চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী শিক্ষার্থী তৈরি করছি: অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী
প্রতিষ্ঠাতা ও উপাচার্য, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি
প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও উপাচার্য। বর্তমানে তিনি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের অন্যতম উপদেষ্টা, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব পরিষদ ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি। তিনি বাংলা একাডেমির অনারারি ফেলো এবং শিক্ষা, প্রশাসনিক ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একাধিক স্বর্ণপদক বিজয়ী।
যুগান্তর : আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত বলুন। বর্তমানে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়টি অনুষদ, বিভাগ এবং ইনস্টিটিউট রয়েছে। বর্তমানে আপনাদের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক সংখ্যার অনুপাত কত? শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যান্য কী সুবিধা রয়েছে?
ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী : ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (WUB) যুগোপযোগী, লক্ষ্যাভিমুখী ও মানসম্মত শিক্ষায় নিয়োজিত আছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মটো বা দর্শন হচ্ছে-Utilitarian and Quality Education for Economic Emancipation। সেই লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এবং ইউজিসির নীতিমালা অনুযায়ী ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এ গঠিত বিভিন্ন কমিটির পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য নিচের জরুরি বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে-
বিশ্ববিদ্যালয়টি অবকাঠামোগত চাহিদা পূরণের জন্য নিজস্ব জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত করছে। সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের জন্য জেনারেটর ও আইপিএস-এর ব্যবস্থা, লিফটের ব্যবস্থা, ক্লাসরুম এবং প্রয়োজনীয় ল্যাবসমূহ সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন সুবিধাও সৃষ্টি করা হয়েছে এবং সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রয়েছে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি অনুষদে (ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস স্টাডিজ, ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ফ্যাকাল্টি অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ) ১৩টি বিভাগ ও ২৪টি প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। তাছাড়া International Center for Collaborative Studies (ICCS) এবং Center of Excellence নামে দুটি ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। Mechatronics Engineering এবং এমবিই বা মাস্টার অব বিজনেস এডুকেশন নামের দুটো কোর্স প্রবর্তনে ডটই এ উপমহাদেশে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছে। আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিনিময় ও গবেষণা চুক্তি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের Center for Development, Entreprenurship and Institutional Studies-এর সঙ্গে গবেষণা চুক্তি হয়েছে। প্রকৌশল শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা এবং অভ্যন্তরীণ সমতার লক্ষ্যে পূর্বে অনুমোদিত ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কারিকুলাম পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও উন্নয়ন করা হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষক সংখ্যা ১৭১ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১৫৩ জনে উন্নীত করা হয়েছে। খণ্ডকালীন শিক্ষক সংখ্যা কম রাখা, শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে অব্যাহতভাবে বিভিন্ন জ্ঞানীগুণী ও অভিজ্ঞ বহিরাগত শিক্ষকদের দিয়ে মাঝে মাঝে ক্লাস নেওয়া ও সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করা, বুলেটিন প্রকাশ, গবেষণা উৎসাহিত করার জন্য সেন্টার অব এক্সিলেন্স সৃষ্টি ও মানসম্মত জার্নাল প্রকাশ, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ট্রেনিং, রিসার্চ মেথডলজি কোর্স প্রবর্তনসহ উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ অবারিত করা হয়েছে। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:২৫.০২ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর অনুপাত হচ্ছে ১:২৭.৯৭।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার, ব্রাউজিং, নেটওয়ার্কিং, সফটওয়ার, ডিজিটাল, সার্কিট, মাইক্রোপ্রসেসর, কমিউনিকেশন, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং, জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, স্ট্রাকচার, স্ট্রাকচারাল মেকানিক্স অ্যান্ড মেটেরিয়াল, হাইড্রোলজিসহ প্রয়োজনীয় সব ল্যাব সুবিধা সম্প্রসারণ এবং আধুনিকায়ন, লাইব্রেরির উত্তরোত্তর উন্নয়ন এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক বই, জার্নাল ও অন্যান্য পাঠ্য উপকরণের সমাহার ঘটিয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মননশীল মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে সহ-শিক্ষাকার্যক্রম হিসাবে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তথা বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বহিঃক্রীড়ার সুবিধা সম্প্রসারণ, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালন, বার্ষিক বনভোজন, দেশেবিদেশে শিক্ষা সফর, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের প্রসার, বিদ্যমান অ্যাডভেঞ্চার, ডিবেটিং, কালচারাল, ফটোগ্রাফি অ্যান্ড মিডিয়া, স্পোর্টস, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ট্রিপল-ই, সিএসই, ফার্মেসি, রিসার্চ, সাংস্কৃতিক ও ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ক্লাবকে আরও গতিশীল করা হয়েছে।
যুগান্তর : বর্তমান পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বেই শিক্ষার্থীরা আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য আপনাদের পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো সহযোগিতা আছে কিনা?
ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী : কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাবতীয় পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সর্বনিম্ন ফি ধার্যসহ শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি প্রায় ৮০-৯০ ভাগ ছাত্রছাত্রীকে কমপক্ষে ২০ ভাগ ও সর্বোচ্চ ১০০ ভাগ ফি মওকুফ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
যুগান্তর : এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে কিছু বলুন।
ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী : সার্বিক অগ্রগতির মধ্যে সংক্ষেপে বলা যায় ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্থায়ী সনদ পেয়েছে। পাঁচটি সমাবর্তন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। প্রায় ২০ হাজার গ্র্যাজুয়েট সফলতার সঙ্গে কর্মস্থানে কিংবা উদ্যোক্তা হিসাবে সম্পৃক্ত হতে পেরেছে। সর্বোপরি সমাজ, দেশ তথা জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে ও বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশকে সামান্য হলেও প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হয়েছে।
যুগান্তর : বিশ্ববিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত বলুন।
ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী : আমরা নিজস্ব জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাসে ২০১৮ সাল থেকে পাঠদানসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। ঢাকার উত্তরায় ১৭ নম্বর সেক্টরে লেকের পাড়ে নিজস্ব জমিতে আধুনিক স্থাপত্যবিন্যাসে নির্মিত ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর সুবিশাল স্থায়ী ক্যাম্পাস এক সবুজ স্নিগ্ধ পরিবেশে ঘেরা। মনমাতানো বাহারি ফুলের বুকে প্রজাপতি আর মৌমাছি খেলা করার দৃশ্য যে কোনো দর্শনার্থীকে আকৃষ্ট করে। স্টেট অব আর্টস ল্যাব ফ্যাসিলিটি ও প্রযুক্তি সন্নিবেশিত শ্রেণিকক্ষগুলোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশ করা হয়েছে। ডিজিটাল বোর্ড, প্রোজেক্টরসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সংযুক্ত আছে শ্রেণিকক্ষগুলোতে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাস ডিজিটালাইজড। লাইব্রেরিটি সম্পূর্ণ ওয়েবনির্ভর ও অটোমেশন প্রযুক্তিসম্পন্ন।
যুগান্তর : দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কী সুবিধা রয়েছে?
ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী : আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মেধা লালন। তাই মেধাবী কিন্তু আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা বৃত্তি, স্টাইপেন্ড, ফি ওয়েভার, এমনকি খণ্ডকালীন কাজের সুবিধা সৃষ্টি করে দিই। এমনিতে আমাদের ফিসের হার সারা দেশে সর্বনিম্ন। তার পরও বিভিন্ন বৃত্তি বাদ দিলে শিক্ষার্থীরা নামমাত্র ফি দিয়ে পড়াশোনা করে। যুগান্তর : বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে আপনারা কী কী ভূমিকা পালন করেন?
ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী : আমাদের এখান থেকে ডিগ্রি নেওয়ার পর কেউ যেন বেকার বসে না থাকে তার ব্যবস্থা আমরা করতে চাই। আমাদের সিলেবাসগুলো প্রায়োগিক ও বাস্তববাদী। পাশাপাশি ক্যারিয়ার কাউন্সিলের মাধ্যমে যাতে চাকরি বাজারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয় সে লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মেন্টরিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যার প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রায় ২০ হাজার উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর মধ্যে বেকার নেই বললেই চলে।
যুগান্তর : আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বলুন।
ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী : গ্র্যাজুয়েটদের জন্য ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। অর্থাৎ টিকে থাকতে হলে এবং সার্বিক উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখতে হলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ধারণার সাথে পরিচিত হতে হবে। শিক্ষার্থীদের এরই ভিত্তিতে প্রস্তুত করতে হবে। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে OBE curriculum-এর সঙ্গে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে সম্পৃক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের দক্ষ করে তুলতে প্রয়োজনীয় ট্রেনিং, কর্মশালা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।