Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

বন্যাদুর্গতের পাশে দাঁড়ানো মুমিনের কর্তব্য

Icon

এ এইচএম আবুল কালাম আযাদ

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বন্যাদুর্গতের পাশে দাঁড়ানো মুমিনের কর্তব্য

বন্যাদুর্গত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসি মানুষের পাশে যার যা কিছু আছে তা নিয়েই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসা ইমানি দায়িত্ব। অসহায় মানুষকে খাদ্যবস্ত্র দিয়ে সাহায্যের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে।

ইসলাম মানবতার ধর্ম। এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদগ্রস্ত হলে তাদের পাশে দাঁড়ানো, বিপদ মুক্তির জন্য সাহায্য করা ইসলামের শিক্ষা। তাদের দুর্দিনে আর্থিক সহায়তা, খাবার-দাবার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং চিকিৎসাসেবায় এগিয়ে আসা ইমানের দাবি। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের মতো অসহায়-দুর্গত মানুষের সাহায্য করাও ইবাদত।

আল্লাহতায়ালা মুমিনদের একটি দেহের মতো বানিয়েছেন। দেহের কোনো অংশ আক্রান্ত হওয়া মানে পুরো দেহ আক্রান্ত হওয়া। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানবদেহের মতো; যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন তার পুরো দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা।’ (মুসলিম : ৬৪৮০)।

আর যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের প্রতি অসহায়-দুর্গত মানুষদের সাহায্য করতে পবিত্র কুরআনে নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদাররা! আমি তোমাদের যে জীবনের উপকরণ দিয়েছি, তা থেকে তোমরা ব্যয় করো সে দিন আসার আগেই, যে দিন কোনো বেচাকেনা, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ থাকবে না।’ (সূরা বাকারা : ২৫৪)।

যারা তাদের এই দুঃখের দিনে সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করবে, তারা যেন তাদের ধর্মীয় দায়িত্বই পালন করবে, মহান আল্লাহ তাদের মহান পুরস্কারে ভূষিত করবেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জমিনে যারা আছে, তাদের প্রতি দয়া করো, আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ সুনানে তিরমিজি : ৪/৩২৩।

পক্ষান্তরে সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও যারা বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না, তাদের জন্য আল্লাহর দয়া সংকুচিত হয়ে আসবে। নবি করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, তার প্রতিও দয়া করা হয় না।’ সুনানে তিরমিজি : ৪/৩২৩।

বন্যার্তদের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করলে আল্লাহ তাদের জান্নাতে রিজিক দিয়ে সম্মানিত করবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বস্ত্রহীনকে কাপড় পরাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ রেশমি কাপড় পরাবেন। যে ব্যক্তি কোনো ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে আহার করাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোনো তৃষ্ণার্তকে পানি পান করাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের পবিত্র পানীয় পান করাবেন।’ সুনানে আবু দাউদ : ২/১৩০।

আমাদের যাদের সামর্থ্য কম, তারাও এই বন্যাদুর্গত ভাইবোনদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারি। আমাদের পক্ষ থেকে ত্রাণ, খাবার ও ওষুধ যদি কমও হয়, তবুও আল্লাহর কাছে তা খুবই প্রিয় হবে। এছাড়া ত্রাণ সংগ্রহ করে বিতরণের কাজেও আত্মনিয়োগ করতে পারি। আশা করা যায়, এ প্রচেষ্টা ও আমল আল্লাহ পছন্দ করবেন।

রাসূলে কারিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করবে (আল্লাহর কাছে তা এতই প্রিয় হবে যে) আল্লাহ তা ডান হাতে কবুল করবেন। এরপর তা দাতার জন্য তোমাদের কারও অশ্বশাবককে প্রতিপালনের মতো করবেন এবং প্রতিপালন করতে করতে পাহাড় পরিমাণ বড় করবেন (পাহাড় পরিমাণ দানের সওয়াব দান করবেন)।’ সহিহ বুখারি : ২/১০৮।

দুস্থদের সাহায্য করার আরেকটি ফজিলত হলো, এতে মহান আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায়। যারা দুস্থদের সহযোগিতা করে, মহান আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের সম্মান রক্ষা করেন। এ জন্যই প্রথম ওহি আসার পর যখন নবিজি (সা.) নিজের ব্যাপারে শঙ্কা বোধ করলেন, তখন খাদিজা (রা.) তাকে অভয় দিয়ে বলেন, আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন, অসহায় দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং হক পথের দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। (বুখারি : ৩)।

অতএব, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষা ধারণ করে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে যার যার সামর্থ্যানুযায়ী এগিয়ে আসা আমাদের দায়িত্ব ও জাতীয় কর্তব্য। তাই আসুন আমরা প্রত্যেকেই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যাদুর্গতের পাশে দাঁড়াই। জাতিকে এ মহাবিপদ থেকে রক্ষা করতে নিজেদের গুনাহের জন্য বেশি বেশি তাওবা করি।

লেখক : খতিব, বাইতুল মামুর জামে মসজিদ, উত্তরা ১২নং সেক্টর, ঢাকা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম