সংঘাত নিরসনে ধর্মীয় নির্দেশনা
মুফতি তাজুল ইসলাম কাউসার
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। এরপরও পৃথিবীতে দেখা যাচ্ছে মুসলমানের ভেতরে অথবা এক মুমিনের সঙ্গে আরেক মুমিনের ঝগড়া-বিবাদ, মনোমালিন্য, আদর্শের অমিল ছাড়াও অনেক মতবিরোধ দেখা দেয়। আবহমান কাল থেকে আজ পর্যন্ত এ অবস্থা আমরা অবলোকন করছি। এ সংঘাত নিরসনে যারা ভূমিকা পালন করবে তাদের মর্যাদা হবে নিয়মিত ছিয়াম পালনকারী ও রাত জাগরণকারী মুমিনের চেয়েও উত্তম।
যেমন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন-‘আমি তোমাদের সিয়াম-সালাত ও সদকার চেয়েও উত্তম কোনো বিষয়ের খবর দিব কি? আর তা হলো- পারস্পরিক বিবাদ মীমাংসা করে দেওয়া। কেননা পরস্পরের বিবাদ দ্বীনকে ছাফকারী’ (আল হাদিস)
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, তাদের বেশিরভাগ গোপন পরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই। কিন্তু দান-সদকা, সৎ কাজ অথবা মানুষের মাঝে আপস করার নির্দেশ দেওয়ার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। আর যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় এ কাজ করবে আমি তাকে অতি শিগগির মহা প্রতিদান দান করব। (সূরা : নিসা, আয়াত : ১১৪)
হজরত সাহল বিন সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, কোবাবাসী বনু আমর বিন ‘আওফ-এর (মুসলমানরা) পরস্পরে লড়াইয়ে লিপ্ত হলো। এক পর্যায়ে তারা পরস্পরের প্রতি পাথর নিক্ষেপ শুরু করল। খবর পেয়ে রাসূল (সা.) সবাইকে বললেন, তোমরা আমাদের সঙ্গে চল। আমরা তাদের মধ্যে সন্ধি করে দেব’ (বুখারি হা/২৬৯৩)।
অতঃপর তিনি গেলেন ও তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিলেন। অতঃপর ফিরে এলেন। তাতে সালাত কাজা হওয়ার উপক্রম হলো। তখন মুসল্লিরা আবুবকরকে ইমামতির জন্য এগিয়ে দিল’ (বুখারি হা/৬৮৪)
মুমিনদের মাঝে সংঘাত নিরসনের চমৎকার নীতিমালা আল্লাহ পবিত্র কুরআনে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের সূরা হুজরাতের ৯ নম্বর আয়াত যদি আমরা অনুসরণ করি তাহলে সংঘাত সহজে সমাধান করতে পারি। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন,
‘আর মুমিনদের দু’দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও; অতঃপর তাদের একদল অন্য দলের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করলে, যারা বাড়াবাড়ি করে তাদের বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না তারা আল্লাহ্র নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। তারপর যদি তারা ফিরে আসে, তবে তাদের মধ্যে ইনসাফের সঙ্গে আপস-মীমাংসা করে দাও এবং ন্যায়বিচার কর। নিশ্চয় আল্লাহ্? ন্যায়বিচারকদের ভালোবাসেন। (সূরা হুজরত)।
এ আয়াতের মূল কথা হচ্ছে, যদি মুমিনদের দুপক্ষের মাঝে মতানৈক্য বা মতভেদ দেখা দেয় তখন তৃতীয় আরেকটি মুমিন দল তাদের ভেতরে মীমাংসা করবে। আর মীমাংসা করতে গিয়ে যে সন্ধি অথবা শর্ত যদি একপক্ষ অমান্য করে, তাহলে মীমাংসা করতে যাওয়া পক্ষসহ দুপক্ষ একত্রিত হয়ে এই বিদ্রোহী পক্ষকে শায়েস্তা করবে। এরপর এ বিদ্রোহ পক্ষ যদি ফিরে আসে, তওবা করে তখন তাকে গ্রহণ করবে অথবা তার সব ভুল ক্ষমা করে দেবে।
মনে রাখতে হবে, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করে, তার শাস্তি হলো জাহান্নাম। সেখানেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন’ (নিসা ৪/৯৩)। কিন্তু এর দ্বারা বিদ্রোহী ও সমাজ বিরোধীদের ছাড় দেওয়া বুঝায় না। কেননা, অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে জাতি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তোলন করল, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’। (মুসলিম হা/১০১)
অর্থাৎ অন্যায়ভাবে যে বিদ্রোহ করে, সে আর মুসলিম সমাজভুক্ত থাকে না। তাকে শাস্তি পেতেই হবে। আর এটা না থাকলে তো পাপীরা পাপ করেই যাবে। অতএব, সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’ নীতি বজায় রাখতে হবে। তাদের ওপর দণ্ডবিধি কার্যকর করতে হবে।
মূল কথা হচ্ছে, একপক্ষ হঠকারী হলে তাকে দমনের জন্য শক্তিশালী তৃতীয় পক্ষ থাকতে হবে এবং তাদেরকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ও সুবিচার করতে হবে। এটাই হচ্ছে মুমিনের দায়িত্ব।