Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

নবিপ্রেম ইমানের মূল অনুষঙ্গ

Icon

মওলবি আশরাফ

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নবিপ্রেম ইমানের মূল অনুষঙ্গ

মোহাম্মদ (স)

নবিজির প্রতি উম্মতের সবচেয়ে বড় হক হলো তাকে মন ও মনন দিয়ে ভালোবাসা। তার প্রতি ভালোবাসা যেন আর সব ভালোবাসার ঊর্ধ্বে হয়। এমনকি জান ও প্রাণের চেয়ে যেন তিনি প্রিয় হন।

ভালোবাসা যেন এমন তীব্র হয় আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর মামুলি আরামের জন্য হাজারবার জান কুরবান দিতে দ্বিধা না থাকে। এ ভালোবাসা ইমানের আলামত। খোদ আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ইমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তার কাছে আমি তার পিতা-মাতা, সন্তানাদি এবং সব মানুষের চেয়ে প্রিয় না হব। (বুখারি, হাদিস : ১৫)।

মুমিনের জন্য ভালোবাসার মূল কেন্দ্র স্বয়ং আল্লাহ পাক, তারপর হজরত মুহাম্মাদ (সা.)। আর বাকি দুনিয়ার যত প্রেমময় মানুষ আছে, যত রকমের ভালো লাগার জিনিস আছে, সব কিছুর অবস্থান দ্বিতীয়তে। এ থেকে বোঝা যায় আল্লাহর রাসূলকে ভালোবাসা আমাদের প্রত্যেকের জন্য ওয়াজিব। কেননা দুনিয়াতে ভালোবাসার যত কিছু আছে তার সবই তার কারণে প্রেমময়।

পবিত্র কুরআনে তাই আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, নবির ওপর মুমিনদের জানের চেয়ে বেশি হক আছে। (সূরা আহজাব, আয়াত : ৬)। অর্থাৎ যেই ব্যক্তি নিজের জান-মাল ও প্রবৃত্তির ওপর তার প্রতি ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিতে না পারবে, বোঝা যাবে তার ইমানে ঘাটতি আছে।

একবার হজরত ওমর ফারুক (রা.) রাসূল (সা.)কে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমার কাছে সব কিছুর চেয়ে বেশি প্রিয়, কেবল আমার জান ছাড়া।’ রাসূল (সা.) বলেন, ‘না (একথা সত্য নয়), আল্লাহর কসম যার হাতে আমার প্রাণ, ওই সময় পর্যন্ত (সত্য) নয়, যতক্ষণ না কারও কাছে আমি তার জানের চেয়ে বেশি প্রিয় হব।’

রাসূল (সা.)-এর মুখ থেকে এ কথা ওমর (রা.)-এর মনে বিদ্যুতের মতো স্পর্শ করল এবং তার মন ওই সময়ই বদলে গেল। তিনি বললেন, ‘খোদার কসম, আপনি আমার জানের চেয়ে বেশি প্রিয়।’ রাসূল (সা.) বললেন, ওমর, এক্ষণে তোমার ইমান পরিপূর্ণ হলো। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৬৬৩২)।

আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসার ফায়দা অফুরান। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ফায়দা হলো, প্রেমিক মানুষ তার প্রেমাস্পদকে (রাসূলকে) খুশি করতে প্রতিনিয়ত জান কুরবান দিতে পারে, এভাবে রাসূলের আনুগত্য সহজ হয়ে যায়। দ্বিতীয় বড় ফায়দা হলো, প্রত্যেক প্রেমিকের জন্য রয়েছে সুসংবাদ, যেই সুসংবাদ স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (সা.) দিয়ে গেছেন : মানুষের হাশর-নাশর তার সঙ্গেই হবে যাকে সে ভালোবাসে।

প্রকৃত ভালোবাসার প্রথম আলামত হলো প্রেমিক আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর কাজকে নিজের সব কাজের ওপর প্রাধান্য দেবে। তার পূর্ণ আনুগত্য করবে। সুন্নতের গুরুত্ব দেবে। নিজের কুপ্রবৃত্তি রাসূলের বিধানের আলোকে দমন করবে। একবার রাসূল (সা.) হজরত আনাস (রা.)কে উদ্দেশ করে বলেন-বেটা, তুমি যদি পারো তাহলে অবশ্যই এমনভাবে সকাল-সন্ধ্যা পার করবে যে, তোমার মনের মধ্যে কারও প্রতি ঘৃণাবোধ থাকবে না।

কেননা এটাই আমার পথে চলার নিয়ম। আর যে ব্যক্তি আমার পথকে উজ্জীবিত করে, সে (প্রকৃত পক্ষে) আমাকেই ভালোবাসে। আর যে আমাকে ভালোবাসে, জান্নাতে সে আমার সঙ্গে থাকবে। (সুনানু তিরমিজি, হাদিস ২৮৯৪)। এটাও ভালোবাসার লক্ষণ যে, রাসূল (সা.)-এর জীবন ও আদর্শ নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা করা, তার সঙ্গে সাক্ষাতের আশা রাখা এবং উঠতে-বসতে দরুদ পাঠ করা।

আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন এমন মানুষদের ভালোবাসাও তাকে ভালোবাসার আলামত। সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বাইত, বিশেষ করে চার খলিফা, হজরত হাসান ও হুসাইন, মুমিনদের মা (রাসূলের স্ত্রীগণ) ও রাসূল (সা.)-এর মেয়েদের প্রতি অন্তরের অন্তস্থল থেকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রাখাও ইমানি দায়িত্ব।

আল্লাহর রাসূল (সা.) নিজেই সাহাবিদের প্রতি ভালোবাসা রাখা ইমানের আলামত ও শত্রুতা বা ঘৃণা রাখাকে মোনাফেকি বলেছেন।

হজরত হাসান ও হুসাইন (রা.) সম্পর্কে তিনি বলেন, ইয়া আল্লাহ, আমার এ দুজনের প্রতি ভালোবাসা আছে, আপনিও তাদের ভালোবাসুন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সা.)কে দেখেছি লাউ পছন্দ করতে, তারপর থেকে আমারও লাউ ভালো লাগতে শুরু করে। এটাও ভালোবাসার আলামত যে, রাসূলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সব কিছুর প্রতি ভালোবাসা থাকা। তিনি যেই শহর ভালোবাসতেন, তার জন্য জান উৎসর্গ করার মন থাকা, তার প্রতিটি বালু কণার প্রতি ভালোবাসা রাখা, এ সবই পারতপক্ষে রাসূলকে ভালোবাসারই নিশানা।

রাসূল (সা.)-এর প্রত্যেক উম্মতের প্রতি ভালোবাসা থাকা ও তাকে ভালোবাসার নিদর্শন। তার উম্মতের প্রতি আন্তরিকতা থাকা এবং তাদের সুপথে ডাকা।

মোদ্দাকথা, রাসূল (সা.)কে ভালোবাসা ইমানের অংশ ও ইমানদারের আলামত। এ ভালোবাসা হৃদয়ের গহিন থেকে উৎসারিত, কেবল লোক দেখানো ভালোবাসা নয়। যারা আল্লাহর রাসূল (সা.)কে ভালোবাসে, আল্লাহ তাদের সম্পর্কে কুরআনে ঘোষণা দেন, ‘তারা আল্লাহর দল, মনে রেখ, নিশ্চয় আল্লাহর দলের লোকেরাই সফল।’ (সূরা মুজাদালাহ, আয়াত ২২)।

তো আমরা যদি প্রকৃতপক্ষেই ইমানদার হতে চাই, ইহকাল ও পরকালে কামিয়াব হতে চাই, তাহলে আমাদের উচিত আল্লাহর রাসূল (সা.)কে জানা এবং সব ভালোবাসার ঊর্ধ্বে তার ভালোবাসা প্রাধান্য দেওয়া। হাদিসে পাকে খোদ আল্লাহর রাসূল (সা.) যেভাবে নির্দেশ করেছেন। আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম