Logo
Logo
×

শেষ পাতা

চট্টগ্রামে ফের অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

আমনের ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম * ডিম ডজনে বেড়েছে ১৫-২০ টাকা * সব ধরনের সবজি কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে

Icon

আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রামে ফের অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

ফের অস্থির চট্টগ্রামের নিত্যপণ্যের বাজার। বেড়েই চলেছে ডিম, চাল, ডাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনি, ছোলাসহ অন্যান্য পণ্যের দাম। সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও মিলছে না ভোজ্যতেল।

এখন আমনের ভরা মৌসুম। বাজারে নতুন চাল আসায় দাম কমার কথা। কিন্তু দাম কমেনি। মিলপর্যায় থেকে শুরু করে পাইকারি আড়ত ও খুচরা বাজারে চালের মজুত পর্যাপ্ত। থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বস্তা। তারপরও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সব ধরনের চালের দাম।

তবে সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও ব্রয়লার মুরগির দাম। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ।

ব্যবসায়ীরা জানান, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ডিমের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। বেশ কিছুদিন ডিমের বাজার স্থিতিশীল থাকার পর আবারও অস্থির হয়ে উঠছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে ফার্মের ডিম ডজনপ্রতি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। গত বছরের আগস্ট-অক্টোবরেও ডিমের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছিল।

চকবাজারের ডিমের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, ‘অতিরিক্ত দাম দিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ডিম কিনতে হয়। তাই আমরাও বেশি দামে বিক্রি করছি। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ডিমের দাম কম ছিল। এখন বাজারে ডিমের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। যে কারণে দামও বাড়ছে। আগের দামের তুলনায় এখন পাইকারিতে প্রতি একশ ডিমে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।’

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের চাল ব্যবসায়ীরা জানান, চালের ভরা মৌসুমেও কমছে না চালের দাম। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি হয়েছে। তারপর চালের দাম কমার লক্ষণ নেই।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চট্টগ্রামে গত সপ্তাহে প্রতি বস্তা মোটা সিদ্ধ চালের দাম ছিল ২ হাজার টাকা। চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ১০০ টাকা। সিদ্ধ মিনিকেটের দাম আগে ছিল ২ হাজার ৭০০ টাকা। এ সপ্তাহে তা ২ হাজার ৮০০ টাকা। গুটি স্বর্ণার দাম ছিল ২ হাজার ২০০ টাকা, এখন ২ হাজার ৩০০ টাকা। ইন্ডিয়ান স্বর্ণার দাম ২ হাজার ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ৪০০ টাকায় উঠে গেছে। এ ছাড়া গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে পারি সিদ্ধ জাতের চালের দাম ২ হাজার ৪৫০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৫০ টাকায়। চালের খুচরা বাজারও অস্থির। মোটা চাল কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না।

সূত্র জানায়, সরকার বিদেশ থেকে জিটুজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করলেও চালের দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। আবার কিছু কিছু মিলার সামনে দাম বাড়ার আশায় চাল মজুত করছেন। ফলে চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। মিল মালিকরা চালের সরবরাহ একেবারে কমিয়ে দিয়েছেন। চট্টগ্রামের চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জে চালের আড়তের কয়েকজন বড় ব্যবসায়ীর কাছেও বিপুল পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে। উত্তরবঙ্গের মিলারদের যোগসাজশে তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়াচ্ছেন। এ কারণে চালের বাজারে স্থিতিশীলতা আসছে না।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসতে শুরু করায় আমদানি ও দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। কয়েকদিন আগেও পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০ টাকা। এখন ৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া রসুন ও আদার দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, সপ্তাহখানেক আগে এর দাম ছিল ৬০ টাকা, আমদানি পেঁয়াজের কেজি মানভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। দেশি রসুন কেজিতে ১০ টাকা কমে মানভেদে ৭০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গত সপ্তাহে যা ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। দেশি আদা কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, গত সপ্তাহে যা ছিল ২২০ থেকে ২৪০ টাকা।

প্রতিটি ভোগ্যপণ্য কেজিপ্রতি ৩-৫ টাকা বেড়েছে। সাদা মটর ৫৯ টাকা, মটর ডাল ৬০ টাকা, মসুর ডাল (চিকন) ১৩০ টাকা, মসুর ডাল (মোটা) ৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় গম বিক্রি হচ্ছে প্রতিমন ১ হাজার ৬৫০ টাকায়। অন্যদিকে সয়াবিন তেল প্রতিমন বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৬৮০ টাকা এবং পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬০০ টাকায়। চিনি প্রতিমন ৩ হাজার ৯৫০ টাকা, ভারতীয় মরিচ কেজি ৪৬৯ টাকা, হলুদ ১১০ টাকা, রসুন ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সরবরাহ সংকটের অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে সবজির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। শুক্রবার কাঁচাবাজারগুলোতে ফুলকপি ১০ টাকা বেড়ে ৩৫, পেঁপে ২৫, বাঁধাকপি ২৫, লাউ ৩০, মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা বিক্রি হয়। শিম কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ৪০ টাকায়। তাছাড়া প্রতিকজি বেগুন ৫০, শালগম ৩০, নতুন পেঁয়াজ ৪৫ এবং নতুন আলু ৩০ টাকায় বিক্রি হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম