Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ভ্যাট ফেরত নিয়ে জটিলতা

কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন

রিফান্ড বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি আরব ও জার্মান সরকার

Icon

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আইনি জটিলতায় দুই দেশের সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। ঢাকায় অবস্থিত সৌদি ও জার্মান দূতাবাসে কর্মরত কূটনীতিকদের স্থানীয় কেনাকাটায় ভ্যাট ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশ দুটি সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি কূটনীতিকদের কেনাকাটায়ও শুল্ক-কর ফেরত দিচ্ছে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

কূটনীতিকদের আচরণগত বিষয়ে ও সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৬১ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় একটি চুক্তি হয়, যা ‘ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশনস-১৯৬১’ নামে পরিচিত।

এ চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল কূটনীতিকদের বিষয়ে কিছু নিয়মনীতি প্রণয়ন করা এবং সেগুলো অনুসরণের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়ন নিশ্চিত করা। সেসময় স্বাধীন দেশগুলো চুক্তিতে সই করে।

বাংলাদেশ ১৯৭৮ সালে চুক্তিতে সই করে। ভিয়েনা চুক্তি অনুযায়ী, একজন কূটনীতিক স্বাগতিক দেশে কিছু বিষয় ছাড়া সব ধরনের কেনাকাটায় শুল্ক-কর ফেরত পাবেন এবং সেই অনুযায়ী স্বাগতিক দেশকে আইন-বিধি প্রণয়ন করতে হবে।

সূত্র জানায়, সৌদি সরকার ২০২০ সালের জুলাই থেকে সব ধরনের ভোগ্যপণ্য ও সেবার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রচলন করেছে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ক্রয়ের বিপরীতে ভ্যাট আদায় করছে।

সৌদি সরকার বাংলাদেশের রিয়াদ দূতাবাস ও দূতাবাসে কর্মরত কূটনীতিকদের ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে সব ধরনের ক্রয়ের ওপর আদায়কৃত ভ্যাট ফেরত দিত। কিন্তু গত ৬ মাসে ভ্যাট ফেরতের আবেদন করা হলেও সৌদি সরকার ভ্যাট ফেরত দেয়নি।

এর কারণ বাংলাদেশে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসকে অনুরূপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। তাই পারস্পরিক সুবিধা প্রদানের নীতি অনুযায়ী সৌদি সরকারও বাংলাদেশ দূতাবাসকে ভ্যাট ফেরত দেবে না। 

৬ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআর-এ পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রিয়াদ দূতাবাস ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ৫৮ লাখ টাকা (এক রিয়েল ২৯ টাকা হিসাবে) ভ্যাট পেয়ে থাকে।

পাশাপাশি রিয়াদে বাংলাদেশের নিজস্ব দূতাবাস নির্মাণে নির্মাণসামগ্রী ক্রয় ও নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে ভ্যাট প্রত্যর্পণ সুবিধা পেয়েছে। বর্তমানে রাষ্ট্রদূতের সরকারি বাসভবন নির্মাণে একটি প্রকল্প চলমান আছে।

এই প্রকল্পে ভ্যাট আদায় করা হলে বাংলাদেশকে ৬০ লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে। এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এনবিআরকে আরেকটি চিঠি দিয়ে জার্মানিতে ভ্যাট ফেরত না পাওয়ার বিষয়টি জানায়।

ওই চিঠিতেও বলা হয়, বাংলাদেশের জার্মান দূতাবাসের কূটনীতিকদের প্রত্যর্পণ সুবিধা না দেওয়ায় জার্মান সরকার সে দেশের বাংলাদেশের প্রত্যর্পণ সুবিধা বাতিল করেছে।

জার্মান কূটনীতিকরা ২০১৬ সালের পর থেকে আবেদন করেও প্রত্যপর্ণ সুবিধা পাচ্ছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে জার্মানিতে বাংলাদেশি দূতাবাস ও কূটনীতিকদের কেনাকাটায় প্রত্যপর্ণ সুবিধা বাতিল করে দেয় জার্মান সরকার। 

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে ক্ষেত্রবিশেষে ভ্যাটের হার কম হলেও জার্মানিতে অনেক বেশি। শুধু অবকাঠামো খাতে জার্মান সরকারকে ভ্যাট দিতে হয় ১৯ শতাংশ।

বর্তমানে জার্মানির বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি অবকাঠামোর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ ইউরো ব্যয়ে রাষ্ট্রদূতের ভবন নির্মাণ হচ্ছে বার্লিনে।

জার্মান সরকার কূটনীতিকদের রেয়াতি সুবিধা বাতিল করার কারণে এই ভবন নির্মাণে সরকারকে প্রায় ৩০ লাখ ইউরো (৩৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা) দিতে হবে।

বাংলাদেশে অবস্থানরত বিশেষ সুবিধাভোগী ব্যক্তি ও কূটনীতিকদের স্থানীয় কেনাকাটার বিপরীতে শুল্ক-কর, ভ্যাট ফেরত দেয় এনবিআর-এর শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তর (ডেডো)।

ডেডো সূত্রে জানা যায়, ইউনিসেফ, বিশ্বব্যাংক এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত সব বিদেশি দূতাবাস ও সংস্থাগুলো ভ্যাট রিফান্ড পাচ্ছে। কয়েকটি আবেদনের মাধ্যমে সৌদি আরব ও জার্মানির দূতাবাস থেকে কূটনীতিকদের ব্যক্তিগত কেনাকাটার বিপরীতে ভ্যাট ফেরত চেয়েছে।

আইনগত জটিলতায় সেগুলো ফেরত দেওয়া যায়নি। ২০২০ সালের এনবিআর-এর জারি করা প্রজ্ঞাপনে দূতাবাস ও সংস্থার সেবা গ্রহণ এবং কেনাকাটার ভ্যাট রিফান্ড দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও ব্যক্তিগত কেনাকাটায় রিফান্ড দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ নেই।

মূলত আইনি জটিলতার কারণে ব্যক্তিগত কেনাকাটায় এই সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ডেডোর মহাপরিচালক বেলাল হোসাইন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, বিশেষ সুবিধাভোগী সংস্থা বা দূতাবাসের ভ্যাট ফেরতের আবেদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলো নিষ্পত্তি করা হয়।

কিছু বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি আছে। যেমন দূতাবাসগুলো থেকে মাঝেমধ্যে ব্যক্তিগত কেনাকাটার বিপরীতে ভ্যাট রিফান্ড চাওয়া হয়। এনবিআরের আদেশ অনুযায়ী, ব্যক্তিগত কেনাকাটার ক্ষেত্রে রিফান্ড প্রযোজ্য নয়। 

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি দেশই নিজস্ব নিয়মে কূটনীতিকদের কেনাকাটার ক্ষেত্রে একেক নিয়ম অনুসরণ করে রিফান্ড দেয়। বাংলাদেশ সরকার পাশবুকের মাধ্যমে বিশেষ সুবিধাভোগী ব্যক্তি ও কূটনীতিকদের স্থানীয় কেনাকাটায় শুল্ক-কর, ভ্যাট ছাড় দেয়। পাশবুক ব্যবহারের মাধ্যমে মদ-বিয়ার, সিগারেটসহ সব ধরনের খাদ্যসামগ্রী কিনতে পারেন কূটনীতিকরা। এছাড়াও দূতাবাসের সব ধরনের আমদানি শুল্ক-কর ছাড় সুবিধা পেয়ে থাকেন। পুরো বিষয় উল্লেখ করে এনবিআর-এ প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম