আলোর মানুষ
মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী
সুহাইল আহমদ
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যখন ঘোর অন্ধকার অগণিত মানুষের আত্মা জড়িয়ে ধরে, তখন কিছু মানুষ এসে সেই আঁধারে জ্বেলে দেয় দীপ্ত এক প্রদীপ। ঠিক তেমনি একজন ছিলেন মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)। একজন আলেম, একজন চিন্তক, একজন প্রজ্ঞার প্রতীক। তার জন্ম হয়েছিল ১৮৯৬ সালে, গোপালগঞ্জ জেলার নিভৃত গ্রাম গওহরডাঙ্গায়। ছোট্ট গ্রামের মাটি যেমন উর্বর, তেমনি ছিল তার হৃদয় জ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা ও মানবিক দায়িত্ববোধে পূর্ণ। পিতা মুন্সি আবদুল্লাহ ছিলেন সিপাহী বিদ্রোহের সৈনিক, আর এই বিদ্রোহী রক্তই হয়তো বয়ে এনেছিল তার মনের সাহস ও আত্মার দীপ্তি।
প্রথমে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা, তারপর প্রেসিডেন্সি কলেজ সবই তার পদচিহ্নে সাক্ষ্য দেয়, তবে তিনি বাঁধা পড়েননি পুঁথিগত শিক্ষার শৃঙ্খলে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি পা বাড়ান দেওবন্দের পথে, যেখানে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভীর সান্নিধ্যে নিজেকে গড়েন এক আধ্যাত্মিক যোদ্ধা হিসাবে।
দাওয়াত, দ্বীন, ও দরদে ভরা তার জীবন ছিল কেবল জ্ঞান অর্জনের নয় জ্ঞান বিতরণের। তিনি বিশ্বাস করতেন, একটি শিক্ষিত হৃদয়ই পারে অন্ধকার সমাজে আলো ছড়াতে। তাই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বহু মাদ্রাসা। প্রতিটি যেন এক-একটি জ্ঞানের বাতিঘর। জামিয়া কুরআনিয়া লালবাগ, গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসাসহ বহু দ্বীনি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তার কণ্ঠ ছিল নির্ভীক, তার কলম ছিল জাগরণের দীপ্ত শিখা। তিনি বিশ্বাস করতেন, আত্মিক পরিশুদ্ধিই জাতির মুক্তির চাবিকাঠি। সেই বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন সাধারণ মানুষের জন্য, উম্মাহর জন্য, ইসলামের জন্য।
১৯৬৯ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি বিদায় নেন ইহলোক থেকে। তাকে সমাহিত করা হয় তার প্রিয় গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে। আজও তার শিক্ষা, চিন্তা ও আদর্শ অগণিত আলেম-ওলামা, শিক্ষার্থী এবং মুসলিম সমাজকে পথ দেখিয়ে চলেছে। তিনি প্রমাণ করে গেছেন, আত্মিক উচ্চতা আর প্রজ্ঞার আলো মিলেই সৃষ্টি হয় সত্যিকার নেতার। এমন মানুষ শতাব্দীতে একবার জন্মায়, আর ইতিহাস চিরকাল তাদের স্মরণে রাখে, হৃদয়ে স্থান দেয়।
