Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

শিশুর প্রতি নবিজির ভালোবাসা

Icon

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মহানবি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’। তিনি ছিলেন আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। মুহাম্মাদ (সা.) ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ বাবা, শ্রেষ্ঠ ভাই, শ্রেষ্ঠ স্বামী, সেরা অভিভাবক এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। শিশুদের প্রতি ছিল তার অকৃত্রিম ভালোবাসা। হৃদয় উজাড় করা প্রেম। নিম্নে শিশুদের প্রতি নবিজির অনুপম ভালোবাসার কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো-

শিশুদের চুমু দেওয়া

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) একবার হাসান ইবনে আলি (রা.)কে ভালোবেসে চুমু দিলেন। আকরা ইবনে হাবেস আত-তামিমি (রা.) সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এটি দেখে বললেন, আমারও তো দশজন সন্তান রয়েছে, আমি তো তাদের কাউকে কখনো চুমু দেইনি। রাসূল (সা.) তার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘যে দয়া করে না, তার প্রতিও দয়া করা হয় না।’ (বুখারি)।

ঘোড়া হয়ে পিঠে চড়ান

আব্দুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ (রা.) বলেন, এক এশার নামাজে রাসূল (সা.) হাসান অথবা হুসাইনকে কোলে নিয়ে আমাদের দিকে এলেন। রাসূল (সা.) নামাজের উদ্দেশ্যে সামনে অগ্রসর হয়ে তাকে রেখে দিলেন। তারপর নামাজের জন্য তাকবির বলে নামাজ শুরু করেন। কিন্তু তিনি নামাজে একটি সিজদা খুব বেশি লম্বা করলেন। আমার পিতা শাদ্দাদ (রা.) বলেন, আমি আমার মাথা উঠিয়ে দেখলাম, ওই ছেলেটি রাসূল (সা.)-এর পিঠের ওপর আর তিনি সিজদারত। আমি আবার সিজদায় ফিরে গেলাম। রাসূল (সা.) নামাজ শেষ করলে লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি নামাজে একটি সিজদা এত লম্বা করলেন, যাতে আমরা ধারণা করলাম, হয়তো কোনো ব্যাপার ঘটে থাকবে অথবা আপনার ওপর ওহি নাজিল হয়েছে! তিনি বলেন, ‘তোমরা যা ধারণা করছ এর কোনোটিই নয়; বরং আমার এ সন্তান আমাকে বাহন বানিয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি উঠতে অপছন্দ করলাম, ...।’ (নাসাঈ)।

হাসান ও হুসাইন (রা.) অনেক সময় রাসূল (সা.)-এর পিঠে চড়ে বসতেন, তাকে ঘোড়া বানিয়ে তারা খেলতেন। একদিন এরকম এমন এক চমৎকার দৃশ্য দেখে এক সাহাবি মজা করে বলে উঠলেন, ‘বৎস! তুমি দারুণ সাওয়ারি পেয়েছ! নবিজি (সা.) তার এই কথা শুনে উত্তর দিলেন, আরোহীও দারুণ! (তিরমিযী ৩৭৪৬)।

শিশুদের সঙ্গে হাস্যরস

আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, ‘রাসূল (সা.) ছিলেন সব থেকে সুন্দর চরিত্রের মানুষ। আমার একটি ছোট ভাই ছিল। তার নাম ছিল আবু উমাইর। সে ছিল সদ্য দুধ ছাড়ানো শিশু। সে যখন রাসূল (সা.)-এর কাছে আসত, রাসূল (সা.) তাকে স্নেহভরা কণ্ঠে বলতেন, ‘হে আবু উমাইর, কোথায় তোমার নুগাইব?’ আবু উমাইর একটি পাখি নিয়ে খেলতেন। আর সে পাখিটির নাম ছিল নুগাইব। (সহিহ বুখারি : ৬২০৩)। এ কারণেই রাসূল (সা.) তাকে মজা করে বলতেন, হে আবু নুগাইব। আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসূল (সা.) প্রায়ই আমাকে, ‘হে দুই কানওয়ালা’ বলে ডাকতেন।’ (আবু দাউদ : ৫০০২)।

দৌড় প্রতিযোগিতা

নবিজি (সা.), আব্বাস (রা.)-এর পরিবারের আব্দুল্লাহ, উবাইদুল্লাহসহ আরও অনেককে এক সারিতে দাঁড় করাতেন। এরপর বলতেন, ‘যে আমার কাছে প্রথমে দৌড়ে আসবে, তার জন্য এ পুরস্কার।’ রাসূল (রা.)-এর কথা শুনে তারা প্রতিযোগিতা করে দৌড় দিত। কেউ এসে তার পিঠে চড়ে যেত, কেউ বা তার বুকে চড়ে উঠত। রাসূল (সা.) তাদের চুমু খেতেন। কাউকে জড়িয়ে ধরতেন’। (মুসনাদে আহমাদ : ১৮৩৯)।

সালাম দেওয়া

আনাস (রা.) বলেন, ‘কিছু শিশু খেলাধুলারত ছিল। রাসূল (সা.) তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাদের সালাম দিলেন।’ (সহিহ বুখারি : ৬২৪৭)। আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসূল (সা.) আনসারদের দেখতে আসতেন। আনসারদের কারও ঘরে এলে সে ঘরের শিশুরা রাসূল (সা.)-এর চারপাশ মাতিয়ে রাখত। তিনি শিশুদের সালাম দিতেন। তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তাদের জন্য দোয়া করতেন।’ (সহিহ বুখারি : ২৫০২)।

শিক্ষা দান

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি একদিন রাসূল (সা.)-এর পেছনে (বাহনের ওপর) বসা ছিলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘হে বালক, আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিচ্ছি, আল্লাহর বিধানগুলোর হেফাজত করো। তিনি তোমাকে হেফাজত করবেন। আল্লাহর বিধানগুলোর হেফাজত করো, তাকে তোমার পাশে পাবে। কিছু চাইতে হলে একমাত্র আল্লাহর কাছে চাও। সাহায্য কামনা করতে হলে, একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য কামনা করো।’ (তিরমিজি : ২৫১৬)।

নামাজ সংক্ষিপ্ত করা

রাসূল (সা.) বলেন, ‘আমি নামাজ দীর্ঘায়িত করার ইচ্ছায় দাড়াতাম; কিন্তু যখন কোনো শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতাম, তখন নামাজ সংক্ষিপ্ত করতাম...।’ (বুখারি) রাসূল (সা.) ফাতিমা (রা.)কে খুবই স্নেহ করতেন। বলতেন, ‘ফাতেমা আমার কলিজার টুকরা’। শিশু ফাতেমা (রা.) যখন তার কাছে যেতেন, তিনি উঠে দাঁড়াতেন এবং ফাতেমার হাত ধরে চুমু দিয়ে তাকে মজলিসে বসাতেন।’ (আবু দাউদ)।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম