রোজা পালনের উদ্দেশ্যে শেষ রাতে পানাহার করাকে সেহরি বলা হয়। সেহরি খাওয়া সুন্নত এবং সেহরি খাওয়ার ফজিলতও অপরিসীম। কারণ, সহিহ বুখারি শরিফের হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূলে করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা সেহরি খাও; নিশ্চয় সেহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত ও কল্যাণ রয়েছে।
অন্য হাদিসে এসেছে রাসূলে করিম (সা.) বলেছেন ‘আমাদের রোজা এবং আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টানদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহরি খাওয়া। (অর্থাৎ মুসলিমরা সেহরি খায় আর ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টানরা সেহরি খায় না)।’ (মুসলিম, নাসাঈ)।
রাতের শেষ মুহূর্তে সেহরি খাওয়া উত্তম। তা পেট ভরে খেতে হবে এমন নয়, বরং অল্প হলেও তা অনেক বরকত ও কল্যাণের। কারও যদি পেট ভরা থাকে, তাহলে অন্তত এক ঢোক পানি পান করে হলেও সেহরি গ্রহণ করা উচিত। অন্য হাদিসে এসেছে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনের জন্য খেজুর কতই না উত্তম সেহরি।’ (আবু দাউদ : ২৩৪৭)। অর্থাৎ সেহরি খেতে গিয়ে খুব ভালো মতো না খেলে তা হবে না, এমনটা মনে করা যাবে না। আবার মনে রাখতে হবে এটা সুন্নাত।
যদি কেউ সময়মতো জাগতে না পারেন, এমনকি ফজরের ওয়াক্ত হয়ে যায়, তাহলে সেহরি গ্রহণ করতে না পারার অজুহাতে রোজা ছেড়ে দেওয়াও যাবে না। ঘুম থেকে জেগে সেহরির সময় শেষ হওয়ার আগে যদি একটু পানিও পান করা যায়, তবে তাই করতে হবে এবং তাতে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। সেহরির সময় একটু আগে আগে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদের অভ্যাসও করে নেওয়া যেতে পারে। এটা এক অপূর্ব সুযোগ, যা সেহরিকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়।
নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে বিলম্ব করে সেহরি খাওয়া সুন্নাত। রাসূল (সা.) নিজে বিলম্বে সেহরি গ্রহণ করতেন। যেমন তিনি বলেছেন, ‘আমরা নবিদের দল। আমরা সময়ের আগে বিলম্বে সেহরি করার এবং সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ইফতার করার ব্যাপারে আদিষ্ট হয়েছি।’ (দারা কুতনী : ১০৯৬)। অন্য হাদিসে রয়েছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যত দিন এ উম্মত বিলম্বে সেহরি খাবে আর দ্রুত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ২১৫৪৬)।
তবে কোনোভাবেই ফজর উদিত হওয়ার পর আর কিছু খাওয়া যাবে না। যদি কেউ ফজর হয়নি মনে করে এর পর কিছু খান, তবে তার সে রোজা হবে না; বরং তা কাজা করতে হবে। অর্থাৎ আরেকটি রোজা রমজানের পর আদায় করতে হবে। তাই ফজর উদিত হওয়ার সন্দেহ হলে সেহরি গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যা তোমাকে সন্দিহান করে, তা ছেড়ে যা নিশ্চিত তার দিকে প্রত্যাবর্তন করো।’ (তিরমিযি : ২৫১৮)