Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

আতিথেয়তা মুমিনের শ্রেষ্ঠ গুণ

Icon

মুস্তাফিজ বিন হাবিবুল্লাহ

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আতিথেয়তা মুমিনের শ্রেষ্ঠ গুণ

ফাইল ছবি

আতিথেয়তা ও মেহমানদারি মানুষের পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় করে। মানবিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে। মেহমানদারি সামাজিক সম্পর্ক রক্ষার অন্যতম হাতিয়ার। এতে বড় আনন্দ ও পুণ্য রয়েছে। এটি কল্যাণ ও মহত্ত্বের পরিচায়ক। পাশাপাশি এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। সব নবি-রাসূলদের আদর্শ। এ গুণের কারণে মহানবি (সা.) তৎকালীন সময়ে কাফের-মুশরিকদের কাছেও সমাদৃত ছিলেন। মেহমানদারিকে মুমিনের শ্রেষ্ঠ গুণ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

হজরত ইবরাহিম (আ.) প্রথম পৃথিবীতে মেহমানদারির প্রথা চালু করেছেন। ইসলামে অতিথিসেবার প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মেহমানদারির সঙ্গে ইমানদারির বিশেষ সম্পর্ক আছে। মেহমানদারি নবিদের আদর্শ। হজরত ইবরাহিম (আ.) সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘আমার ফেরেশতারা (পুত্রসন্তানের) সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহিমের কাছে এলো। তারা বলল, ‘সালাম।’ সেও বলল, ‘সালাম।’ সে অবিলম্বে কাবাবকৃত গোবৎস (ভুনা গরুর গোশত) নিয়ে এলো।’ (সূরা : হুদ, আয়াত : ৬৯)।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে প্রেরিত ফেরেশতাদের দলে হজরত জিবরাইল, মিকাইল ও ইস্রাফিল (আ.) ছিলেন। তাঁরা মানুষের আকৃতি ধারণ করে ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে আগমন করেন। তিনি তাদের মানুষ মনে করে তাদের জন্য আতিথেয়তার আয়োজন করেন। ইবরাহিম (আ.)-ই পৃথিবীতে প্রথম মেহমানদারির প্রথা প্রচলন করেন। (তাফসিরে কুরতুবি)।

মহানবি মেহমানদারি করা পছন্দ করতেন। সাহাবিদের মেহমানদারি করতে বলতেন। মেহমানের গুরুত্ব ও ফজিলত বোঝাতেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ইমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে নতুবা চুপ করে থাকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৫৯৩)।

সাহাবিরা মনেপ্রাণে মহানবি (সা.)-এর কথা শুনতেন। আনুগত্যের শ্রেষ্ঠ নজির স্থাপন করতেন। একদিন এক আনসারি সাহাবির বিস্ময়কর মেহমানদারিতে মহান আল্লাহ খুশি হয়েছেন। কুরআনের আয়াত নাজিলের মাধ্যমে রাসূল (সা.)-কে তাঁর ঘটনা জানিয়ে দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ক্ষুধার্ত ব্যক্তি নবি করিম (সা.)-এর খেদমতে এলো। তিনি খাদ্যদ্রব্য কিছু আছে কিনা তা জানার জন্য তাঁর সহধর্মিণীদের কাছে লোক পাঠালেন। তাঁরা জানালেন, আমাদের কাছে পানি ছাড়া অন্য কিছুই নেই। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, কে আছে যে এ (ক্ষুধার্ত) ব্যক্তিকে মেহমান হিসাবে নিয়ে নিজের সঙ্গে খাওয়াতে পার? তখন জনৈক আনসারি সাহাবি (আবু তালহা) বলেন, আমি পারব। এ বলে তিনি মেহমান নিয়ে বাড়িতে গেলেন এবং স্ত্রীকে বলেন, রাসূল (সা.)-এর মেহমানের সম্মান কর। স্ত্রী বললেন, বাচ্চাদের আহার ছাড়া ঘরে অন্য কিছু নেই। আনসারি বলেন, তুমি আহার প্রস্তুত কর এবং বাতি জ্বালাও এবং বাচ্চারা খাবার চাইলে তাদের ঘুম পাড়িয়ে দাও। (স্বামীর কথামতো) সে বাতি জ্বালাল, বাচ্চাদের ঘুম পাড়াল এবং সামান্য খাবার যা তৈরি ছিল, তা উপস্থিত করল। (তারপর মেহমানসহ খেতে বসলেন) বাতি ঠিক করার বাহানা করে স্ত্রী উঠে গিয়ে বাতিটি নিভিয়ে দিলেন। তারপর তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়েই অন্ধকারের মধ্যে আহার করার মতো শব্দ করতে লাগলেন এবং মেহমানকে বোঝাতে লাগলেন, তারাও সঙ্গে খাচ্ছেন। তারা উভয়েই সারা রাত অভুক্ত অবস্থায় কাটালেন। ভোরে যখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গেলেন, তখন তিনি বলেন, আল্লাহ তোমাদের গত রাতের কার্যকলাপ দেখে হেসে দিয়েছেন। অথবা বলেছেন, খুশি হয়েছেন এবং এ আয়াত নাজিল করেছেন। (আনসারদের অন্যতম গুণ হলো এ) তারা অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের ওপর অন্যদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। আর যাদের অন্তরের কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফল। (সূরা : হাশর, আয়াত : ৯; সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৫২৬)।

মহানবি (সা.) অনেক সময় অতিথি আপ্যায়ন করতে গিয়ে তাকে ও তাঁর পরিবারকে অনাহারে থাকতে হয়েছে। নিজ ঘরে মেহমানদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে না পারলে তিনি মেহমানদের ধনী সাহাবির বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন। আতিথেয়তা নৈতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিতে মহৎ কাজ। অতিথিসেবা নবিদের সুন্নাত।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম