহরে ৮ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করে। রাজশাহীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিদিন রাত্রিকালীন কারফিউ জারির পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, সেনাবাহিনীকে ছাউনিতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণার পর রাজশাহীতে হঠাৎ সান্ধ্য আইন জারির কারণ বোধগম্য নয়। বিবৃতিতে অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। মার্শাল ল’ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সংশ্লিষ্ট সামরিক বিধি পরিবর্তন করে সামরিক শাসন পরিচালক পদে লে. জে. টিক্কা খানের নিয়োগ দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, ৬ মার্চ টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
ঢাকা থেকে বিদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নিতে নিজ নিজ দেশ থেকে বিমানের ঢাকায় অবতরণ শুরু হয়। জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট প্রয়োজনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে জাতিসংঘের স্টাফ ও তাদের পরিবারকে প্রত্যাহারের জন্য ঢাকায় জাতিসংঘের উপ-আবাসিক প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেন। জাপানের পররাষ্ট্র দপ্তর পূর্ববঙ্গে অবস্থিত তার দেশের নাগরিকদেরও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। তৎকালীন পশ্চিম জার্মান সরকার তার দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সামরিক বিমান পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।