অমর একুশে বইমেলা ২০২৩
চ্যালেঞ্জ নেওয়া ও সাহস দেখানোর সময়
হক ফারুক আহমেদ
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
এবারের বইমেলা বেশ আশাব্যাঞ্জক। শুরুর দিন থেকে টুকটাক বই বিক্রি চলছে। সেটা অব্যাহত ছিল মেলার পঞ্চম দিন রোববারও।
এদিন বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেলায় প্রচুর পাঠকের আনাগোনা ছিল। তবে বেশকিছু প্রকাশনা সংস্থা মেলার জন্য পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করলেও কাগজ এবং প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট নানা পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে নতুন বই প্রকাশ নিয়ে সংশয়ে আছে।
এটিকেই আবার অনেক প্রকাশক ও প্রকাশনাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের বইমেলা অনেক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ নেওয়া এবং সাহস দেখানোর মেলা।
আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণি যুগান্তরকে বলেন, প্রকাশককেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তিনি কতটুকু চ্যালেঞ্জ নেবেন। কাগজের দাম অনেক বেড়েছে। সেই তুলনায় আমরা দাম বাড়িয়েছি কম। মাত্র ২৫-৩০ শতাংশ। আমি মনে করি, যারা আসলেই বইয়ের ক্রেতা, তারা এ দাম বৃদ্ধি খুব একটা আমলে নেন না।
জ্যেষ্ঠ এ প্রকাশক নিরাপত্তার নামে হয়রানির অভিযোগ এনে বলেন, গত বছরও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের গেট সর্বসাধারণের জন্য খোলা ছিল। কিন্তু এবার সেই গেট কী কারণে বন্ধ থাকবে? মেলায় বই আনার সময় প্রকাশকদের জন্য বেলা ১১টার মধ্যে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এরই বা যৌক্তিকতা কী?
ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, মেলা এবার খুবই ইতিবাচক। আমরা এখন যে বই বিক্রি করছি, এর ৬০ ভাগ নতুন এবং ৪০ ভাগ পুরোনো। পাঠক প্রতিদিনই এসে নতুন বইয়ের খোঁজ করছেন। যারা কাগজের দাম সমন্বয় করে নতুন বই প্রকাশ করবেন, তারা এবার লাভবান হবেন বলে মনে করি।
মূল মঞ্চে স্মরণ অনুষ্ঠান : বিকালে অনুষ্ঠিত হয় সমরজিৎ রায় চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহিদ মুস্তাফা। আলোচনায় অংশ নেন মইনুদ্দীন খালেদ ও মুস্তাফা জামান। সভাপতিত্ব করেন শিল্পী হাশেম খান। এই প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের বরেণ্য শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী হাতে লেখা বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম নকশাবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান লোগোসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের লোগোর প্রণেতা। তিনি ছবি আঁকতেন আমাদের দেশের রূপবৈচিত্র্য নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও ছবি এঁকেছেন তিনি। এছাড়া নিসর্গ ও মানুষ ছিল তার প্রিয় বিষয়।
এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কুদরত-ই-হুদা, বায়তুল্লাহ্ কাদেরী, আবু সাঈদ তুলু ও ফরিদুর রহমান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি আলতাফ হোসেন, আসলাম সানী ও মারুফ রায়হান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মীর বরকত, ইকবাল খোরশেদ এবং কাজী বুশরা আহমেদ তিথি। এছাড়া ছিল ফয়জুল আলম পাপ্পুর পরিচালনায় প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের আবৃত্তি পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইয়াকুব আলী খান, সালাউদ্দিন আহমদ, সুজিত মোস্তফা, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ও প্রিয়াংকা গোপ।
নতুন বই : রোববার বইমেলায় নতুন বই এসেছে ৭৩টি। এর মধ্যে পার্ল থেকে প্রকাশ হয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘বাহ্ টুনটুনি বাহ্ বাহ্ ছোটাচ্চু’, মাওলা ব্রাদার্স থেকে মুনতাসীর মামুনের ‘আদর্শ রাষ্ট্র, রাজনীতি : মুসলিম লীগের অবসান ও আওয়ামী লীগের উত্থান (১৯৪৭-১৯৫৪)’, কারুবাক থেকে তৌহিদ সিজারের ‘আদাভান’, রেহেনুমা আফরীন মালিহার বই ‘মালিহার গল্প’। আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের ‘বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর অতীত ও বর্তমান’, পাঠক সমাবেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে আহমাদ মোস্তফা কামালের ‘গল্পসংগ্রহ : দ্বিতীয় খণ্ড’, অবসর প্রকাশনা এনেছে মোহাম্মদ ইব্রাহীমের থ্রিলার উপন্যাস ‘বিষকাঁটালী’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে আহসান হাবীবের শিশুসাহিত্য ‘স্টপার’, অন্যপ্রকাশ থেকে এসেছে মারুফুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ ‘চৈত্রে একাকী’, মিজান পাবলিশার্স থেকে এসেছে আলী ইমামের ইতিহাসভিত্তিক বই ‘রক্তে রাঙানো পনের আগস্ট’, বিভাস প্রকাশনী থেকে এসেছে যতীন সরকারের প্রবন্ধসমগ্র ‘নির্বাচিত’, টাঙন থেকে প্রকাশিত হয়েছে হাবিবা বেগমের প্রবন্ধ ‘সাহিত্য সংস্কৃতি ও ভাষা প্রসঙ্গ।’