
প্রিন্ট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৭ পিএম
গরিবের মুখে হাসি ফোটে সদাকাতুল ফিতরে

মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
অফুরন্ত রহমত, বরকত, মাগফিরাত আর নাজাতের মাস রমজান শেষ হয়ে যাচ্ছে। রমজানের আমলভরা দিনগুলো বিদায় নিয়ে যাচ্ছে। মুমিনের হৃদয় কাঁদছে। তবে রমজান রেখে যাচ্ছে আমাদের জন্য মহান শিক্ষা। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা করে আমরা শিখেছি সাম্য, মৈত্রী, সমবেদনা আর সহমর্মিতা। নবিজি (সা.) বলেছেন-‘রমজান হলো সমবেদনা ও সহমর্মিতার মাস।’ (বায়হাকি)। আমাদের মাঝে তৈরি হয়েছে সহমর্মিতা আর সম অনুভব।
রমজান মাসে ধনীরা গরিবের দুঃখ বুঝেছে; ক্ষুধায় জঠর জ্বালা অনুভব করেছে। তাই তো ইসলামে ধনীর পক্ষ থেকে গরিবের জন্য সদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ করা হয়েছে। সদাকাতুল ফিতর ইসলামের অনন্য একটি ইবাদত; যে ইবাদতে গরিবের মুখে হাসি ফোটে। রমজানের শেষে ঈদুল ফিতরের আগে এ ইবাদত পালন করতে হয়-অর্থাৎ সদাকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। সদাকাতুল ফিতর হলো রোজার ক্ষতি পূরণ। তা ছাড়া সদাকাতুল ফিতরের কারণে ধনী-গরিব উভয়ের মধ্যে সাম্য তৈরি হয়। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি হয়। ধনীদের মতো গরিবরাও উত্তম পোশাক পরতে পারে। ভালো খাবার খেতে পারে। সমাজের অসহায় মানুষগুলোর মনে ঈদের আনন্দ বয়ে যায়, হৃদয়ে সুখ অনুভব হয়, মুখে হাসি ফোটে। নবিজি (সা.) বলেছেন, সদাকাতুল ফিতর আদায় করার আগ পর্যন্ত রমজানের রোজা আসমান জমিনের মাঝে ঝুলন্ত থেকে যায়।
ইসলামের বিধান হলো, ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময় যে ব্যক্তির কাছে কমপক্ষে সাড়ে ৫২ তোলা রুপা বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সমমূল্য পরিমাণ সম্পদ থাকবে তার ওপর সদাকাতুল ফিতর আবশ্যক বা ওয়াজিব।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক ঘোষিত এবারের নির্ধারিত ফিতরার পরিমাণ হচ্ছে জনপ্রতি সর্বনিু ফিতরা ১১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২,৮০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইসলামে নির্দেশিত সদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ হলো এক সা’ খাদ্যদ্রব্য, এক সা’ খেজুর, এক সা’ যব বা এক সা’ কিশমিশ। এক সা’ সমপরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন কেজি।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, নবিজি (সা.) যখন আমাদের মধ্যে ছিলেন তখন আমরা ছোট-বড়, মুক্ত ক্রীতদাস সবার পক্ষ থেকে সদাকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা’ খাদ্য অর্থাৎ এক সা’ পনির বা এক সা’ যব বা এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ কিশমিশ। (মুসলিম)। উত্তম হলো, ঈদের দিন সকালে ঈদের মাঠে যাওয়ার আগে সদাকাতুল ফিতর আদায় করা।
প্রিয় পাঠক! আপনার নিজের পক্ষ থেকে ও আপনার নাবালেগ সন্তানদের পক্ষ থেকেও সদাকাতুল ফিতর আদায় করা আবশ্যক। আপনার ওপর যদি সদাকাতুল ফিতর আবশ্যক নাও হয় তবুও আপনি সদাকাতুল ফিতর আদায় করতে পারবেন, এ মহাপুণ্য অর্জন করতে পারবেন। সদাকাতুল ফিতর অসহায়-গরিবের অধিকার। কোনো মসজিদ বা সাধারণ মাদ্রাসায় দান না করে গরিবের অধিকার গরিবদের বুঝিয়ে দিন। ঈদের দিন খুশির দিন। ঈদের আনন্দ হোক ধনী-গরিব সবার প্রাণে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে সদাকাতুল ফিতর আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : খতিব, গাউসুল আজম জামে মসজিদ, সেক্টর-১৩, উত্তরা, ঢাকা