অমর একুশে বইমেলা ২০২৩
যেমন জনসমাগম তেমন বিক্রি
হক ফারুক আহমেদ
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে শুধু মানুষ আর মানুষ। বইকে ভালোবেসেই তাদের আগমন। শুক্রবার ছিল ছুটির দিন। এদিন বইপ্রেমী পাঠকরাই এসেছিলেন বেশি। জনসমাগম যেমন বেশি ছিল তেমন ভালো ছিল বই বিক্রিও। কম-বেশি সবার হাতেই ছিল বই।
সন্ধ্যার পর মেলা প্রাঙ্গণে যেন জনস্রোত বয়ে যায়। রীতিমতো এগিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও কষ্ট করে হলেও পাঠকরা প্রিয় লেখকের নতুন, পুরোনো বই সংগ্রহ করেছেন। প্যাভিলিয়ন আর স্টল ঘিরে ছিলেন পাঠক আর পাঠক।
ঐতিহ্যের প্যাভিলিয়নে ছিলেন প্রকাশক আরিফুর রহমান নাঈম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, বইয়ের বিক্রি সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে। আমরা এ বছর ঝুঁকি নিয়েছি। অন্যান্য বছর যেখানে ১০০ বই প্রকাশ করি সেখানে এ বছর বই প্রকাশ করেছি ২০০। কারণ, আমাদের বিশ্বাস ছিল করোনাকালের পর পাঠকের কাছে নতুন বইয়ের চাহিদা বাড়বে এবং সেটাই হয়েছে। প্রচুর বই বিক্রি হচ্ছে।
কথা প্রকাশের ব্যবস্থাপক ইউনূস আহমেদ বলেন, গত কয়েকদিন থেকেই আমরা লক্ষ্য করছি, যারা বইমেলায় আসছেন তাদের বেশিরভাগই বই কেনার জন্যই এসেছেন। শুক্রবারেও তাই।
এদিকে বইমেলা ভালোভাবে এগিয়ে গেলেও সার্বিক দিকে আরও যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণি। তিনি বলেন, মেলার নীতিবহির্ভূত অনেক কিছুই হচ্ছে। বিদেশি বিশেষ করে ভারতীয় লেখকদের বই বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানকে স্টল দেওয়া হয়েছে যারা সত্যিকারের প্রকাশক নন, সিজনাল ব্যবসায়ী। মানহীন বই বিক্রি হচ্ছে। শিশুচত্বরে কয়েকটি ভালো প্রতিষ্ঠান ছাড়া অনেকের মৌলিক কোনো বই নেই। ভবিষ্যতে যদি আমরা সত্যিকার অর্থেই একটি ভালো বইমেলা করতে চাই তাহলে এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
শুক্রবার মেলার শুরুতে শিশুপ্রহর : বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও সিসিমপুরের ‘প্যারেন্টাল ম্যানুয়াল’ ইন্টারনেটকে শিশুদের জন্য নিরাপদ করার লক্ষ্যে অভিভাবকদের সচেতন করতে যৌথভাবে কাজ করছে। এর অংশ হিসাবে সেভ ইন্টারনেট অ্যান্ড আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় এবং ইন্টারনেট সোসাইটি ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে একটি প্যারেন্টাল গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। এদিন শিশু চত্বরের সিসিমপুর কিডস কর্নার মঞ্চে প্যারেন্টাল ম্যানুয়ালটি আনুষ্ঠানিকভাবে বিতরণের জন্য উদ্বোধন করেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ, সিসিমপুরের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিসেমি ওয়ার্কশপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম, প্রোগ্রাম ও বিজনেস ডেভেলপমেন্ট পরিচালক আবু সাইফ আনসারী এবং পরিচালক কনটেন্ট অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ সার্ভিসেস নাসরিন আক্তার।
সিসিমপুর সূত্রে জানা গেছে, ম্যানুয়ালটি দেশের বিভিন্ন স্কুলে বিতরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া এটি বিটিআরসির ওয়েবসাইট এবং সিসিমপুরের অ্যাপেও পাওয়া যাবে।
মূলমঞ্চে জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : এ অনুষ্ঠানে এদিন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ শীর্ষক আলোচনায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মহীবুল আজিজ। আলোচনায় অংশ নেন অনিরুদ্ধ কাহালি ও মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ আকরম হোসেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র সাহিত্যকে বিচার করা এখন সময়ের দাবি। তার সাহিত্য-বিশ্লেষণে শৈল্পিক ও নান্দনিক ব্যবহারের দিকে আমাদের মনোযোগী হতে হবে।
এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মাসুদুজ্জামান, ভাগ্যধন বড়ুয়া, ম্যারিনা নাসরিন এবং ইউসুফ মুহম্মদ। কবিতা পাঠ করেন ফরিদ আহমদ দুলাল, ফেরদৌস নাহার, তপন বাগচী, জাহিদ মুস্তাফা, আফরোজা সোমা এবং আশরাফ জুয়েল। আবৃত্তি করেন সুকান্ত গুপ্ত, রুবিনা আজাদ এবং শওকত আলী। এছাড়া ছিল ফরিদ আহমদ দুলাল রচিত এবং নাট্যাঙ্গন নাট্যপরিবার নিবেদিত নাটক ‘উন্মোচন রহস্য’ এবং রুবিনা আজাদের পরিচালনায় ‘উদয় দিগঙ্গন’র শিল্পীদের পরিবেশনা।
নতুন বই : শুক্রবার বইমেলায় নতুন বই এসেছে ২৭৬টি। ঐতিহ্য থেকে এসেছে সনজীদা খাতুনের ‘আমার রবীন্দ্রনাথ ২য় খণ্ড’, ‘রফিক আজাদ রচনাবলী ৪’, অনার্য থেকে প্রকাশ হয়েছে কথাসাহিত্যিক মনি হায়দারের গল্পের বই ‘রক্তাক্ত গ্লাসের গল্প’, পেন্ডুলাম থেকে এসেছে কৌশিক জামানের উপন্যাস ‘নগরের যত বিষাদ’।