নামাজের জাগতিক উপকারিতা
মো. লোকমান হেকিম
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
একজন মুমিনের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল বা ইবাদত হচ্ছে নামাজ। নামাজ ধর্মের খুঁটি। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, নামাজ ধর্মের খুঁটি। যে ব্যক্তি নামাজ ঠিক রাখল, সে ধর্মকে ঠিক রাখল। আর যে খুঁটিকে বিনষ্ট করল, সে ধর্মকে বিনষ্ট করে ফেলল (শুআবুল ইমান- ২৮০৭)।
আল্লাহতায়ালা মুসলমানের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মুসলিমরা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে থাকে। নামাজ পড়ার নিয়ম-কানুন যেন ব্যক্তির সুস্থ-সবল থাকার জন্য উপযুক্ত ব্যায়াম। কোনো ব্যক্তি তার শরীরকে সুস্থ-সবল রাখতে যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ব্যায়াম করে, তার সবই যেন প্রতিফলিত হয় নামাজ পড়ার সময় ব্যক্তির অঙ্গপ্রতঙ্গের বিভিন্ন ক্রিয়ার মাধ্যমে।
নামাজ পড়ার আগে মুসলমানরা ওজু করার মাধ্যমে শরীরকে পবিত্র করে নামাজের জন্য প্রস্তুত হয়। ওজুর মাধ্যমে ব্যক্তি তার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো পরিষ্কার করে নেয় এবং জীবাণু থেকে এভাবে রক্ষা পায়। ওজু করার সময় মুখে ম্যাসেস করার ফলে মুখের রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। নামাজে দাঁড়ানোর সময় একজন ব্যক্তি সোজা হয়ে দাঁড়ায় নামাজের নিয়মানুযায়ী, ফলে মেরুদণ্ড স্বাভাবিক থাকে।
তাকবির তাহরিমায় হাত উঠানো, হাত নামানো হয়, ফলে বাহুদ্বয়ের ব্যায়াম হয়। হাত বাঁধার ফলে কনুইয়ের আশপাশের পেশির ও বগলের পেশির ব্যায়াম হয়। হাত বাঁধার সময় এক হাতের সঙ্গে আরেক হাতের আঁকড়ে ধরার কারণে হাতের তালু, আঙুল ও কবজির ব্যায়াম হয়। ব্যক্তি নামাজরত অবস্থায় রুকুতে গেলে তার পিঠ সমান্তরাল থাকে, ফলে পিঠ ও ঘাড়ের পেশি সম্প্রসারিত হয়।
নামাজে যথাযথভাবে এ রুকু করার ফলে ব্যক্তির পিঠ ব্যথা দূর হয়। নামাজরত অবস্থায় ব্যক্তি যখন সেজদায় যায়, তার মাথা জমিনে রাখে, ফলে শরীরের সব হাড়ের জোড়া নমনীয় হয় মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিকভাবে ঘটে ও উচ্চরক্তচাপ কমার সম্ভাবনা থাকে। সেজদা অবস্থায় ব্যক্তির হাত, পিঠ ও কোমরের ব্যায়াম হয়। পেট ও পেটের নিচের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নড়াচড়া হয় ও রক্ত চলাচল বেড়ে যায়, ফলে অনেক রোগের উপকার হয়। যেমন-কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদহজম ইত্যাদি।
নামাজে বসারত অবস্থায় হাঁটু ও পায়ের গোড়ালির ওপর চাপ পড়ে, ফলে এক ধরনের ব্যায়াম হয়। নামাজে বসা অবস্থায় ডানে ও বামে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে ব্যক্তি নামাজ শেষ করে, ফলে ব্যক্তির ঘাড়ের ব্যায়াম হয়। অর্থাৎ দেখা যায়, নামাজ পড়ার মাধ্যমে ব্যক্তির অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যায়াম হয়, যা ব্যক্তিকে সুস্থ রাখতে সহায়ক। ব্যক্তি নামাজ পড়ার মাধ্যমে শুধু শারীরিক নয় বরং মানসিক প্রশান্তিও ফিরে পায়। কারণ নামাজ এমন এক ইবাদত, যার মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করে।
ব্যক্তি এ ইবাদতের মাধ্যমে তার সব কষ্ট, দুঃখ, আকাক্সক্ষা, চাওয়া-পাওয়া সব তার মালিকের কাছে বলতে পারে, যা ব্যক্তিকে এক প্রকার মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। নামাজের সময় ব্যক্তির মন পবিত্র থাকে, শান্ত থাকে ফলে ব্যক্তির অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়, ব্যক্তির জীবনীশক্তি বৃদ্ধি পায়, যা ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার বহিঃপ্রকাশ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে ব্যক্তি অবহিত থাকার কারণে সময়ানুবর্তী হয়ে ওঠে। ব্যক্তির জীবনে শৃঙ্খলা ফিরে আসে ও ব্যক্তি অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকতে পারে। জীবনের সব হতাশা, অশান্তি, বিষণ্নতা, অস্থিরতার নিগঢ় থেকে বেরিয়ে মানসিক শান্তি লাভ করে।
এভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় একজন মুসলিম ব্যক্তির শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক প্রশান্তি এনে দিতে পারে। তাই এ নামাজকে উম্মতে মুহাম্মাদির ওপর প্রথম ফরজ করা হয়েছে। আর নামাজের মাধ্যমেই বান্দা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে পারে। আল্লাহর সঙ্গে বান্দার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে নামাজের মাধ্যমে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘সিজদা কর এবং নিকটবর্তী হও।’ রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘বান্দা সিজদারত অবস্থায় তার রবের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়’ (মুসলিম-৪৮৬)।
ওই হাদিসের সিজদা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নামাজ। অর্থাৎ যার যত বেশি নামাজ হবে, সে তত বেশি আল্লাহর নিকটবর্তী হবে এবং তাঁর নৈকট্য অর্জন করতে পারবে। এ নামাজ এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে, অন্যান্য সব ইবাদত, হুকুম, বিধিবিধান আল্লাহতায়ালা হজরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে ওহি আকারে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন; কিন্তু নামাজই একমাত্র বিধান, যা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রাসূলুল্লাহ (সা.)কে হাদিয়া হিসাবে দান করেছেন।