অল্প আমল, অধিক সওয়াব
চাশতের নামাজ
শরিফ আহমাদ
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ইসলামে নফল নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। নফল নামাজ মুমিন জীবনে আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটায় এবং আল্লাহপাকের নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করে। নফল নামাজের মধ্যে অন্যতম চাশতের নামাজ। আনুমানিক বেলা ১১টায় চাশতের নামাজ পড়া ভালো। সাধারণ নফল নামাজের নিয়মে দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত আদায় করা যায়। এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো।
মুআজা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রা.)কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) কি চাশতের সালাত আদায় করতেন? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ। ৪ রাকাত সালাত আদায় করতেন। আল্লাহ চাইলে কখনো কখনো বেশিও পড়তেন। (মুসলিম, হাদিস : ১৬৯৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৮১)।
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি কারিম (সা.) চাশতের নামাজ এমনভাবে আদায় করতেন যে, আমরা বলতাম (মনে মনে) তিনি এ নামাজ আর ছাড়বেন না। আবার কখনো ছেড়ে দিতেন। আমরা বলতাম তিনি এ নামাজ আর পড়বেন না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১১৩১২, মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ৭৮৮৮)।
আবদুল্লাহ ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত। নবি কারিম (সা.) সূর্য হেলার পর জোহরের আগ পর্যন্ত ৪ রাকাত সালাত আদায় করতেন এবং বলতেন, এ সময় আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়। আমার একান্ত ইচ্ছা, এ সময় আমার কোনো সৎকাজ আল্লাহর দরবারে পৌঁছাক। (তিরমিজি, হাদিস : ৪৭৮; শরহুস সুন্নাহ, হাদিস : ৭৯০)।
আলি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি জোহরের আগে ৪ রাকাত সালাত আদায় করতেন এবং বলতেন, সূর্য হেলার সময় নবি কারিম (সা.) এ সালাত আদায় করতেন এবং তাতে দীর্ঘ কিরাত পড়তেন। (সুনানুল কুবরা নাসায়ি, হাদিস : ৩৩৩, শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ২৮১)। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে তিনটি বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন। ঘুমের আগে বিতর পড়া। চাশতের নামাজ দুই রাকাত পড়া এবং প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ২৫৩৬)।
আবু জার গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ভোরে ওঠে, তখন তার প্রতিটি জোড়ার ওপর একটি সদকা রয়েছে। প্রতি সুবহানাল্লাহ সদকা, প্রতি আলহামদুলিল্লাহ সদকা, প্রতি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সদকা, প্রতি আল্লাহু আকবার সদকা, আমর বিল মা’রুফ (সৎকাজের আদেশ) সদকা, নাহী আনিল মুনকার (অসৎকাজের নিষেধ) সদকা, অবশ্য চাশতের সময় দুই রাকাত নামাজ আদায় করা এসবের পক্ষ থেকে যথেষ্ট। (মুসলিম, হাদিস : ১৫৪৪)।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আবু জার (রা.)-এর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। তখন আমি তাকে বলি যে, হে চাচা! আমাকে কল্যাণী উপদেশ দান করুন। তিনি বললেন, তুমি যেমন আমাকে জিজ্ঞেস করছ, তেমনি আমিও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এমনটি জিজ্ঞেস করেছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন, যদি তুমি চাশতের নামাজ দুই রাকাত পড়, তাহলে তোমাকে গাফেলদের মাঝে গণ্য করা হবে না। আর যদি চার রাকাত পড়, তাহলে তোমাকে নেককারদের মাঝে গণ্য করা হবে। আর যদি তুমি ছয় রাকাত পড়, তাহলে তোমাকে আনুগত্যকারীদের অন্তর্র্ভুক্ত করা হবে। আর যদি তুমি আট রাকাত পড়, তাহলে তোমাকে সফলকাম ব্যক্তিদের তালিকায় লেখা হবে। আর যদি ১০ রাকাত পড়, তাহলে সেদিন তোমার আমলনামায় কোনো গোনাহ লেখা হবে না। আর যদি বারো রাকাত পড়, তাহলে তোমার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে। (সুনানুল কুবরা বায়হাকী, হাদিস : ৪৯০৬, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদিস : ৩৮৯০)।