সিডিএ’র শতকোটি টাকার জমি দখল যুবলীগ নেতার
উদ্ধার করতে ইউএনও ও এসি ল্যান্ডকে বলা হয়েছে -উপজেলা চেয়ারম্যান
আবেদ আমিরী, পটিয়া (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী উপজেলার ব্রিজঘাটে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) শতকোটি টাকার জমি দখল করে নিয়েছে উপজেলা যুবলীগের সদস্য আনোয়ার সাদাতা মোবারক। সেখানে তিনি কয়লা ও পাথরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে ওই জমিটি দখল করেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, ওই জমিটি বিভিন্ন ধরনের মেলা আয়োজন এবং ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার মাঠ হিসাবে ব্যবহৃত হতো। উপজেলার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একমাত্র মাঠ ছিল এটি।
দীর্ঘদিন ধরে সিডিএ’র জমিটি বেদখল হলেও তা উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তবে ৩ জানুয়ারি কর্ণফুলীর ব্রিজঘাটে মোবারকের অবৈধ কয়লার ডিপোতে অভিযান শেষে জরিমানা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত। সেখানে কয়লার ডিপো তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে এলেও তাদের নেই ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র।
দিনের পর দিন তারা কর্ণফুলী নদী ব্যবহার করে ব্যবসা করছে। ম্যাজিস্ট্রেট ওই মাঠে প্রায় ১১ হাজার মেট্রিক টন কয়লার স্তূপ দেখতে পান। এ সময় মোবারকের কর্মচারী মোহাম্মদ আল আমিনকে এক বছরের কারাদণ্ড এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
পাশাপাশি মজুত করা কয়লা এক সপ্তাহের মধ্যে নদীর তীর থেকে অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই কয়লা এখনো অপসারণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, নদীর তীরে অবৈধভাবে কয়লা মজুত করে পরিবেশের ক্ষতি করছিল প্রতিষ্ঠানটি। কয়লা একটি দাহ্য পদার্থ, নিজে থেকেই এতে আগুন ধরে যেতে পারে। শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ায় এবং সরাসরি সূর্যের আলোতে থাকায় কয়লাগুলোতে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে এবং মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটতে পারে। কয়লাগুলোকে দ্রুত অপসারণ করতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমদ বলেন, কর্ণফুলী উপজেলার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একমাত্র জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হতো মাঠটি। ওই মাঠ থেকেই দেশের অনেক নামিদামি খোলোয়াড় সৃষ্টি হয়েছে। এ মাঠ ছাড়া উপজেলার কোথাও কোনো খালি জায়গা নেই। কিন্তু যুবলীগ নেতা মোবারক দলীয় পরিচয়ে মাঠটি দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে উপজেলায় সাংস্কৃতিক উৎসব ও খেলাধুলা করতে পারছে না কেউ। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার জানানো হলেও তারা মাঠ উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।
কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী জানান, মাঠটি উদ্ধার করে সাংস্কৃতিক কার্মকাণ্ডের জন্য ফিরিয়ে দিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এসি ল্যান্ডকে বলা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এস্টেট অফিসার (ল্যান্ড) মোহাম্মদ সাদেকুর রহমান বলেন, বিষয়টি সিডিএ’র ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ দেখছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা মোবারক বলেন, ওই মাঠে খেলাধুলা হতো ঠিক। কিন্তু কর্ণফুলী নদীর ওপর ভাসমান ব্রিজের মালামাল রাখার জন্য ১৯৬৬-৬৭ সালে জমিটি আমার পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে সরকার অধিগ্রহণ করেছিল। কিন্তু বর্তমানে ভাসমান ব্রিজ না থাকায় ওই জমিটি এখন পরিত্যক্ত। অধিগ্রহণের শর্ত মোতাবেক ওই জমি সরকারের কাজে ব্যবহৃত না হলে আমরা ফিরে পাব। সে কারণে আমরা জমিটি ব্যবহার করছি।
ওই জমির খতিয়ানে সরকার পক্ষের নাম পরিবর্তন করে তাদের নামে করার জন্য একটি মামলা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের কাজ করেছে, আমি আমার কাজ করছি।