জান্নাতে নবিজির সান্নিধ্য পাবেন যারা
আমজাদ ইউনুস
প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জান্নাতে প্রিয় নবি (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভ করা একজন মুমিনের জন্য পরম সৌভাগ্যের বিষয়। নবিজির সাহাবিরা জান্নাতে তাঁর সান্নিধ্য লাভের গভীর আগ্রহ লালন করতেন। মাঝে মধ্যে নবি (সা.) নিজেই জান্নাতে তাঁর সঙ্গ ও সাহচর্য লাভের উপায় বলে দিতেন। জান্নাতে নবিজির সান্নিধ্য পাবেন যারা তাদের পরিচয় তুলে ধরা হলো-
নবিজির ভালোবাসা
আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। এক যাযাবর রাসূল (সা.)কে প্রশ্ন করল-কিয়ামত কবে হবে? রাসূল (সা.) তাকে বললেন, তুমি কিয়ামতের জন্য কি পাথেয় প্রস্তুত করেছ? সে বলল, আমি বেশি কিছু প্রস্তুত করতে পারিনি। তবে আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালোবাসি। তিনি বললেন, তুমি তারই সাথি হবে যাকে তুমি ভালোবাস। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৩৯)।
সিজদা ও নামাজ
রাবিআহ ইবনু কাব আল আসলামী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে রাত যাপন করছিলাম। আমি তার ওজুর পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস এনে দিতাম। তিনি আমাকে বললেন, কিছু চাও! আমি বললাম, জান্নাতে আপনার সাহচর্য প্রার্থনা করছি। তিনি বললেন, এছাড়া আরও কিছু আছে কী? আমি বললাম, এটাই আমার আবেদন। তিনি বললেন, তাহলে তুমি অধিক পরিমাণে সিজদা করে তোমার নিজের স্বার্থেই আমাকে সাহায্য কর। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৮৯)।
নবিজির আনুগত্য
ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবি (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। আপনাকে স্মরণ করি। আপনাকে না দেখলে প্রাণ বের হওয়ার উপক্রম হয়। আমি জান্নাতে প্রবেশ করলেও মর্যাদায় আপনার নিচে থাকব। তখন আপনাকে না দেখে থাকা আমার জন্য ভীষণ কষ্টকর হবে। আমি জান্নাতে আপনার সঙ্গে থাকতে চাই। রাসূল (সা.) তার কথার কোনো উত্তর দেননি। অতঃপর এ আয়াত অবতীর্ণ হলো। আর যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে তারা তাদের সঙ্গে থাকবে, আল্লাহ যাদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন নবি, সিদ্দিক, শহিদ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে। আর সঙ্গী হিসাবে তারা হবে উত্তম। (সূরা নিসা, আয়াত : ৬৯) (আল মুজামুল কবির, তাবরানি, হাদিস : ১২৫৫৯)।
উত্তম আচরণ
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) তোমাদের যে ব্যক্তির চরিত্র ও আচরণ সর্বোত্তম তোমাদের মধ্যে সে-ই আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় এবং কিয়ামত দিবসেও আমার খুবই কাছে থাকবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২০১৮)।
এতিম লালন-পালন
সাহল (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেছেন, আমি ও এতিমের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এমনিভাবে কাছে থাকবে। এ বলে তিনি শাহাদত ও মধ্যমা আঙুল দুটি দ্বারা ইঙ্গিত করলেন এবং এ দুটির মাঝে কিঞ্চিত ফাঁক রাখলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৩০৪)।
কন্যাশিশুর লালন-পালন
আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল বলেছেন, যে ব্যক্তি দুটি মেয়ে সন্তানকে সাবালক হওয়া পর্যন্ত প্রতিপালন করে, কিয়ামতের দিনে সে ও আমি এমন পাশাপাশি অবস্থায় থাকব, এ বলে তিনি তার হাতের আঙুলগুলো মিলিয়ে দিলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৬৩১)।
অধিক দরুদ পাঠ
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার ওপর অধিক সালাত (দরুদ) পাঠ করে, কিয়ামতের দিন সে-ই আমার অধিকতর কাছে থাকবে (তিরমিজি, হাদিস : ৪৮৪)।
তাকওয়া অবলম্বন
মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) যখন তাকে ইয়েমেনে পাঠান তখন তিনি তাকে বিদায় দিতে বের হন। মুয়াজ (রা.) সওয়ারিতে চলছেন, রাসূল (সা.) হাঁটছেন আর অসিয়ত করছেন। অসিয়ত করা শেষ হলে রাসূল (সা.) বললেন, হে মুয়াজ! সম্ভবত এ বছরের পর আমার সঙ্গে তোমার আর দেখা হবে না। হয়তো তুমি আমার মসজিদের পাশ দিয়ে হাঁটবে, আমার কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে! (কিন্তু আমার দেখা পাবে না)। এ কথা শুনে রাসূল (সা.)-এর আসন্ন বিচ্ছেদ-বিরহে মুয়াজ (রা.) অঝোরে কাঁদতে শুরু করলেন। এরপর রাসূল (সা.) মদিনার দিকে ফিরে তাকালেন এবং বললেন, আমার পরিবারের এ লোকেরা মনে করে, তারা আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। অথচ বিষয়টি এমন না; আমার সর্বাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত হলো ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহভীতির জীবন অবলম্বন করে। সে যে কেউই হোক এবং যেখানেই অবস্থান করুক। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২০৫২)।
দোয়া করা
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, এক রাতে আমি কয়েক রাকাত নফল নামাজ পড়লাম। নামাজের শেষে আল্লাহতায়ালার হামদ-ছানা আদায় করলাম। নবি কারিম (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করলাম। এরপর দোয়া করতে শুরু করলাম। তখন রাসূল (সা.) আমার অগোচরে বলতে থাকেন-তুমি (আল্লাহর কাছে) চাও, তোমাকে দেওয়া হবে। তুমি দোয়া কর, তোমার দোয়া কবুল করা হবে।
ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি দোয়া করলাম। এরপর মসজিদ থেকে বাড়িতে চলে এলাম। ভোর হলে আবু বকর সিদ্দিক (রা.) আমার বাড়িতে আসেন এবং জিজ্ঞেস করেন, আপনি আজ রাতে কী দোয়া করেছেন? আমি বললাম, আমি এই দোয়া করেছি-হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এমন ইমান চাই, যার পর কুফরের দিকে প্রত্যাবর্তন হবে না। এমন নিয়ামত চাই, যা কখনো ফুরাবে না। আর আমার (পরম) চাওয়া, চিরস্থায়ী জান্নাতে প্রিয়নবির (সা.)-এর সঙ্গ লাভ। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৪৩৪০)।