শীতকাল ইবাদতের সুবর্ণ সুযোগ

তাহমিনা আক্তার
প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

হেমন্তের শিশিরস্নাত সকাল কিংবা বিকালের ঝিরঝিরে বাতাস আমাদের কাছে শুধুই শীতের আগমনী বার্তা বা ঋতু বৈচিত্র্যের নিদর্শন। কিন্তু মুমিনদের জন্য ঋতুর এ পরিবর্তন অফুরন্ত রহমত নিয়ে আসে। হেমন্তের বিদায়ক্ষণে শীত বরণের প্রস্তুতি চলছে প্রকৃতিতে। শীতও যেন প্রস্তুত সবাইকে ‘হিম’ চাদরে জড়িয়ে নিতে। হেমন্তের ঝিরঝির বাতাস শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে ইবাদতের মৌসুম আসছে সেটারই জানান দিচ্ছে। মুমিনদের জন্য রমজান মাসের পর ইবাদতের উত্তম মৌসুম শীতের দিনগুলো। রাসূল (সা.) বলেন, ‘শীতকাল হলো মুমিনের বসন্তকাল’-(মুসনাদে আহমাদ)।
খলিফা হজরত ওমর (রা.) বলেছেন, ‘শীত মুমিনের গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ)’। রাসূল (সা.) বলেন, ‘শীতের গনিমত হলো দিনে রোজা রাখা।’-(সুনানে তিরমিজি)। শীত তো এমন গনিমত যা কোনো রক্তপাত, ক্ষয়ক্ষতি, পরিশ্রম ছাড়াই অর্জন করা যায়। অন্য বর্ণনায় বলেছেন, ‘শীতের রাতগুলো বড় হওয়ায় দীর্ঘ সময় নামাজে কাটানো যায়। আর দিন ছোট হওয়ায় বেশি বেশি নফল রোজা রাখা যায়’।-(বায়হাকি) শীতকাল নফল রোজা পালনের সুবর্ণকাল। আমরা চাইলেই খুব সহজে সপ্তাহিক, মাসিক যে রোজাগুলো সেগুলো রাখতে পারি। কাজা রোজা থাকলে তা আদয়ের জন্যও শীত উপযোগী। কুরআনের ভাষায়, ‘আল্লাহ দিন ও রাতের আবর্তন ঘটান, নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষা রয়েছে’-(সূরা নুর; ৪৪)। সাহাবায়ে কেরামরাও শীতের জন্য অপেক্ষা করতেন। শীত এলে খুশি হতেন। প্রখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘হে প্রিয় শীত! তোমাকে স্বাগতম। কেননা তা বরকত বয়ে আনে। রাতগুলো দীর্ঘ হয় ফলে কিয়ামুল লাইলের জন্য সহায়ক এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখা সহজ।’ (আল মাকাসিদুল হাসানা, হাদিস ২৫০)।
মুমিনের বসন্ত শীত আসছে। আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে ইবাদতের জন্য, মানবসেবার জন্য। শীতের রাত লম্বা হওয়ায় আমরা চাইলেই পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে রাতের কিছুটা সময় আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য রাখতে পারি, কিয়ামুল লাইল আদায় করার চেষ্টা করতে পারি। তাহাজ্জুদের মাধ্যমে রবের সঙ্গে বান্দার সরাসরি সম্পর্ক হয়, জমিনের খুব নিকটবর্তী আসমানে এসে তিনি বান্দাদের আহ্বান করতে থাকেন। অবশ্য শীতকালে তুলনামূলক অলসতা কাজ করে। কিন্তু মনে রাখা উচিত, অলসতা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। মুমিন হবে প্রোডাক্টিভ। তাছাড়া আমরা যথাসাধ্য গরিব অসহায়দের শীতবস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতে পারি। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে মুমিন অন্য বিবস্ত্র মুমিনকে কাপড় পরিয়ে দিল, মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে জান্নাতের সবুজ রেশমি কাপড় পরিয়ে দেবেন’। (তিরমিজি হাদিস; ২৪৪৯)। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের এ বিশাল সুযোগকে যেন আমরা সবাই একাগ্রতার সঙ্গে কাজে লাগাতে পারি সে তৌফিক চাই! আমিন।