চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ঐতিহ্যের শাটল ট্রেনে ভোগান্তির শেষ নেই
রোকনুজ্জামান, চবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম শাটল ট্রেন। কিন্তু এই বাহনে চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই। প্রতিদিন সাতবার শহর থেকে চবি স্টেশন ও চবি স্টেশন থেকে পুনরায় শহরের উদ্দেশে ছেড়ে যায় এই ট্রেন। আসন সংকট, চুরি-ছিনতাই, ছাত্রীদের যৌন হেনস্তা, পাথর নিক্ষেপসহ বিভিন্ন কারণে নিজস্বতা হারাতে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা এই ট্রেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শাটলে যাতায়াতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় আসন সংকটের কারণে। সকালে ক্যাম্পাসগামী ও দুপুর কিংবা বিকালের শহরগামী ট্রেনগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। বিগত বছরগুলোতে চবিতে নতুন বিভাগ যুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। তবে সে তুলনায় বাড়েনি শাটল ট্রেনের বগি কিংবা আসন সংখ্যা।
চবির দুটি ট্রেনের প্রত্যেকটিতে দশটি করে বগি সংযুক্ত রয়েছে। প্রতি বগিতে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ জনের ধারণক্ষমতা থাকলেও ব্যস্ত সময়গুলোতে যাতায়াত করছেন দ্বিগুণেরও বেশি শিক্ষার্থী। ২০২১ সালের নভেম্বরে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় চবির ডেমু ট্রেনটি। এরপর থেকে চাপ বাড়ে ট্রেন দুটির ওপর। বাধ্য হয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে ঝুঁকি নিয়ে উঠতে হয় ট্রেনের ছাদে, বসতে হয় ওঠা-নামার সিঁড়িতে। এতে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা।
কোনো পাওয়ার কার সংযুক্ত না থাকায় অকেজো হয়ে থাকে সিলিংয়ের ফ্যানগুলো। গরমের দিনে ঘেমে একাকার হতে হয় শিক্ষার্থীদের। নেই সুবিধাজনক আলোর ব্যবস্থা। যা আছে তাতে আলোকিত হয় না পুরো ট্রেন। পাশাপাশি জরাজীর্ণ বগি ও ধীরগতি তো আছেই।
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায়ই ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। এ ছাড়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অন্তর্কোন্দলের বলি হচ্ছে শাটল ট্রেন। পান থেকে চুন খসলেই ট্রেনের লোকো মাস্টারকে অপহরণ, চাবি ছিনতাই ও হোসপাইপ কেটে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ট্রেনের লোকো মাস্টাররা জানান, বিভিন্ন কারণে ট্রেন দেরিতে ছাড়তে হয়। কখনো বা ইঞ্জিন থাকে না কিংবা ইঞ্জিন থাকলেও কোনো ত্রুটির কারণে তা ব্যবহার করা যায় না। মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীরাও দেরিতে ছাড়তে অনুরোধ জানান।
শিক্ষার্থীরা জানান, শাটলে চুরি-ছিনতাই ঘটছে নিয়মিত। সর্বশেষ ৩১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার শহরগামী ট্রেনে মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি ও মারধর করে সঙ্গে থাকা আইফোন ছিনতাই করেন কয়েকজন বখাটে।
এ ছাড়া গত বছরের এপ্রিলে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রীর মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীকে ধরতে চলন্ত শাটল থেকে লাফ দেন ওই ছাত্রী। শাটলে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়মিতই ঘটছে। শাটলে যাতায়াতে আরেকটি ভীতিকর ব্যাপার হলো পাথর নিক্ষেপ। গত এক বছরে নিক্ষেপ করা পাথরের আঘাতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
শাটলে বহিরাগতরা ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় শহরগামী শাটলে দুই বখাটের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হন এক ছাত্রী। এর তিন মাস পর ২৮ জুন সকালে হয়রানির শিকার হন আরেক শিক্ষার্থী। এসব সমস্যা বিবেচনায় অছাত্র ও স্থানীয়দের শাটলে চলাচলে আপত্তি জানান শিক্ষার্থীরা। তবে প্রায় অবাধেই তারা শাটলে যাতায়াত করছেন।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসাইন বলেন, ‘এতো শিক্ষার্থীর জন্য দশটি বগি খুবই অপ্রতুল। ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার। একইসঙ্গে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।’
ট্রেনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লোকবল সংকটের কারণে শাটলের নিরাপত্তায় দুই বা তিনজনের বেশি পুলিশ সদস্যকে দেওয়া সম্ভব হয় না। এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বখাটে বা ছিনতাইকারীরা অপরাধ করে খুব সহজেই ট্রেন থেকে নেমে যেতে পারে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এএসএম জিয়াউল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, শাটল ট্রেন রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে চুক্তিভিত্তিক সেবা দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে ট্রেনের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য দায়িত্ব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। প্রত্যেক ট্রেনে ছয়জন পুলিশ সদস্য রাখার ব্যাপারে আমরা রেলওয়েকে অনুরোধ করেছি।