মহানবির মহৎ গুণ আতিথেয়তা

হেলাল উদ্দীন হাবিবী
প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অতিথি পরায়ণতা ইসলামের সৌন্দর্য ও মহানবি (সা.)-এর সুমহান আদর্শ। অতিথির আগমনে সন্তুষ্ট থেকে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো, তার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা ও সাধ্যমতো আপ্যায়ন করা অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। মেহমানদারির দ্বারা মানুষের মাঝে পারস্পরিক বন্ধন ও সৌহার্দ সৃষ্টি হয়। সামাজিক এবং আত্মীয়তা সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। প্রায় সব নবি-রাসূল ছিলেন অতিথি পরায়ণ। বিশেষ করে বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অতিথি পরায়ণতার বিষয়টি মানুষের মাঝে ছিল প্রসিদ্ধ ও উপমাহীন। মেহমানদারির দ্বারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়, উপার্জনে বরকত আসে, রিজিক বৃদ্ধি পায় এবং বিপদ-আপদ দূর হয়। সংগত কারণেই ইসলামে মেহমানদারির গুরুত্ব অপরিসীম।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, তারা তাদের (মেহমানদের) নিজেদের ওপর প্রাধান্য দেয়, নিজেরা অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও। যাদের অন্তরের কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম। (সূরা হাশর, আয়াত : ০৯)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর ওপর এবং পরকালের ওপর ইমান আনে, সে যেন নিজ মেহমানের সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার ওপর এবং আখেরাতের ওপর ইমান আনে, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর এবং পরকালের ওপর ইমান আনে, সে যেন কল্যাণের কথা বলে অথবা চুপ থাকে। (সহিহ বুখারি)।
হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং হায়াত দীর্ঘ হোক, সে যেন আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে। (সহিহ বুখারি)।
প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) মেহমানদের সামনে সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল থাকতেন এবং বিদায়ের সময় মেহমানদের বিভিন্ন উপঢৌকন দিয়ে সম্মানিত করতেন। তিনি মেহমানদারির ক্ষেত্রে ধনী-গরিব, মুসলিম-অমুসলিমের তারতম্য করতেন না। তাই অনেক অমুসলিম ব্যক্তিবর্গও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। নবি করিম (সা.) ইরশাদ করেন, যে অলিমায় কেবল ধনীদের আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং গরিবদের বাদ দেওয়া হয়, তা সবচেয়ে নিকৃষ্ট খাবার। (সহিহ বুখারি)।
হজরত সালমান ফারসি (রা.) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এলাম। তখন তিনি একটি বালিশে হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। তিনি আমাকে দেখে বালিশটি আমার দিকে এগিয়ে দিলেন এবং বললেন, হে সালমান! যদি কেউ নিজ মুসলমান ভাইয়ের সম্মানে একটি বালিশও এগিয়ে দেয়, মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। (হায়াতুস সাহাবা)।
মনে রাখতে হবে, মেহমান কখনো মেজবানের রিজিক ভক্ষণ করে না, বরং প্রত্যেক মেহমান তার জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত রিজিক ভক্ষণ করে। সুতরাং মেহমানের আগমনে অসন্তুষ্ট হওয়া বা অন্তরে সংকীর্ণতা রাখা অনুচিত ও নিন্দনীয়।