Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

জান্নাতের নিয়ামতরাজি

Icon

মো. আব্দুল ওহাব

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলামের অন্যতম মৌলিক বিশ্বাস হলো পরকালীন জীবন, যেখানে মানুষের পরিণতি জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারিত হবে। জান্নাত ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী পরিপূর্ণ শান্তি, সুখ এবং অনন্ত আনন্দের স্থান, যেখানে আল্লাহর অনুগ্রহে মুমিনরা চিরকালীন সুখ উপভোগ করবে। জান্নাত, ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা, মুসলিমদের জন্য পরকালীন জীবনে পরিপূর্ণ শান্তি, সুখ এবং প্রাপ্তির স্থান হিসাবে বিবেচিত। আল কুরআন ও হাদিসে জান্নাতের নিয়ামতগুলো (আনন্দ, সুখ, এবং অন্যান্য সাফল্য) সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। জান্নাতের নিয়ামত, মুমিনদের জন্য এক অনন্ত সুখের অবস্থান, যেখানে তারা চিরকাল থাকবে এবং কোনো ধরনের দুঃখ-কষ্ট তাদের স্পর্শ করবে না। নিম্নে কুরআন হাদিসের আলোকে জান্নাতের নিয়ামতরাজির সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হলো-

শারীরিক এবং মানসিক সুখ

আল কুরআনে জান্নাতের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সেখানে মানুষ কোনো ধরনের দুঃখ-দুর্দশায় পড়বে না। জান্নাতে গিয়ে মুমিনরা চিরকাল সুখী হবে। যেমন-আল কুরআনে বলা হয়েছে, ‘এখানে তারা কোনো ক্লান্তি অনুভব করবে না এবং তাদের কখনো এখান থেকে বের হতে হবে না’ (সূরা আল-হিজর : ৪৮)। এ আয়াতে কারিমায় স্পষ্ট করে জানাচ্ছে যে, জান্নাতের বাসিন্দারা কোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক কষ্ট অনুভব করবেন না। তারা অনন্ত সুখে থাকবেন এবং কোনো ধরনের দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হবেন না।

খাদ্য এবং পানীয়

জান্নাতের নিয়ামতগুলোর মধ্যে খাদ্য এবং পানীয়ের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘জান্নাতের একটি ফলের মধ্যে যে রস রয়েছে, তা পৃথিবী ও আকাশের সব পানীয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ (সহিহ মুসলিম)।

আল কুরআনেও জান্নাতে মুমিনদের জন্য বিশেষ ধরনের খাবার ও পানীয়ের কথা বলা হয়েছে। যেমন-সূরা আলে ইমরানে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তাদের জন্য সেখানে এমন ফল থাকবে, যা তারা চাইবে এবং তাদের জন্য এমন মদ থাকবে যা তাদের মনোরঞ্জন করবে এবং সেখানে তাদের জন্য সবকিছু থাকবে যা তাদের প্রীত করবে’ (সূরা আলে ইমরান : ১৩৩)। এখানে বিশেষভাবে বোঝানো হচ্ছে যে জান্নাতে মুমিনদের জন্য এমন সুস্বাদু খাবার এবং পানীয় থাকবে, যা পৃথিবীতে কখনো কেউ খায়নি।

সৌন্দর্য ও পরিবেশ

জান্নাতের সৌন্দর্য নিয়ে কুরআন এবং হাদিসে ব্যাপক বর্ণনা রয়েছে। জান্নাতের অদ্ভুত সৌন্দর্য এবং অপূর্ব দৃশ্যাবলি, যা পৃথিবীর সৌন্দর্য থেকে একদম আলাদা, তা কখনো বর্ণনা করা সম্ভব নয়। কুরআনে জান্নাতের বাগান, নদী, সুবর্ণ রাজপ্রাসাদ এবং মূল্যবান রত্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন-আল্লাহতায়ালা পবিত্র আল কুরআনে বলেন, ‘তাদের জন্য সেখানে এমন বাগান থাকবে যার নিচে নদী প্রবাহিত হয়’ [সূরা মুহাম্মাদ : ১৫)।

এখানে নদী ও বাগানের মাধ্যমে জান্নাতের অপূর্ব সৌন্দর্য বর্ণনা করা হয়েছে। যে স্থানটি শীতল, সুগন্ধিত, এবং প্রশান্তিতে পূর্ণ এমন এক পরিবেশ যেখানে মুমিনরা শান্তির পূর্ণতা লাভ করবে। জান্নাতে প্রবাহিত নদী এবং বৃক্ষগুলো তাদের জন্য বিশ্রামের এবং আনন্দের স্থান হবে। এতে জান্নাতের চিত্র উজ্জ্বলভাবে ফুটে উঠেছে, যেখানে অগণিত নদী, বাগান এবং মূল্যবান রত্নরাশি থাকবে।

অবসরের আনন্দ

জান্নাতে মানুষ একে অপরের সঙ্গে পরিপূর্ণ আনন্দের সময় কাটাবে, তারা কোনো কাজের চাপ অনুভব করবে না। একে অপরের সঙ্গে বসে সুস্বাদু খাবার উপভোগ করবে এবং আল্লাহর প্রশংসা করবে। হাদিসে এসেছে, ‘জান্নাতের অধিবাসীরা একে অপরকে দেখতে পাবেন এবং তাদের মুখে এক ধরনের আনন্দ ফুটে উঠবে, তারা একে অপরকে সুসংবাদ দেবে’ (সহিহ বুখারি)।

পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে মিলন

জান্নাতে মুমিনরা তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হবে, যারা সবাই একসঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পবিত্র আল কুরআনে বলা হয়েছে, ‘এবং যারা ইমান এনেছে এবং তাদের সন্তানদেরও ইমানের মধ্যে অনুসরণ করেছে, তাদেরকে আমরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে মিলিত করব’ (সূরা আত-তুর : ২১)। এটি প্রমাণ করে যে, জান্নাতে পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গও থাকবে এবং তারা একসঙ্গে সুখী জীবন কাটাবে।

আল্লাহর দর্শন

জান্নাতের সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলো আল্লাহর দর্শন। এটি এমন একটি পুরস্কার, যা পৃথিবীতে অর্জন করা সম্ভব নয়। হাদিসে এসেছে, ‘যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা আল্লাহকে দেখতে পাবে এবং এটি তাদের জন্য সর্বোত্তম নিয়ামত হবে’ (সহিহ মুসলিম)।

দেহের পূর্ণ সুস্থতা

জান্নাতে মানুষ চিরকাল থাকবে এবং তাদের দেহ থাকবে পূর্ণ সুস্থ, অপরিবর্তনীয় এবং চিরকালীন। তারা কখনো বৃদ্ধ, অসুস্থ বা দুর্বল হবে না। হাদিসে এসেছে, ‘জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি একেবারে তাজা, যুবক এবং সুস্থ থাকবে’ (সহিহ বুখারি)। এটি নির্দেশ করে যে, জান্নাতে শরীরের কোনো দুঃখ-কষ্ট থাকবে না এবং তারা সর্বদা তরুণ, সুস্থ এবং শক্তিশালী থাকবে। জান্নাতের অধিবাসীরা সর্বদা সুন্দর এবং আকর্ষণীয় অবস্থায় থাকবেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম