আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে যেতে নির্দেশনা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস গভীর শ্রদ্ধা ও যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অমর একুশে নির্বিঘ্নে পালন ও শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদনে আয়োজকদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে, মহামারি করোনাভাইরাসের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবার শহিদ মিনারে যাবেন। এজন্য বাড়তি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহিদদের প্রতি দুই ভাগে শ্রদ্ধা জানানো হবে। প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও কূটনীতিকরা শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর শহিদ মিনার সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সাধারণ জনগণ পলাশী মোড় ও জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে এসে শহিদ মিনারে প্রবেশ করে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাবেন। অন্য কোনো পথে তারা শহিদ মিনারে প্রবেশের চেষ্টা করলে বাধার সম্মুখীন হবেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দোয়েল চত্বর ও চানখাঁরপুল দিয়ে বের হতে হবে।
রোববার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে সামগ্রিক আয়োজন ও নিরাপত্তা নিয়ে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক কথা বলেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপনে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দিবসটিতে জঙ্গি হামলার কোনো আশঙ্কা নেই। সামগ্রিক নিরাপত্তা রক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর একেএম গোলাম রাব্বানী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ডিএমপি কমিশনার গোলাম ফারুক আরও বলেন, শহিদ মিনারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগ ২০শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি ভোর ৪টা; দ্বিতীয় ভাগ একুশে ফেব্রুয়ারি ভোর ৪টা থেকে দুপুর ২টা; তৃতীয় ভাগ একুশে ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা। শহিদ মিনারে সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, পলাশী মোড় থেকে শুরু করে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত সমগ্র এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। পুলিশের কন্ট্রোল রুম থেকে পুরো এলাকা নজরদারিতে রাখা হবে। শহিদ মিনারে আসা মানুষকে আর্চওয়ে দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। কোনো ব্যাগ অথবা অন্য কোনো জিনিস নিয়ে শহিদ মিনারে প্রবেশ করা যাবে না। আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
দিবসটি সুশৃঙ্খলভাবে পালনের জন্য কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সোমবার বিকাল ৫টা থেকে মঙ্গলবার রাত ৭টা পর্যন্ত বেশকিছু রাস্তা বন্ধ ও ডাইভারশন দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো-শাহবাগ ক্রসিং, টিএসসি ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং, জিমনেশিয়াম মাঠ গেট, রোমানা ক্রসিং, জগন্নাথ হল ক্রসিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাস্কর্য ক্রসিং, নীলক্ষেত ক্রসিং, পলাশী ক্রসিং, বকশী বাজার ক্রসিং এবং চানখাঁরপুল ক্রসিং। উপরোল্লিখিত সময়ে সংশ্লিষ্ট এলাকা বা সড়ক পরিহার করে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করার জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ করেছে ডিএমপি। এ ছাড়া কিছু সড়কে প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। এগুলো হলো-বকশী বাজার-জগন্নাথ হল ক্রসিং সড়ক, চানখাঁরপুল-রোমানা চত্বর ক্রসিং সড়ক, টিএসসি-শিববাড়ী ক্রসিং সড়ক এবং উপাচার্য ভবন-ভাস্কর্য ক্রসিং সড়ক। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়াম মাঠ (ভিআইপি), মোকাররম ভবন মাঠ (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) এবং নীলক্ষেত ক্রসিং-পলাশী ক্রসিং (সর্বসাধারণ) নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে শহিদ মিনারে আসার আহ্বান : স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে সময় প্রতিটি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তি পর্যায়ে শহিদ মিনারের বেদিতে একজন করে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারতেন। এবার কোনো সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয়নি। তবে সুষ্ঠুভাবে দিবসটি উদযাপনের লক্ষ্যে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের অনুরোধ জানানো হচ্ছে। সংবাদ সম্মলেন উপাচার্য আখতারুজ্জামান আরও বলেন, ভাবগাম্ভীর্য ও মর্যাদার সঙ্গে অমর একুশে পালনের লক্ষ্যে শহিদ মিনার এলাকায় কোনো মিছিল বা সমাবেশ করা যাবে না। শহিদ মিনার এলাকায় ব্যানার, পোস্টার বা ছবি টাঙানো যাবে না। প্রবেশপথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউটস, রেঞ্জার ও স্বেচ্ছাসেবক বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। সংবাদ সম্মেলনে অমর একুশে উদযাপনে গঠিত কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, যুগ্ম-সমন্বয়কারী অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান ও অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা এবং বিভিন্ন উপকমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার পরিদর্শন করেন ঢাবি উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু আলপনার কাজ চলছে। সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, এ দিবসের প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।