Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বাংলাদেশ-ভারত

নৌপথে বেড়েছে পণ্য ও পর্যটক যাতায়াত

তিন বছর বন্ধের পর চালু পর্যটকবাহী জাহাজ * গত অর্থবছরে ৪৭ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য পরিবহণ

Icon

কাজী জেবেল

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নৌপথে বেড়েছে পণ্য ও পর্যটক যাতায়াত

নৌপথে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বাড়ছে। দুই দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহণও বেড়েছে।

২০১৯ সালে পর্যটক যাতায়াত শুরুর পর তিন বছর বন্ধ ছিল। এ বছর ফের শুরু হয়েছে। নৌপথে বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ বেড়েছে। বর্তমানে গংগা বিলাশ নামের ভারতীয় জাহাজ পর্যটক নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করছে।

আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি আরভি কথা পান্ডো নামের আরেকটি ভারতীয় জাহাজ আন্টিহারা নৌসীমানা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের কথা রয়েছে। এছাড়া সামনের কয়েক মাসের মধ্যে ভারত থেকে পর্যটকবাহী আরও কয়েকটি জাহাজ বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে ট্যুর অপারেটর ও এজেন্টরা বিদেশি জাহাজ এ দেশে প্রবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদনও করেছেন।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাহাজ মালিক ও অপারেটররা পর্যটক পরিবহণের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন, তবে পণ্য পরিবহণে এগিয়ে। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, দুই দেশের মধ্যে শুধু যাত্রী নয়, ‘অভ্যন্তরীণ নৌপথে অতিক্রমণ ও বাণিজ্য প্রটোকল’ (পিআইডব্লিউটিঅ্যান্ডটি) চুক্তির আওতায় পণ্য পরিবহণও বেড়েছে। গত অর্থবছরে এ চুক্তির আওতাভুক্ত নৌরুটগুলোতে ৪৭ লাখ ৪১ হাজার ৬৫ মেট্রিক টন পণ্য পরিবাহিত হয়েছে; যা আগের বছর থেকে সাত লাখ ৮১ হাজার ১৮০ টন বেশি। এ সময়ে নৌযানের পাঁচ হাজার ১৫৫টি ট্রিপে এ পরিমাণ মালামাল বহন করা হয়। এর মধ্যে ৪৮৯১টি ট্রিপ দিয়েছে বাংলাদেশের মালিকানাধীন জাহাজ। বাকি ২৬৪টি ট্রিপ দিয়েছে ভারতীয় মালিকানাধীন জাহাজ।

জানতে চাইলে নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বিস্মিত হয়ে অনেক পর্যটক এখন বাংলাদেশে ঘুরতে আসছেন। নৌ প্রটোকলভুক্ত রুটগুলো সচল ও নিরাপদ রাখতে পারায় ভারত থেকে একের পর এক পর্যটকবাহী জাহাজ এ দেশে আসছে। বিদেশি পর্যটকরা বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক স্থাপত্য ও নিদর্শনগুলো ঘুরে দেখতে পারছেন। এতে বিদেশে এ দেশের ভাবমূর্তি আরও বাড়ছে।

সূত্র জানায়, নৌপথে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য পরিবহণ চলে আসছে ১৯৭২ সাল থেকে। ‘অভ্যন্তরীণ নৌপথে অতিক্রমণ ও বাণিজ্য প্রটোকল’ (পিআইডব্লিউটিঅ্যান্ডটি)-এর আওতায় অভ্যন্তরীণ নৌপথের মাধ্যমে এবং ‘উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি’র আওতায় নৌ ও সমুদ্র উভয় পথে পণ্য পরিবাহিত হয়। আর যাত্রী ও পর্যটকবাহী নৌযান চলাচলে আরেকটি সমঝোতা স্মারক ও এসওপি’র আওতায়। ওই সমঝোতা স্মারকটি (এমওইউ) ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর এবং এ সংক্রান্ত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর সই হয়। ওই এসওপি’র আওতায় ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ প্রথম দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক পর্যটকবাহী নৌযান চলাচলের উদ্বোধন করা হয়। ওই সময়ে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) এমভি মধুমতি জাহাজ ৫৩ জন দেশি পর্যটক নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে সুন্দরবন হয়ে কলকাতায় যায়। ওই বছর ভারত থেকে আরভি বেঙ্গল গঙ্গা একটি ও এমভি মহাবাহু নামক জাহাজ পৃথক দুটি ট্রিপে পর্যটক নিয়ে বাংলাদেশে আসে। এরপর থেকে গত তিন বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

তিন বছর পর ভারতীয় জাহাজ এমভি গংগা বিলাস গত শুক্রবার বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে। শনিবার মোংলা বন্দরে জাহাজের পর্যটকদের স্বাগত জানান নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদা মাহমুদ চৌধুরী। জাহাজটিতে ২৭ জন পর্যটক রয়েছেন; যারা সবাই সুইজারল্যান্ডের নাগরিক। তারা ভারত থেকে বাংলাদেশ হয়ে আবার দেশটিতে যাবেন। এ জাহাজটি পরিচালনার জন্য প্রটোকল অপারেটর হিসাবে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান মেসার্স গাল্ফ ওরিয়েন্স সি-ওয়েজ এবং পর্যটন অপারেটর হিসাবে আরেকটি দেশি প্রতিষ্ঠান জার্নি প্লাস কাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবন, মোংলা পোর্ট, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানুষের জীবন ধারণের বৈচিত্র্যতার দিকে বিদেশি পর্যটকদের আগ্রহ বাড়ছে।

বেসরকারি অপারেটর ও বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, গংগা বিলাস জাহাজটি আবারও পর্যটক নিয়ে বাংলাদেশে আসবে। এটি আগামী ১৩ মার্চ চিলমারী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। তখন জাহাজটিতে বর্তমান পর্যটকরা থাকবেন না। অন্য পর্যটক নিয়ে আসবে। জাহাজটি সিরাজগঞ্জ, আরিচা, বরিশাল, সুন্দরবন হয়ে আংটিহারা নামক স্থানে ইমিগ্রেশন শেষ করবে। সেখান থেকে ভারতে চলে যাবে। এর আগে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি আরভি কথা পান্ডো নামের আরেকটি ছয়জন পর্যটক নিয়ে বাংলাদেশের নৌসীমানা আটিংহারায় প্রবেশের কথা রয়েছে। ওই পর্যটক ছয়জনের তিনজন যুক্তরাজ্যের, দুজন স্পেন ও একজন ইতালির নাগরিক। এ জাহাজটি বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাছে আবেদন করেছে জার্নি ওয়ালেট নামের বাংলাদেশি একটি পর্যটন অপারেটর। এছাড়া মে মাসে আসাম-বেঙ্গল নেভিগেশন নামের প্রতিষ্ঠানের একটি জাহাজ পর্যটক নিয়ে বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। ভারতের পর্যটকবাহী জাহাজ বাংলাদেশে আসার আগ্রহ বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন গংগা বিলাস জাহাজের এ দেশীয় অপারেটর জার্নি প্লাসের প্রধান নির্বাহী তৌফিক রহমান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের জায়গা হিসাবে বাংলাদেশ সুনাম অর্জন করছে। সামনে পর্যটকবাহী জাহাজের কয়েকটি ট্রিপ বাংলাদেশে আসবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি স্বীকার করে বলেন, ভারতে পর্যটক নিয়ে যাওয়ার উপযোগী জাহাজ বাংলাদেশে নেই বললেই চলে। এদিক থেকে আমরা পিছিয়ে আছি।

পণ্য পরিবহণও বেড়েছে : সূত্র জানায়, নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় দুই দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহণ বেড়েই চলছে। একই সঙ্গে অনেক পণ্য পরিবহণ সুবিধা, যাতায়াত খরচ কমসহ নানা কারণে নৌপথে পণ্য পরিবহণে আগ্রহ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ ৫৬ হাজার ১৯৯ টন পণ্য পরিবাহিত হয়েছে নৌপথে। নৌযানের ১১৭৪টি ট্রিপে এসব পণ্য পরিবহণ করা হয়। এর আগের বছর ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৭ লাখ ৪১ হাজার ৬৫ মেট্রিক টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮৫ মেট্রিক টন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৭ লাখ ৮০ হাজার ৪১৬ মেট্রিক পণ্য পরিবাহিত হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নৌপথে পণ্য পরিবহণে একচেটিয়াভাবে বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজ রয়েছে। কিন্তু ক্রমেই তা কমে আসছে। গত অর্থবছরে দুই দেশের পরিবাহিত পণ্যের ৮৯ ভাগ পরিবহণ করেছে বাংলাদেশের মলিকানাধীন জাহাজ। বাকি ১১ ভাগ পরিবহণ করেছে ভারতীয় মালিকাধীন। অথচ আগের বছর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৯৯ শতাংশই মাল পরিবাহিত হতো বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজে। বাকি এক শতাংশ পরিবাহিত হতো ভারতের জাহাজে।

সূত্র আরও জানায়, দুই দেশের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি রয়েছে। ওই চুক্তির আওতায় ৬ হাজার গ্রস টনের সক্ষমতার জাহাজ চলাচল করে। সেখানেও বাংলাদেশের জাহাজ বেশি পণ্য পরিবহণ করত। কিন্তু চুক্তি সংশোধন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ঐকমত্য না হওয়ায় এ চুক্তির আওতায় জাহাজ চলাচলে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম