পদ্মশ্রী পেলেন সেই ‘সেলাই দিদিমণি’
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
২০২৩ সালের পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের সূচিশিল্পী প্রীতিকণা গোস্বামী। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের নয় নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৬৭ বছরের প্রীতিকণা। সেলাই সম্বল করে নারীদের স্বনির্ভর করে তুলেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দিয়েছেন বাংলার কাঁথাস্টিচকে। ডয়েচে ভেলে।
শুধু বাংলা বা ভারতের সীমানায় আবদ্ধ থাকেননি, বিদেশেও তার শিল্পকীর্তি ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু সেই নাম ছড়িয়ে পড়ার আগে যে নিরন্তর লড়াইয়ের মধ্যে তার অস্তিত্বের সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, তা একজন শিল্পীর সাধনাও বটে। কমলা দেবী কাঁথা সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা প্রীতিকণা বছরের পর বছর তৈরি করছেন বহু ছাত্রীকে, যারা তারই শিল্পকে দেশান্তরে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
প্রীতিকণা বলেন, আমি খুব সাধারণভাবেই ছাত্রীদের সঙ্গে মিশি, গল্প করি। উৎসাহিত করে বলি, দেখো আমি যদি পারি, তাহলে তোমরাও পারবে। তোমরাও পুরস্কারের জন্য কাজ করো। ইতোমধ্যে তারা ভালো কাজ করছেও।
বাংলাদেশের বরিশালে পূর্বপুরুষের ভিটে প্রীতিকণার। তার ঠাকুরমা ছিলেন সেলাইয়ে স্বর্ণপদকজয়ী। ঠাকুরমার সেসব কাজ তাকে উৎসাহ দিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে জš§ানো প্রীতিকণার কাঁথা এমব্রয়ডারি শিল্পে তেমন জ্ঞান ছিল না। এক বন্ধুর অনুপ্রেরণায় হাতেখড়ি হয় তার।
সংসারের দুর্দিনে এই শিল্পকে আঁকড়ে ধরেন উপার্জনের পথ হিসাবে।
এভাবে কেটে যায় অনেক বছর। পরে ক্রাফটস কাউন্সিল অব ওয়েস্ট বেঙ্গলের একটি কাঁথাস্টিচের কাজ ১৭টি বিনিদ্র রাত জেগে শেষ করেন। এমন একাগ্রতা দেখানোয় এরপর ক্রাফটস কাউন্সিল তাকে একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিতে বলে। প্রীতিকণা বিভিন্ন জাদুঘর ঘুরে বছরের পর বছর নিরন্তর কাজ শিখেছেন এবং সেসব শিখিয়েছেন। বহু নারীর জীবন ও জীবিকা সুষ্ঠুভাবে চালানোর দায়িত্ব পালন করে এভাবেই তিনি হয়ে উঠেন স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এই সূচিশিল্পীর অনাড়ম্বর, সাধারণ বাঙালি জীবনে দারিদ্র্য, অবহেলা ছিল নিত্যসঙ্গী।
বড় মেয়ে মহুয়া লাহিড়ি বলেন, আমাদের দেশে শিল্পী, কারিগরদের শ্রদ্ধা, সম্মান, পারিশ্রমিক অনেক কম। ছোটবেলা থেকে আমরা দারিদ্র্য দেখে বড় হয়েছি। তার ওপর তেমন সম্মানও জোটেনি। এমনকি ২০০১ সালে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার পরও আমার মাকে প্রতিবেশীরা আলাদা চোখে দেখেনি। বরং আমার কিংবা বোনের মা হয়েই তিনি আটকে থেকেছেন একটা নির্দিষ্ট পরিচয়ের গণ্ডিতে।