Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ইসলামি দল ও সংগঠনে নজর আ.লীগ-বিএনপির

স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না এমন কারও সঙ্গে ঐক্য নয় : আমির হোসেন আমু * ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সমমনা সব দলকে এক কাতারে আনার চেষ্টা করছি : খন্দকার মোশাররফ হোসেন

Icon

শেখ মামুনুর রশীদ

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলামি দল ও সংগঠনে নজর আ.লীগ-বিএনপির

কদর বাড়ছে ইসলামি দল ও সংগঠনের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের কাছে টানার চেষ্টা করছে। শাসক দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে একমাত্র ইসলামি দল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। ক্ষমতাসীনরা এবার তাদের এই জোটে আরও একাধিক ইসলামি দল ও সংগঠনকে ভেড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সে অনুযায়ী আলাপ-আলোচনাও চলছে সমমনাদের সঙ্গে।

বসে নেই মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও। ইসলামি দলগুলোর মধ্যে খেলাফত মজলিসের একাংশ এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের একাংশ দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গে ছিল। ইসলামি ঐক্যজোট ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নামে আরও দুটি ইসলামি দল এক সময় বিএনপির সঙ্গে জোটে ছিল। বর্তমানে তারা স্বতন্ত্র অবস্থানে। যদিও এদের একটি খণ্ডিত অংশ এখনো বিএনপির সঙ্গে রয়ে গেছে। ভোটের রাজনীতি মাথায় রেখে দীর্ঘদিনের মিত্রদের সঙ্গে রাখার পাশাপাশি বিএনপি নতুন করে আরও কয়েকটি ইসলামি দলকে ভেড়াতে চায় তাদের সঙ্গে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও ১৪ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর সঙ্গে যুগান্তরের কথা হয়। তিনি বলেন-যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, বঙ্গবন্ধু এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নয়, তাদের সঙ্গে আমাদের কখনও ঐক্য করার প্রশ্ন ওঠে না। এর বাইরে আমরা সবাইকে নিয়েই পথ চলায় বিশ্বাস করি। তিনি আরও বলেন, আমাদের সঙ্গে বাম-প্রগতিশীল ঘরানার রাজনৈতিক দল যেমন আছে, তেমনি কয়েকটি ইসলামি দলও আছে। ভবিষ্যতে সমমনা শরিকদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সে উদ্যোগ আমাদের আছে।

অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার জন্য সমমনা সব রাজনৈতিক দলকে এক কাতারে আনার চেষ্টা করছি। এরমধ্য দিয়ে মূলত আমরা একটি বৃহত্তর প্ল্যাটফরম গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। এক্ষেত্রে জোট বড় বিষয় নয়। যুগপৎ ভাবেও একসঙ্গে পথ চলা যায়। ইতোমধ্যে ডান, বাম, ইসলামিসহ বহু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বর্তমান সরকারের স্বৈরশাসন-অপশাসন এবং দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছে। সামনের দিনগুলোতে আরও অনেকেই মাঠে নামবে।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউর রহমান মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন আর আন্দোলনের সময় ইসলামি রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের কদর বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দেশের বড় দুদল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ইসলামি দল ও সংগঠনগুলোকে এখন কাছে টানার অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। এর সুদূরপ্রসারী পরিণতি কি হয়-তা সময় বলবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি। এরমধ্যে ১২টিই হচ্ছে ইসলামি দল। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-জাকের পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল)। নিবন্ধনের বাইরে আরও অনেক ধর্মভিত্তিক ইসলামি দল এবং সংগঠন রয়েছে, যার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।

ইসলামি দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন আওয়ামী লীগের সঙ্গে এবং মুসলিম লীগ বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আছে। বাকি ১০টি দলই স্বতন্ত্র অবস্থানে থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

দেশে ইসলামি ও ধর্মভিত্তিক ঘরানার রাজনৈতিক দলের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী এই দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে। দলীয় প্রতীকে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও রাজনীতির মাঠে বড় ফ্যাক্টর তারা।

বিএনপি ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় আসে। তবে এর পরই এই দুই দলের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর ফের তারা বিএনপির দিকে ঝুঁকে পড়ে। বিএনপি-জামায়াত জোট হিসাবে ভোট করে ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং জোটবদ্ধভাবেই সরকার গঠন করে। সেবার বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জামায়াতের শীর্ষ দুই নেতাকে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়।

জানা গেছে, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্ক বজায় রেখেই সরকারবিরোধী আন্দোলনে অন্যান্য দলকে পাশে চায় বিএনপি। এই মুহূর্তে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচনসহ অন্যান্য ইস্যুতেও আগামীতে বিএনপির সঙ্গে থেকেই পথ চলবে দলটি।

জামায়াতে ইসলামীর বাইরে ইসলামি দল এবং সংগঠনের মধ্যে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ভোটের রাজনীতিতে বড় ফ্যাক্টর। এই মুহূর্তে সাংগঠনিকভাবে খুবই শক্তিশালী চরমোনাই পিরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুদলই চায় আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের কাছে টানতে।

তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পির মুফতি মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম যুগান্তরকে বলেছেন, তারা আওয়ামী লীগ-বিএনপি কারও সঙ্গে যেতে চান না। তিনি আরও বলেন, ইসলামি নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নে আলাদা জোট গঠনের চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি সমমনা দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সামনে আরও কথাবার্তা হবে।

রাজনৈতিক দল না হলেও শক্তিশালী অবস্থানের কারণে দেশের রাজনীতিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এই মুহূর্তে দুই বড় দলের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক বিভিন্ন দল এবং দলনিরপেক্ষ আলেমদের মধ্যে এই সংগঠনটির রয়েছে শক্তিশালী অবস্থান। নিজেদের অরাজনৈতিক দাবি করে আসা এই সংগঠনের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা ইসলামপন্থি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত।

ইদানীং সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সখ্য দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় তারা সরকারের সঙ্গে এক প্রকার সমঝোতা করে চলার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতারা। এর আগে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি করে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরানা মাহফিলের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। ওই অনুষ্ঠানে সংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দেওয়া হয়।

হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথাবার্তা না বললেও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি বেশ সতর্ক দৃষ্টি রাখছে সংগঠনটির কর্মকাণ্ডের ওপর। ভেতরে ভেতরে তারাও সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুহিউদ্দিন রাব্বানি যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন সময় তাদের সংগঠনকে একটা রাজনৈতিক চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে তারা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক দ্বীনি সংগঠন।

তিনি আরও বলেন, দেশের মুসলমানদের ইমান-আকিদা হেফাজত এবং সংরক্ষণই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। আমাদের রাজনৈতিক কোনো লক্ষ্য, অভিলাষ বা পরিকল্পনা নেই। তাই কোনো দল বা জোটের সঙ্গে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এই মুহূর্তে আমরা আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম