কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপ্লব
চ্যাটবটের উত্থান ও ভবিষ্যৎ
প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির ফলে মানুষের জীবনে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে, এআইভিত্তিক চ্যাটবট প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবন, ব্যবসা ও গবেষণায় ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। ২০২২ সালে ওপেনএআই চ্যাটজিপিটি উন্মোচনের পর থেকে চ্যাটবট প্রযুক্তির বিস্তার লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
চ্যাটবটের জনপ্রিয়তা ও ব্যবহার : বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৯৮ কোটিরও বেশি মানুষ চ্যাটবট ব্যবহার করে এবং ২০২৪ সালে এর বাজারমূল্য ছাড়িয়ে যাবে ১ হাজার কোটি ডলার। ডিমান্ডসেইজের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চ্যাটবট সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে পণ্য ও সেবা বিক্রির ক্ষেত্রে, যা মোট ব্যবহারের ৪১ শতাংশ। এরপর রয়েছে গ্রাহক সহায়তা এবং বিপণন ক্ষেত্র। গবেষণায় দেখা গেছে, দুবছরের মধ্যে ২৫ শতাংশ কোম্পানির জন্য চ্যাটবট প্রধান প্রযুক্তি হয়ে উঠবে।
দ্রুত প্রসারমাণ বাজার
দ্য বিজনেস রিসার্চ কোম্পানির এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী চ্যাটবটের বাজারমূল্য ছিল ৮২৭ কোটি ডলার, যা ২০২৯ সালের মধ্যে ২ হাজার ৯৫০ কোটি ডলার ছাড়াবে। বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার হবে ৩০ শতাংশ। প্রযুক্তিবিদদের মতে, চ্যাটবটের সাফল্যের পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে, যেমন উন্নত পার্সোনালাইজেশন, শিল্পভিত্তিক ডিজাইন, ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সংযুক্তি এবং মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় চ্যাটবটের ব্যবহার বৃদ্ধি।
প্রযুক্তির অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ : এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের উন্নতির ফলে চ্যাটবট প্রযুক্তি আরও বুদ্ধিমান হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ভয়েসভিত্তিক চ্যাটবট, মাল্টি-প্ল্যাটফর্ম সমর্থন এবং স্মার্ট ডিভাইসে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট সংযোজন এ প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়িয়েছে।
শীর্ষ চ্যাটবটগুলোর প্রতিযোগিতা : বর্তমানে চ্যাটবট ব্যবহারের ক্ষেত্রে মেটা এআই শীর্ষস্থানে রয়েছে, যার ৫০ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে। এরপর ৩০, ২৭ এবং ১০ কোটি ব্যবহারকারী নিয়ে যথাক্রমে চ্যাটজিপিটি, গুগলের জেমিনি ও মাইক্রোসফটের কোপাইলট তালিকার শীর্ষ পাঁচে রয়েছে। ২০২৩ সালে মেটা এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট উন্মোচন করার পর এটি ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ওয়েবে একীভূত করা হয়েছে।
সার্চ ইঞ্জিনের ভূমিকার পরিবর্তন : আগে অনলাইনে তথ্য অনুসন্ধানের জন্য মানুষ মূলত গুগলের ওপর নির্ভর করত। কিন্তু চ্যাটবটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির ফলে অনেকেই এখন সরাসরি উত্তর পাওয়ার জন্য এআই চ্যাটবট ব্যবহার করছে। এর ফলে সার্চ ইঞ্জিনের প্রচলিত ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায়িক মডেলে পরিবর্তন আসতে পারে।
চ্যাটবট প্রযুক্তির অগ্রগতি বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি খাতের চিত্র বদলে দিচ্ছে। ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং দৈনন্দিন জীবনে চ্যাটবট এখন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠছে। প্রযুক্তির এ ধারাবাহিক উন্নতি ভবিষ্যতে আমাদের জীবনকে আরও সহজ, দক্ষ এবং গতিশীল করে তুলবে।