Logo
Logo
×

শেষ পাতা

কক্সবাজারে হোটেলে মা-মেয়ের লাশ

বালতিতে পড়ে মেয়ের মৃত্যুতে স্ত্রীকে হত্যা!

Icon

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বালতিতে পড়ে মেয়ের মৃত্যুতে স্ত্রীকে হত্যা!

কক্সবাজার শহরের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনের আবাসিক হোটেল সি-আলিফের কক্ষে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় স্বামী জেবিন দেব চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন।

ছোট মেয়ে বালতিতে পড়ে মারা যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাগের মাথায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি-গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশকে এমন তথ্যই দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার ওসি আবদুর রহিম।

ওসি আরও জানান, কক্সবাজারে ঘটনার পর অভিযুক্তকে ধরতে খবর পাঠায় কক্সবাজার থানা পুলিশ। শুক্রবার রাতে নতুন ব্রিজ এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জেবিন দেব (৪০) চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের বাণীগ্রাম, বৈলগাঁওয়ের দুলাল দেবের ছেলে।

আটক জেবিন দেবের বরাত দিয়ে ওসি আবদুর রহিম জানান, তিন মেয়ে ও স্ত্রীসহ কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে স্ত্রী অসুস্থবোধ করলে সকালে বড় ও মেজো মেয়েকে নিয়ে নাস্তা করতে বের হন জেবিন। হোটেল কক্ষে ফিরে দেখতে পান বাথরুমে পানির বালতিতে ছোট মেয়ে পড়ে আছে। তাকে বালতি থেকে তুলে খাটে এনে দেখেন মেয়ে মারা গেছে। এতে রাগে-ক্ষোভে স্ত্রীকে থাপ্পড় মারলে স্ত্রী পড়ে যান। এরপর গলা টিপে ধরলে এক সময় নিস্তেজ হয়ে যায় স্ত্রী সুমা দেব।

কিন্তু জেবিনকে গ্রেফতারের বিষয়ে শনিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে কক্সবাজার সদর থানা পুলিশ। সেখানে লিখিত বক্তব্যে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, পারিবারিক কলহে স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে কক্সবাজারে এনে হোটেল কক্ষে পরিকল্পিতভাবে খুন করে জেবিন দেব।

তিনি উল্লেখ করেন, জেবিন দেবের সঙ্গে নিহত সুমা দেবের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় ২০০৯ সালে। সাংসারিক জীবনে তাদের দীপান্বিতা দেব (১১), জিতু দেব (৮) ও অনামিকা (৮ মাস) নামে তিন কন্যা ছিল। পারিবারিক নানা বিষয়ে চলছিল তাদের কলহ। জেবিন দেব আজিম গ্রুপ গার্মেন্টসে কর্মী হিসাবে চাকরি করতেন।

অধিক আয়ের আশায় ৩ মাস পূর্বে ওমান যান জেবিন। বিদেশে কাজের চাপ বেশি হওয়ায় ৫ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত প্রায় দেড়টার দিকে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে বেরিয়ে ভোর ৬টার দিকে কলাতলীর হোটেল সি আলিফের ৪র্থ তলার ৪১১নং কক্ষে উঠে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিক হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় আরও বলেন, ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে জেবিন দেব স্ত্রী সুমা দেব ও ছোট মেয়ে অনামিকাকে হোটেল কক্ষে রেখে বাহির থেকে তালা দিয়ে বড় মেয়ে দীপান্বিতা ও জিতুকে নিয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে যান।

এর প্রায় তিন মিনিট পর আবার দুই মেয়েকে হোটেলের লবিতে রেখে জেবিন একা রুমে প্রবেশ করেন। আবার ১০টা ২৪ মিনিটে রুম থেকে বের হয়ে লবিতে আসেন। সাড়ে ১০টায় দুই সন্তানকে আবারও লবিতে রেখে লিফটে ১০টা ৩১ মিনিটে ৪১১নং কক্ষে যান। ১০টা ৩৮ মিনিটে বের হয়ে রুম তালা দিয়ে হাতে একটি তোয়ালেসহ সিঁড়িতে হোটেল লবিতে নেমে দুই মেয়েকে নিয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে আর হোটেলে প্রবেশ করেননি।

১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টায় তাদের হোটেল থেকে চেক আউট করার কথা ছিল। কিন্তু দেরি হওয়ায় হোটেলের হাউজ কিপিংয়ের ছেলেরা গিয়ে চেক করে দেখে দরজা বন্ধ। দুপুর সাড়ে ১২টায় মাস্টার কি দিয়ে দরজা খুলে মেঝেতে সুমা দেব ও বিছানায় তাদের কন্যা সন্তান অনামিকার লাশ পড়ে আছে দেখেন। তখন তারা পুলিশকে সংবাদ দেন।

তিনি আরও জানান, এসপির নির্দেশনায় সদর মডেল থানার ওসির তত্ত্বাবধানে থানার একটি চৌকস টিম গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে জেবিন দেবকে সিএমপির বাকলিয়া থানা পুলিশের সহায়তায় বাকলিয়ার নতুন ব্রিজের কাছ হতে গ্রেফতার করে।

ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কথা উল্লেখ করে জেবিনের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিক আরও জানান, পারিবারিক ভাবে অসন্তোষ ছিল জেবিন-সুমার। কলহ লেগেই ছিল তাদের। স্ত্রীকে সন্দেহ হতো, তাই ছোট মেয়েকে নিয়ে সংসারে অশান্তি ও সম্পর্কের টানাপোড়েন ছিল। জেবিন ৫ ফেব্রুয়ারি বিদেশ থেকে চলে আসে এবং চলতি মাসের ২৩ তারিখ ফিরে যাওয়ার কথা।

বিদেশ থেকে এসেই ৭ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার এসে ঘুরে যান। সে সময় স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করে ১৪ ফেব্রুয়ারি হোটেল সি আলিফে উঠে এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০টা হতে সাড়ে ১০টার মধ্যবর্তী সময়ে স্ত্রীকে গলা টিপে শ্বাসরোধে এবং কন্যা সন্তানকে বালতির পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করেন। পরে লাশগুলো হোটেল হতে সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যান।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানান, নিহত সুমা দে ও শিশু কন্যার মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। স্বজনরা কক্সবাজার এসে পৌঁছালে লাশ হস্তান্তর করা হবে। মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম