Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

পাঁচ স্তম্ভে ইসলামের অপরূপ সৌন্দর্য

Icon

হাবিবুর রহমান

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পাঁচ স্তম্ভে ইসলামের অপরূপ সৌন্দর্য

পাঁচ স্তম্ভে ইসলামের অপরূপ সৌন্দর্য

ইসলাম হলো ধর্ম ও জীবন পদ্ধতি। কিন্তু বর্তমানে ইসলামকে আমরা শুধু ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাই। আমরা মনে করি, ইসলাম হলো শুধু স্রষ্টাভিত্তিক কাজকর্ম নামাজ পড়া, রোজা রাখা, হজ, জাকাত দেওয়া। ইসলামকে আমরা শুধু এসব গণ্ডির মধ্যেই রাখতে ভালোবাসি। কিন্তু ইসলাম যে পূর্ণাঙ্গ এক জীবনব্যবস্থা সেটা মানতে চাই না। পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রতিটা ক্ষেত্রেই আল্লাহর কুরআন ও নবি মুহাম্মাদ (সা.)-এর হাদিস অনুসারে সার্বিক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনাকে ইসলাম বলে। শুধু নামাজ, রোজায় ইসলাম সীমাবদ্ধ নয়। ইসলামের পরিধি ব্যাপক, বিস্তৃত। ইসলামের প্রসারণ আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু, দোলনা থেকে কবর, পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত। আমাদের ইহকাল-পরকালীন মুক্তি, শান্তির জন্য ইসলামই একমাত্র জীবনব্যবস্থা এবং পথপ্রদর্শক। ইসলামের যে মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভ আছে, যার ওপর ভিত্তি করে ইসলাম দাঁড়িয়ে আছে। যেমন-ইমান, নামাজ, জাকাত, রোজা ও হজ। এ পাঁচটি স্তম্ভের দিকে তাকালেই আমরা ইসলামের সৌন্দর্য খুঁজে পাব। আল্লাহতায়ালা মুমিনদের জন্য এ পাঁচটি স্তম্ভ ফরজ বা অত্যাবশ্যক করেছেন।

প্রথমে আমরা নামাজের কথায় আসি। আল্লাহতায়ালা মুমিনদের জন্য প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। পাড়া-মহল্লার সবাই, এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে একে অন্যকে দেখার, খোঁজখবর নেওয়ার সুযোগ হয়। একত্রে সারিবদ্ধভাবে যখন জামাতে দাঁড়ায়- তখন সমাজের উঁচু-নিচু, ধনী-গরিব, আত্মীয়-অনাত্মীয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য, কোনো ভেদাভেদ থাকে না। সবাই এক আল্লাহর স্মরণে, এক আল্লাহর কাছে মাথা নত করে। আল্লাহতায়ালা নামাজের পাশাপাশি জাকাতকেও ফরজ করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সূরা বাকারার ২৭৭ আয়াতে বলেন, ‘যারা আল্লাহর ওপর ইমান এনে সৎ কাজ করবে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে এবং জাকাত আদায় করবে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং চিন্তিতও হবে না। কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা ৮২ বার নামাজের সঙ্গে সঙ্গে জাকাতের কথা বলেছেন। সুতরাং নামাজ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি জাকাত আদায়ও সমান গুরুত্বপূর্ণ। জাকাত হলো ধনীর সম্পদ থেকে গরিবের জন্য প্রাপ্ত অধিকার। আল্লাহ পৃথিবীতে সবাইকে সমান সম্পদ দিয়ে পাঠাননি। কাউকে ধনী, কাউকে গরিব করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এতে ধনী-গরিব উভয়ের জন্যই দৃষ্টান্ত রয়েছে। ধনীর সম্পদ থেকে গরিবরা সম্পদ পাবে। জাকাত দেওয়ায়, ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য, পার্থক্য দূর হয়। আল্লাহতায়ালা কী সুন্দর করেই না বৈষম্য নিরসনের উপায় বলে দিয়েছেন!!

ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ হলো রোজা। রমজান মাসে সুবহে সাদিকের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার, আহার থেকে বিরত থাকা হলো রোজা। আল্লাহ তার বান্দাদের উদ্দেশ্য করে কুরআনে সূরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনটা করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’ এ রমজান হলো, আল্লাহর বিধিনিষেধ, হুকুম আহকাম মান্য করার মাস। আল্লাহতায়ালা এখানে দেখিয়েছেন, যারা অনাহার, অর্ধাহারে কতটা কষ্টে দিন কাটায় তা ধনীরা বুঝবে না। তাই তিনি রোজার মাধ্যমে গরিবের দুঃখ, কষ্টটা তুলে ধরেছেন। একমাস ধনীরা অনাহারে রোজা রেখে ক্ষুধার্তের অবস্থা বুঝতে পারে। আল্লাহ কত সুন্দর করেই না রোজার ফজিলত তুলে ধরেছেন তার বান্দার কাছে।

এবার আসি ইসলামের সর্বশেষ স্তম্ভ হজের কথায়। আল্লাহ প্রত্যেক সুস্থ, সবল, বিবেকবান, সামর্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য হজ ফরজ করেছেন- যারা হজের পূর্ণ অর্থবহন করতে এবং সেখান থেকে ফিরে আসতে সক্ষম। হজ হলো মুসলমানদের জন্য মিলনমেলা, যাকে বলা হয় মহাসম্মেলন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসলমান, পবিত্র মক্কা-মদিনায় জিলহজ মাসে কিছুদিনের জন্য একত্রিত হন। তাদের ভাষা, আচার-আচরণ, চলাচল, পোশাক, আকার-আকৃতি, প্রত্যেকের আলাদা আলাদা সংস্কৃতি হওয়া সত্ত্বেও সবাই এক মনে, একই সাদা পোশাকে মহান আল্লাহর ডাকে একত্রিত হন। সবার মুখে এক আল্লাহর নাম। আল্লাহতায়ালা হজকে ফরজ করে গোটা মুসলিম জাতিকে একত্র করার সুযোগ করে দিলেন। তাদের একে অন্যের ভাষা, আচরণ, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক রীতিনীতি বুঝতে, একে অন্যের সংস্কৃতি জানতে হজ এক অপরূপ মিলনমেলা! এ হজের মাধ্যমে বিশ্ব মুসলমানদের মাঝে, একবিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি হয়।

ইসলাম শুধু পাঁচটি স্তম্ভেই সীমাবদ্ধ নয়। এর পরিসর আরও ব্যাপক, বিস্তৃত। আমাদের পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা, সবক্ষেত্রেই ইসলাম আবশ্যক ভূমিকা পালন করে। পরিবারের সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, গরিব-এতিমের সঙ্গে আচরণ, সমাজের একে অন্যের খোঁজখবর নেওয়া সব ক্ষেত্রেই, ইসলামের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। ব্যক্তির আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ, কথার মাধুর্য সবখানেই ইসলামের গুরুত্ব ও প্রভাব করেছে।

ইসলাম মানুষকে মুক্তির আহ্বান করে, আত্মার পরিশুদ্ধি করে। ব্যক্তির প্রতি ব্যক্তির বিশ্বাস, ভালোবাসা তৈরি করে। প্রতিবেশীর হক আদায়, তাদের খোঁজখবর নেওয়া থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করা, রোগ-শোকে পাশে থাকা ইত্যাদি কাজের নির্দেশনা দেয় ইসলাম। পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করলে মানুষের ইহকালে ও পরকালে মুক্তি মিলবে। ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত রাষ্ট্রনায়ক ধনী-গরিব, আত্মীয়-অনাত্মীয়, উঁচু-নিচুর মধ্যে কখনো পার্থক্য করবে না। তার মনে স্বজনপ্রীতির কোনো স্থান থাকবে না। ব্যক্তির স্ব স্ব যোগ্যতা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় কাজের দায়িত্ব পাবে, সে দলীয় বা বিরোধী দলীয় লোক হলেও। ইসলামই নারীকে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করেছে। নারীর অধিকার রক্ষায় পুরুষ সব সময়ই সোচ্চার থাকবে।

মোটকথা, ইসলাম মানুষকে সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করে। ইসলামি আদর্শে জীবন পরিচালনা করলে ইহকালে যেমন শান্তিতে বসবাস করতে পারবে তেমনি পরকালের কল্যাণের পথও সুগম হবে। আমরা ইসলামকে শুধু ধর্ম মনে না করে, একে ক্ষুধা গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ না রেখে, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের বাইরেও চিন্তার প্রসারতা ঘটাই। ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য পেতে হলে আমাদের পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করতে হবে। ইসলামের কিছু মানলাম আর কিছু মানলাম না, নিজের মনমতো ইসলাম মানলে, নিজের ইচ্ছামতো চললে, ইসলামের সৌন্দর্য, স্বাদ উপভোগ করা যায় না। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে সূরা বাকারার ২০৮ নং আয়াতে নিজেই বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু।’ সুতরাং আমাদের আল্লাহর কথা মেনে পরিপূর্ণ মুমিন হয়ে ইসলামে প্রবেশ করতে হবে। আমরা যা করি তা-ই আমাদের কর্মফল, আমরা পুনরুত্থানের দিনে আমাদের কর্ম অনুযায়ী ফল পাব। ভালো কাজের জন্য জান্নাত, খারাপ কাজের জন্য জাহান্নাম। তাই আমাদের এ সুশৃঙ্খল জীবনব্যবস্থা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে। ভালো কাজে আদেশ, মন্দ কাজে নিষেধ করে ইসলামি সৌন্দর্যের আলোকে নিজে, পরিবার, সমাজ রাষ্ট্র কায়েম করতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম