Logo
Logo
×

শেষ পাতা

দুই যুবক খুনের জের

ঘোড়াঘাটে অর্ধশত বাড়িতে আগুন-লুট

Icon

দিনাজপুর ও বিরামপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঘোড়াঘাটে অর্ধশত বাড়িতে আগুন-লুট

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে দুটি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার প্রায় অর্ধশত বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ সময় লুট করা হয়েছে বহু গরু-ছাগলসহ বাড়ির টিভি-ফ্রিজ।

লুটে নেওয়া হয়েছে মূল্যবান আরও অনেক জিনিসপত্র। চার নম্বর ঘোরাঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান ভুট্টো বলেছেন, দুই যুবকের জানাজা শেষে সবাই একযোগে এলাকার প্রায় সব বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। পুড়ে যাওয়া বাড়িঘরের সংখ্যা অর্ধশত হবে।

দীর্ঘদিন ধরেই ২৮ শতক জমি নিয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলার খোদাতপুর (চুনিয়াপাড়া) গ্রামের হায়দার আলীর সঙ্গে চর এলাকা থেকে এসে বসবাসরত ওমর ফারুকের বিরোধ চলছিল। বুধবার সকালে ওই জমিতে দু’পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। ওই ঘটনায় হায়দার আলীর ছেলে মনোয়ার হোসেন মিম (২৪) ও ইসমাইল হোসেনের ছেলে রাকিব হোসেন (২৫) নিহত হন। নিহত রাকিবও হায়দার আলীর লোক হিসাবে পরিচিত।

হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনা নিয়ে এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ভেতরে ভেতরে চলছিল হামলা পালটা হামলার তোড়জোড়। গতকাল বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের পর হাঁড়কাপানো শীতের মধ্যে বহু মানুষ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছিল। ঘোড়াঘাট থানায় বুধবারের হত্যার ঘটনায় করা মামলার পর পুলিশ ওইদিনই ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। এরা হলেন- ওমর ফারুক, তার স্ত্রী মোমেতা বেগম ও ছেলে সামিরুল।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত ওই দুই যুবকের দাফন সম্পন্ন হওয়ার পরই চর এলাকা থেকে এসে বসবাসরত ওমর ফারুকের লোকজনের বাড়ি ঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ শুরু হয়। হামলাকারীরা একের পর এক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিল। হামলাকারীরা যখন বাড়ি-ঘরে ঢুকে অগ্নিসংযোগ করছিল তখন জীবন বাঁচাতে বাড়ির বাসিন্দারা গা-ঢাকা দিতে শুরু করে। এ সময় এলাকায় এক ত্রাসের রাজত্ব কয়েম হয়। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

শিশু-যুবক-বৃদ্ধদের মধ্যে শুরু হয় ছোটাছুটি ও কান্নাকাটি। এরপরই শুরু হয় লুটপাট। অনেকে গরু-ছাগলও নিয়ে যায়। আগুনে বাড়ির আসবাবপত্র, মোটরসাইকেল ও খড়ের পালাসহ বহু মূলবান সামগ্রী পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, তাদের বাড়িতে আগুন লাগানো ছাড়াও তাদের টিভি, ফ্রিজ এবং গরু-ছাগল লুট করা হয়েছে। চুনিয়াপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী নারী মোসলেমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বাড়ির সবকিছু পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে গরু ও ফ্রিজ ছিল। সেগুলো নিয়ে গেছে। আমরা এখন কোথায় থাকব।

তবে পুলিশ একটি বাড়িতে হামলার কথা স্বীকার করলেও স্থানীয়রা বলছেন বেশকয়েকটি বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে বেলা ৩টায় ঘটনাস্থলে আসে ফায়ার সার্ভিস। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি ইউনিট একযোগে কাজ করে। ছুটে আসে পুলিশও। কিন্তু ততক্ষণে বহু বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

কথা হয় বিরামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) একেএম ওহিদুন্নবীর সঙ্গে। তিনি বলেন পরিস্থিতি শান্ত করতে ঘটনাস্থলে ঘোড়াঘাট থানার পাশাপাশি ফুলবাড়ি, বিরামপুর থানা এবং জেলা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স থেকে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঘোড়াঘাট থানার ওসি আবু হাসান কবীর জানান, পুলিশের পদক্ষেপে পরিস্থিতি বর্তমানে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের কথা জানান তিনি।

ঘোড়াঘাট ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ নিরঞ্জন সরকার বলেছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আমাদের একাধিক ইউনিট কাজ করছে। একাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে এবং ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না। পরে যাচাই-বাছাই করে তা জানা যাবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম