বিদ্যুৎ আমদানি
আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি বাতিল চায় বাপা ও বেন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন)। শুক্রবার বাপা সভাপতি সুলতানা কামাল এবং বেনের বৈশ্বিক সমন্বয়কারী ড. মো. খালেকুজ্জামান স্বাক্ষরিত প্রেস বিবৃতিতে এ দাবি করা হয়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় অর্ধেক যেখানে অলস থেকে যাচ্ছে, সেখানে বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে বিদ্যুৎ আমদানি মোটেও যৌক্তিক নয়। তদুপরি, আদানি কোম্পানির কাছ থেকে যেসব শর্তে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ কিনতে যাচ্ছে তা দেশের জন্য খুবই প্রতিকূল। উদ্বেগের বিষয়, বাংলাদেশ বর্তমানে যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুসরণ করছে তাতে আমদানির পরিমাণ ভবিষ্যতে ক্রমাগতভাবে বাড়বে। আদানি কোম্পানির সঙ্গে বর্তমান অভিজ্ঞতা এই পরিকল্পনার অপরিণামদর্শী প্রমাণ করেছে। বাপা ও বেন আমদানিকৃত বিদ্যুতের ওপর নির্ভরতা পরিহার করার দাবি জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতের ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় নির্মিত আদানি গ্রুপের ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এ বছরের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ কিনবে। যেসব শর্তে এই বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে তা বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রতিকূল। এসব শর্তের অধীনে আদানি কোম্পানিকে যেসব আর্থিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা বাংলাদেশের অন্য কোম্পানিকে দেওয়া হয়নি।
সংবাদ মাধ্যমে চুক্তির বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী দিকের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে তার কয়েকটি নিুরূপ-প্রথমত. যেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ইউনিটপ্রতি কয়লা ব্যবহারের পরিমাণ উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহারের সব মাত্রার জন্য একই ধরা হয়েছে, সেখানে আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য উৎপাদন ক্ষমতা কম ব্যবহৃত হলে ইউনিট প্রতি কয়লা ব্যবহারের পরিমাণ বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। শুধু এ কারণেই বাংলাদেশকে বছরে অতিরিক্ত ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করতে হতে পারে।
দ্বিতীয়ত. বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) চার মাস পরপর আদানি কোম্পানির কাছে বিদ্যুতের চাহিদাপত্র পাঠাতে হবে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে যদি কম বিদ্যুৎ কেনে, তবুও চাহিদাপত্রে উল্লিখিত পরিমাণের পুরো দাম বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হবে। তৃতীয়ত. বাংলাদেশকে আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত ক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণের বিদ্যুৎ কিনতেই হবে, নইলে জরিমানা দিতে হবে। চতুর্থত. যদি পিডিবির চাহিদা-স্বল্পতার কারণে আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়া বিলম্বিত হয়, তবে বাংলাদেশকে পুরো ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে। পঞ্চমত. আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা ব্যবহারে সিস্টেম লসের দায়ভার বাংলাদেশকে বহন করতে হবে। ষষ্ঠত. আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে যে কয়লা আমদানি করা হবে তার দাম নির্ভর করবে আদানির ওপর। কারণ এই কোম্পানি বিদেশে কয়লা খনিতে উত্তোলন থেকে শুরু করে পরিবহণ, সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। সপ্তমত. আদানির সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ২০১৭ সালের নভেম্বরে। কিন্তু ভারত সরকার ২০১৯ সালে ঝাড়খন্ডে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বলে ঘোষণা করায় আদানি কোম্পানি বহু ধরনের কর সুবিধা পাচ্ছে। অথচ আদানি কোম্পানি এ বিষয়ে কোনো তথ্য পিডিবিকে জানায়নি এবং বাংলাদেশকে এসব কর সুবিধার অংশীদার করায় প্রয়াসী নয়। অষ্টমত. এ প্রকল্পের সব ঝুঁকি বাংলাদেশের ওপর চাপানো হয়েছে এবং বহু বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। এ প্রসঙ্গে বাপা ও বেন আরও লক্ষ করে যে, সরকার জাপান প্রণীত এমন একটি বিদ্যুৎ পরিকল্পনা অনুসরণ করছে যা শুধু কয়লানির্ভর নয়, বিদেশনির্ভরও বটে! এই পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ সরবরাহে আমদানিকৃত বিদ্যুতের অংশ ২০২১ সালের ৫ শতাংশ থেকে ২০৫০ সনে ১৫ শতাংশে বৃদ্ধি পাবে।
আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশের ভোক্তা সমিতি ‘এই চুক্তির জালিয়াতি সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে’ বলে অভিমত প্রকাশ করেছে। তাই বাপা ও বেন চুক্তি বাতিলের দাবিকে সমর্থন করছে।