মহানবি (সা.)-এর মক্কা বিজয় ছিল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ বিপ্লব, শ্রেষ্ঠ বিজয়। কিন্তু মহানবি (সা.)-এর বিজয় উদযাপনে আত্মপ্রচার, বিজয়ের গৌরব ও অহংকারের চিহ্ন কোথাও ছিল না। ছিল শুধু নম্রতা ও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন। মক্কা বিজয়ের পর রাসূল (সা.) ৯ জন দাগি অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেও শেষ পর্যন্ত পাঁচজনকে মাফ করে দিয়েছিলেন।
মক্কা বিজয়ের পর রাসূল (সা.) কোনো ধরনের প্রতিশোধ নেননি, সবাইকে ক্ষমা করে দেন। কৃতজ্ঞতায় তার শির নুইয়ে পড়ল মহান রবের দরবারে। তিনি বিজয়োত্তর আট রাকাত শোকরানা সালাত আদায় করলেন। প্রাণের শত্রুদের হাতের মুঠোয় পেয়েও তিনি ক্ষমা করে দিলেন। ঘোষণা করলেন শাশ্বত বিজয়বাণী-‘আজ তোমাদের প্রতি কোনো প্রতিশোধ নেই। যাও, তোমরা সবাই মুক্ত।’
নবি করিম (সা.)-কে তায়েফবাসী পাথর নিক্ষেপ করে রক্তাক্ত করার পর আল্লাহতায়ালা পাহাড়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাকে পাঠান। ফেরেশতা তায়েফবাসীকে কঠিন শাস্তি দেওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দেননি বরং তাদেরকে ক্ষমা করে তাদের জন্য এভাবে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! তারা অজ্ঞ, তাই তারা আমার ওপর জুলুম করেছে। তুমি তাদের ক্ষমা কর এবং হেদায়াত নসিব কর।’ (ইবনে হিব্বান : ৯৭৩)।
শক্তি ও সামর্থ্য থাকার পরও কাউকে ক্ষমা করতে পারা মহান গুণ। এতে পরকালে যেমন মিলবে বিশাল প্রতিদান, দুনিয়াতেও আসবে শান্তি, স্থিতি ও সম্মান। আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় রাসূল (সা.)কে ক্ষমাশীল হওয়ার নির্দেশ প্রদান করে বলেন, ‘হে নবি! আপনি ক্ষমা করুন। সৎকাজের নির্দেশ দেন এবং মূর্খদের এড়িয়ে চলুন।’ (সূরা আরাফ : ১৯৯)।
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘অতএব, আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ (সূরা আল ইমরান : ১৫৯)। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক মানুষকে ক্ষমাশীল হওয়ার প্রতি উৎসাহিত করে বলেন, ‘তোমরা যদি ওদের ক্ষমা কর, ওদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা কর এবং তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সূরা তাগাবুন : ১৪)।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, ‘রাসূল (সা.) অশ্লীলভাষী ছিলেন না এবং অশোভন কথা বলার চেষ্টাও করতেন না। তিনি হাট-বাজারে শোরগোলকারী ছিলেন না এবং তিনি মন্দের প্রতিশোধ মন্দ দ্বারা নিতেন না বরং তা ক্ষমা করে দিতেন এবং উপেক্ষা করে চলতেন।’ (মেশকাত : ৫৪৪৮)। অতএব, প্রত্যেক মুসলমানের ইমানি চেতনার দাবি হচ্ছে ক্ষমাগুণ অর্জন করা এবং সবার সঙ্গে ক্ষমাশীল আচরণ করা। এতে সুন্দর ও সমৃদ্ধ হবে আমাদের পার্থিব ও পরকালীন জীবন।