আলোকিত দেশ গড়ার শপথ নবীনদের
সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালির সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক যে লড়াই একাত্তরে এনে দিয়েছিল বিজয়, সেই পথ ধরে একুশ শতকের নবীনদল প্রস্তুত দেশ গঠনের কাজে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের দামে বাংলাদেশ বায়ান্ন বছর আগে সে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সেই দেশের সম্মান যেন ভূলুণ্ঠিত না হয় কোনো কারণে, সেদিকেও তীক্ষ্ণ নজর রাখবে তারা।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের শিক্ষা কর্মসূচির অধীনে ২১তম ‘মুক্তির উৎসব’-এ যোগ দিয়ে শুক্রবার তারা এ শপথ নিয়েছে।
এদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজনে দেশের কথা, কবিতা ও গানে তারা দেশ গড়ার শপথ নেয়। ছায়ানটের শিল্পীদের সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্যরা। পরে দেশের গান এবং ওই গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
গান, নৃত্যের মাঝে শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করান বীর প্রতীক মেজর জেনারেল (অব.) জামিল ডি আহসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, ট্রাস্টি সারা যাকের ও প্রবীণ সংগীতশিল্পী ডালিয়া নওশীন। শিক্ষার্থীরা একযোগে শপথ নেয়, ‘বঙ্গবন্ধুর মহিমান্বিত নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র। এই দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাতা হিসাবে আমরা তাই অঙ্গীকার করি, সবার জন্য সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে যোগ্য ভূমিকা পালন করব।’
তারা সম্মিলিত কণ্ঠে শপথ নেয়, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হব, বৈষম্য দূর করতে সচেষ্ট থাকব এবং মাদক থেকে তরুণ সমাজকে দূরে রাখব। আমরা বিজ্ঞানমনস্ক আলোকিত দেশ ও সমাজ গড়ার কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখব।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণেও শপথবাক্য ধ্বনিত হয় তাদের কণ্ঠে। তারা বলে, আমরা একুশ শতকের বাংলাদেশের নবীন-নবীনাদল, মুক্তির উৎসবে মিলিত হয়ে শপথ গ্রহণ করছি, মুক্ত-স্বাধীন স্বদেশের জন্য যারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তাদের আমরা কখনো ভুলব না। আমরা মুক্তিযুদ্ধকে জানব, আগামী দিনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহমান রাখতে সদা কাজ করব।
শুক্রবার সকাল ৯টায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে বেলা ১১টার দিকে উৎসব মঞ্চে আসেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক, সঙ্গে আসেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি আসাদুজ্জামান নূর ও মফিদুল হক।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলি, সেই চেতনার ভিত্তিতে এ দেশটি হবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এ দেশে প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। আমরা বলি, এ রাষ্ট্র হবে অসাম্প্রদায়িক, যেখানে সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করবে। আসাদুজ্জামান নূর তরুণদের উদ্দেশে পাঠ করেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’ কবিতাটি।
উৎসব মঞ্চে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী বলেন, সমাজে ধর্ম, বিত্ত ভেদে বিভক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে, লিঙ্গভেদে সুস্থ সম্পর্ক নষ্ট মানসিকতার কবলে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে সমাজে সম্প্রীতির পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, আবিদা রহমান সেতু, সন্দীপন ও রিয়াদ হাসান। শুক্লা সরকারের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে ধ্রুপদ কলাকেন্দ্র।
এদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্বে ভাসানটেক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট, আব্দুল্লাহ মেমোরিয়াল হাই স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বধ্যভূমির সন্তানদল, ইউসেপ বাংলাদেশের শিল্পীরা অংশ নেন। অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল র্যাফেল ড্র, সেই র্যাফেল ড্রতে ১০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছিল নানা পুরস্কার।