হালাল ব্যবসা শ্রেষ্ঠ ইবাদত
কেএম ছালেহ আহমদ জাহেরী
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে মনোনীত সর্বজনীন ও পূর্ণাঙ্গ একটি জীবনব্যবস্থার নাম হলো ইসলাম। তাই সৃষ্টিজগতের সব ক্ষেত্রেই রয়েছে ইসলামের নির্দিষ্ট নীতিমালা। আয়-উপার্জন, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ঘটেনি এর ব্যত্যয়। ইরশাদ হচ্ছে, আমি এ কুরআনে কোনো কিছুই অবর্ণিত রাখিনি। (সূরা মায়িদা : ৩৮)। মানবতার পথপ্রদর্শক রাসূল (সা.) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘অন্য ফরজ আদায়ের পর হালাল রুজি অন্বেষণ করাও একটি ফরজ।’ (বায়হাকি)। আল কুরআনে বহু স্থানে হালাল উপায়ে জীবিকা অর্জনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সূরা আন-নুরের ৩৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘এমন বহু লোক আছে, ব্যবসা ও কেনাবেচা যাদের আল্লাহর স্মরণ, সালাত কায়েম ও জাকাত আদায় থেকে বিরত রাখতে পারে না।’ ব্যবসায় যেসব বিষয় ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে তুলে ধরা হলো-
ধোঁকা-প্রতারণা ও ফাঁকিবাজি
একদিন রাসূল (সা.) একজন খাদ্য-বিক্রেতার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি খাদ্যের ভেতরে হাত প্রবেশ করে দেখলেন, খাদ্যগুলো ভেজা বা নিুমানের। রাসূল (সা.) বললেন, হে পণ্যের মালিক। এটা কী? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল। এতে বৃষ্টি পড়েছিল। রাসূল (সা.) বললেন, তুমি এগুলো খাবারের স্তূপের ওপর রাখলে না কেন? তাহলে লোকরা দেখতে পেত। যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মত নয়। (মুসলিম : ১০২)।
ওজনে কম দেওয়া
আল্লাহতায়ালা বলেন, ধ্বংস-যারা পরিমাপে কম দেয়, তাদের জন্য। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে। আর যখন তাদের মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। (সূরা মুতাফফিফিন : ১-৩)। রাসূল (সা.) বলেন, যখন কোনো সম্প্রদায়ের লোকরা ওজনে বা মাপে কম দেয়, তখন শাস্তিস্বরূপ তাদের খাদ্যশস্য উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং দুর্ভিক্ষ তাদের গ্রাস করে। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব : ৭৮৫)।
মিথ্যা শপথ করা
মিথ্যা ধ্বংস করে মানবতাবোধকে ঘটায় নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয়। যার ওপর রয়েছে সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ। রাসূল (সা.) বলেন, কেয়ামত দিবসে আল্লাহ তিন ব্যক্তির সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলবেন না, তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। তাদের একজন হলো, যে তার ব্যবসায়িক পণ্যকে মিথ্যা কসম খেয়ে বিক্রি করে। (মুসলিম : ১০৬)।
সুদ মেশানো
কবিরা গুনাহের মধ্যে অন্যতম একটি সুদ। এর পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, যারা সুদ খায়, তারা তার মতো (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটি এ জন্য যে, তারা বলে, বেচাকেনা সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ বেচাকেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। (সূরা বাকারা : ২৭৫)।
কাউকে ঠকানো
আল্লাহতায়ালা বলেন, হে ইমানদাররা! তোমরা একে অপরের মাল অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয়, তা বৈধ। (সূরা নিসা : ২৯)। এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে অভিযোগ করল, সে বেচাকেনাতে প্রতারিত হয় বা ঠকে। রাসূল (সা.) বললেন, ‘যখন তুমি বেচাকেনা করবে, তখন বলে দেবে, কোনো প্রতারণা বা ঠকানোর দায়িত্ব আমি নেব না। তোমার জন্য তিনদিন পর্যন্ত পণ্য ফেরত দেওয়ার অধিকার রয়েছে। (বুখারি : ৬৯৬৪)।