ইসলামে ধৈর্যের পুরস্কার
মো. সাইফুল মিয়া
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ধৈর্য মানবচরিত্রের অন্যতম বিশেষ গুণ। একজন মানুষ সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য ধৈর্যশীল হওয়া প্রয়োজন। হতাশগ্রস্ত মানুষ সাফল্যের দেখা পায় না। ধৈর্যশীল ব্যক্তি সফলতার চরম শিখরে আরোহণ করে। পার্থিব জীবনে সুখ-দুঃখ অনিবার্য। মহান আল্লাহ বান্দাকে পরীক্ষা হিসাবে মাঝে মাঝে বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবতের সম্মুখীন করেন। বান্দা এ অবস্থায় হতাশ না হয়ে আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখে এবং ধৈর্য ধারণ করে। বান্দার এ গুণাবলি তার পরবর্তী সফলতার পথকে সুগম করে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বহু জায়গায় ধৈর্যশীল বান্দার জন্য অগণিত পুরস্কারের সুসংবাদ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং ধৈর্য ধারণে প্রতিযোগিতা কর।’ (সূরা আল-ইমরান, আয়াত : ২০০)।
মানবজীবনে আমরা সফলতা অর্জন করতে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকি। কিন্তু আমরা ভুলে যাই সফলতার পথে ধৈর্য অপরিহার্য। কারণ মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাহায্য করেন। সুতরাং দেরিতে হলেও সফলতা নিশ্চয়ই আসবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) একবার আনসারি কিছু সাহাবিকে বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরে আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কখনো তোমাদের দান করা হবে না। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭০)।
মহান আল্লাহ দুনিয়াতে বান্দাকে ধন-সম্পদ, জীবন এবং ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। মহান আল্লাহর প্রতি বান্দা কতটা ভরসা করেন তা তখন প্রমাণিত হয়। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু ধন-প্রাণ এবং ফসলের ক্ষতির দ্বারা পরীক্ষা করব; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫)।
তাই জীবনের কঠিন মুহূর্তেও ধৈর্য ধরতে হবে এবং নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫৩)।
দুনিয়ায় যারা ধৈর্য ধারণ করবে মহান আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দেবে। মানুষ স্বভাবত শয়তানের ধোঁকায় পাপ কাজে লিপ্ত হয়। কিন্তু ধৈর্যশীল বান্দার আল্লাহর প্রতি অগাধ আস্থা ও ভয়ের প্রভাবে পাপ করার পর অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে। তাতে মহান আল্লাহ খুশি হন এবং ধৈর্যশীল বান্দার গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করেন।
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিম ব্যক্তির ওপর যেসব বিপদ-আপদ আসে এর দ্বারা আল্লাহ তার পাপ মোচন করে দেন। এমনকি যে কাঁটা তার শরীরে ফোটে এর দ্বারাও।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪০)।
দুনিয়ার জীবন মুমিনের জন্য পরীক্ষা ক্ষেত্র। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত মহান আল্লাহ বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করবেন। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, যতক্ষণ না আমি জেনে নেই তোমাদের মধ্যে কে জিহাদকারী ও ধৈর্যশীল এবং আমি তোমাদের কার্যাবলি পরীক্ষা করি।’ (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত : ৩১)। দুনিয়ার কৃতকর্মের দ্বারা পরকালে জান্নাত ও জাহান্নাম নির্ধারণ করা হবে। ধৈর্যশীল বান্দার পুরস্কার হিসাবে পরকালে পাবে জান্নাত।
এ প্রসঙ্গে এক হাদিসে এসেছে আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমার মুমিন বান্দার জন্য আমার কাছে জান্নাত ব্যতীত অন্য কোনো পুরস্কার নেই, যখন আমি তার দুনিয়ার প্রিয়তম কাউকে কেড়ে নেই এবং সে নেকির নিয়তে ধৈর্য ধারণ করে।’ (বুখারি, হাদিস : ১২৫২)।
সুতরাং ইহকালে সফলতা ও সমৃদ্ধি এবং পরকালে মুক্তির জন্য ধৈর্যশীল হওয়া প্রয়োজন। মহান আল্লাহ আমাদের চরিত্রে এ মহৎ গুণের বিকাশ ঘটানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।