Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

সমাজ সংস্কারে বিশ্বনবির অবদান

Icon

আলী ওসমান শেফায়েত

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সমাজ সংস্কারে বিশ্বনবির অবদান

সমাজ সংস্কারে বিশ্বনবির অবদান

মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ছিলেন একজন মহান সমাজ সংস্কারক। প্রাক-ইসলামি যুগে আরবের সামাজিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। গোত্র কলহ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, মারামারি, হানাহানি, সামাজিক বিশৃঙ্খলার নৈরাজ্য পূর্ণ অবস্থার মধ্যে নিপতিত ছিল গোটা সমাজ।

মহানবি (সা.) সমাজের যাবতীয় অনাচার দূর করে যে এক জান্নাতি সমাজব্যবস্থা কায়েম করেন। নিম্নে তার সংস্কারের সামান্য নমুনা পেশ করা হলো-

একত্ববাদ

ধর্মীয় ক্ষেত্রে নানা অনাচার, পৌত্তলিকতা ও কুসংস্কারের মূলোৎপাটন করে সমগ্র সমাজকে এক আল্লাহর বিশ্বাসী তথা তাওহিদের আদর্শে সমাজকে নবরূপে রূপায়িত করেন। সব ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বের উৎস একমাত্র আল্লাহকেই মেনে নিয়ে সমাজের সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার ব্যবস্থা করেন।

মানবতা

সমগ্র আরব দেশ যখন জঘন্য পাপ ও অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। এ অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজে মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) সাম্য, অকৃত্রিম ভ্রাতৃত্ব এবং বিশ্বমানবতার ভিত্তিতে যে এক উন্নত ও আদর্শ সমাজব্যবস্থার প্রবর্তন করেন পৃথিবীর ইতিহাসে তার কোনো নজির নেই। তিনি বললেন, মানুষের মাঝে শ্রেষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যিনি আল্লাহর সবদিকে অনুগত ও মানুষের সর্বাধিক কল্যাণকামী (সূরা হুজরাত : ১৩)। তার সমাজব্যবস্থায় উঁচু-নীচু, ধনী-দরিদ্র, কালো সাদার বৈষম্য রইল না। মানুষে মানুষে সব ধরনের অসাম্য ও ভেদাভেদ দূরীভূত করে মানবতার অত্যুজ্জ্বল আদর্শে সমাজ বন্ধন সুদৃঢ় করেন। আরবের ইতিহাসে রক্তের পরিবর্তে শুধু ধর্মের ভিত্তিতে সমাজ গঠনের ইহাই প্রথম দৃষ্টান্ত।

দাস প্রথার উচ্ছেদ

হজরত মুহাম্মাদ (সা.) মনিবদের নির্দেশ দিলেন ক্রীতদাসদের প্রতি সদাচরণ করো। তোমরা যা খাও, পরিধান করো তা তাদের খেতে এবং পরিধান করতে দাও (সহিহ মুসলিম-১৬৬১)। তিনি দাসদের মুক্তির পথ নির্দেশ করে ঘোষণা দিলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিন দাসকে আজাদ করবে, আল্লাহতায়ালা এর প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে আজাদকারীর প্রতিটি অঙ্গকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেবেন। এমনকি এর (দাসের) লজ্জাস্থানের বিনিময়ে তার (মুক্তকারীর) লজ্জাস্থানকে মুক্তি দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম-১৫০৯; তিরমিজি-১৫৪১)।

নারীর মর্যাদা

তৎকালীন আরবে নারীদের ভোগ্যসামগ্রী মনে করা হতো। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তিকে কন্যাসন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সঙ্গে তা সম্পাদন করেছে সেই কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নাম থেকে আবরণ বা প্রতিবন্ধক হবে’ (তিরমিজি)। নবি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম, আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি’। (ইবনে মাজাহ-১৯৭৭)।

মদ্যপান রহিতকরণ

মদ্যপ্রিয়তা আরবদের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল। নর্তকিদের সঙ্গে মদোমত্ত হয়ে তারা যে কোনো অশ্লীল কাজ করত। মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) দেখলেন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি সামাজিক, অর্থনৈতিক জীবনে চরম ক্ষতি সাধনকারী। তাই তিনি কঠোরভাবে মদ্যপান নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সমাজের কল্যাণ সাধনে সচেষ্ট হন।

জুয়া খেলা নিষিদ্ধ

তৎকালীন আরবে জুয়া খেলার ব্যাপক প্রচলন ছিল এবং এটাকে সম্মানজনক অভ্যাস মনে করত। জুয়া খেলায় হেরে মানুষ অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতো। ফলে ব্যাহত হতো সামাজিক জীবন। হজরত মুহাম্মাদ (সা.) জুয়া খেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সমাজকে ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেন।

জাকাতের বিধান

অর্থনৈতিক দৈন্যদশা বিদূরিত করে সমাজের সার্বিক সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের সৌধ নির্মাণের নিমিত্তে হজরত মুহাম্মাদ (সা.) জাকাতের বিধান প্রবর্তন করেন। যাতে করে সমাজ থেকে দারিদ্র্য বিমোচনের পথ সুগম হয়। তিনি ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য সমাজ থেকে চিরতরে উৎখাত করেন।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা

বিভিন্ন ধরনের অবিচার, অনাচার দূরীকরণের জন্য বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) আইনের শাসন কায়েম করেন। আইনকে ব্যক্তিবিশেষ অথবা কোনো গোত্রের হাতে না দিয়ে কেন্দ্রীয় বিচার বিভাগের হাতে ন্যস্ত করেন। যেন আইন কারও ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার না হয়। উপরোক্ত আলোচনায় স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, হজরত মুহাম্মাদ (সা.) অতি অল্প সময়ে স্বীয় প্রচেষ্টা অদম্য শক্তিবলে সব অনাচারের মূলোচ্ছেদ করে অসভ্য, দ্বিধাবিভক্ত সদা কলহপ্রিয় সে সময়ের সর্বাপেক্ষা অধঃপতিত আরবকে সুশৃঙ্খল সমাজব্যবস্থার মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য বন্ধনে সংঘবদ্ধ জাতিতে পরিণত করে অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দেন।

এভাবেই তিনি পুরো বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। যার জন্য বলতে হয় হজরত মুহাম্মাদ (সা.) সর্ব যুগের, সর্বশ্রেষ্ঠ একজন আদর্শ, মহামানব ও আখেরি নবি। কেয়ামত পর্যন্ত যারা তার অনুসরণ করবে অবশ্যই তারা হেদায়েত পাবে। ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি লাভ করবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম