ছড়িয়ে দিন ধর্মীয় সম্প্রীতির আলো
মাহমুদ আহমদ
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতিটি ধর্মই শান্তি ও সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়। সমগ্র বিশ্বের সব মানুষই তাদের নিজ নিজ ধর্ম পছন্দ করতে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন, তারা যে ধর্মই পছন্দ করবে, যে ধর্মের আজ্ঞানুবর্তী হয়ে তারা সুখী হবে, সে ধর্মই তারা প্রতিপালন করবে। পৃথিবীর বুকে এমন ব্যক্তি নেই, যে কোনোভাবে কাউকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করবে অথবা সেজন্য শক্তি প্রয়োগ করবে। পবিত্র কুরআনই এ ঘোষণা দেয়, বিশ্বাসের স্বাধীনতা হচ্ছে সব মানুষের মৌলিক অধিকার। পছন্দমাফিক যে কোনো ধর্মেই তারা বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে এবং তাদের পছন্দ মোতাবেক তারা যে কোনো ধর্মেরই আজ্ঞাবাহী সদস্য হতে পারে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘এবং বল, এটা হচ্ছে তোমার প্রভুর কাছ থেকে আগত সত্য, সে কারণে যে চায়, এতে বিশ্বাস করুক এবং যে চায়, অবিশ্বাস করুক।’ (সূরা আল কাহফ, আয়াত : ২৯)। ইসলাম হচ্ছে এক সুস্পষ্ট সত্য, যারা এতে বিশ্বাস করতে পছন্দ করে, তাদের তা করতে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এবং যারা এতে বিশ্বাস করতে চায় না, তাদের সেটা অগ্রাহ্য করারও পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। ধর্মের বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এটাকে পছন্দ করার ব্যাপারে মানুষকে স্বাধীনতা দান করা হয়েছে। ইসলামের এমন কোনো অস্ত্র নেই, যা দিয়ে কোনো মানুষকে জবরদস্তি করে ধর্মান্তরিত করা যায়।
অন্য ধর্মের অনুসারীদের সঙ্গে আচরণের বিষয়ে ইসলামের শিক্ষা নিয়ে অন্য আরেকটি প্রশ্ন অনেকের মনে পীড়া দেয়। ইসলাম কি মুসলমানদের অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি ঘৃণা করতে নাকি সম্মান ও দয়া প্রদর্শন করতে শিক্ষা দেয়? এ বিষয়ের ওপর পবিত্র কুরআন প্রচুর পথনির্দেশনা দান করে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘বল, হে আহলে কিতাব! আমাদের এবং তোমাদের মধ্যে সমশিক্ষাপূর্ণ একটি নির্দেশের দিকে এসো-যা হচ্ছে, আমরা কেবল এক আল্লাহর ইবাদত করি এবং আমরা তার সঙ্গে আর কাউকেই শরিক করি না এবং তাকে ছাড়া আমরা আর কাউকেই প্রভু-প্রতিপালক বলে মান্য করি না।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৬৪)।
একই বিষয়ে পবিত্র কুরআন আরও বর্ণনা করে, ‘এবং ন্যায়পরায়ণতা ও ধার্মিকতায় পরস্পরকে সাহায্য কর, কিন্তু পাপ ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরকে সাহায্য করোনা।’ (সূরা আল মায়েদা, আয়াত : ২)। ধর্মের কোনো উল্লেখ এখানে করা হয়নি। পবিত্র কুরআন বলে, তোমাদের উচিত, সর্বদাই প্রত্যেক সৎকর্ম ও মহৎ-উদ্দেশ্যের আহ্বানে যোগদান করা, সে আহ্বান যদি কোনো ইহুদি, খ্রিষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ অথবা যে কোনো ধর্মের অনুসারী, এমনকি নাস্তিকের তরফ থেকেও আসে, ইসলাম মুসলমানদের এ ধরনের লোকদের আহ্বানে সাড়া দেওয়া। তাদের উচিত কেবল সেই কারণটির প্রতিই তাকানো, যে জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে, কে আহ্বান করছে, সেদিকে নয়।
উত্তম আচরণের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন হয় এবং পরকালের জান্নাত নিশ্চিত হয়। যেভাবে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মোমেনের আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে বেশি ভারী আমল আর কিছুই হবে না। যে ব্যক্তি অশ্লীল ও কটু কথা বলে বা অশোভন আচরণ করে, তাকে মহান আল্লাহতায়ালা ঘৃণা করেন। আর যার ব্যবহার সুন্দর, সে তার ব্যবহারের কারণে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সাওয়াব লাভ করবে’ (সুনানে তিরমিজি)। মহানবি (সা.) আরও বলেছেন, ‘সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে তা হলো, মহান আল্লাহতায়ালার ভয় ও সুন্দর আচরণ। আর সবচেয়ে বেশি, যা মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে তা হলো (মানুষের) মুখ এবং লজ্জাস্থান’ (সুনানে তিরমিজি, হাকিম আল মুসতাদরাক)। আসলে মুসলমানদের আবারও বিশ্বের বুকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন হতে হলে, পুরোনো গৌরব ফিরে পেতে হলে সবারই উচিত ধনী-গরিব, জাতি, ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে সবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ ও উত্তম ব্যবহার করা।
ইসলাম সোনালি এক নীতিনির্ধারণ করেছে, যা সব মানুষই অনুসরণ করতে সক্ষম এবং তা থেকে সবাই উপকৃত হতে পারে। ইসলাম এ শিক্ষা দান করে, সব আচরণের ভিত্তি সর্বদাই ন্যায়বিচারের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। পবিত্র কুরআন বর্ণনা করে, ‘হে যারা ইমান এনেছ, আল্লাহর ব্যাপারে স্থির সংকল্প হও, সাক্ষ্যদানে নিরপেক্ষতা বজায় রাখ এবং মানুষের শত্রুতা যেন তোমাদের ন্যায়বিচারহীন কোনো কাজে প্ররোচিত না করে। সর্বদাই ন্যায়পরায়ণ হও, সেটাই হচ্ছে সততার অধিকতর নিকটবর্তী এবং আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ অবশ্যই অবগত আছেন’ (৫ : ৮)।
নিশ্চিত থাকুন, সেটাই হচ্ছে খাঁটি ইসলাম, আল্লাহর পরম বাক্য পবিত্র কুরআনের আইনসংগত কর্তৃত্বের সিলমোহর যেটা বহন করে এবং যা ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা পবিত্র নবি (সা.) এর কথা ও মহৎ অনুশীলনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এ ইসলাম শান্তি বই আর কিছুই নয়। আল্লাহপাক আমাদের প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা অনুসরণ করে জীবন পরিচালনার তৌফিক দিন, আমিন।
লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
masumon83@yahoo.com