দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করবেন যেভাবে
ইসমাঈল সিদ্দিকী
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জীবনের বাঁকে বাঁকে মানুষ ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় অনেক অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। দুনিয়ার পিছু ছুটতে গিয়ে হারাম-হালালের তোয়াক্কা না করে নানারকম সীমালঙ্ঘন করে থাকে। এসব অপকর্ম আর সীমালঙ্ঘনের মূল কারণ হিসাবে রাসূল (সা.) একটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন। তা হচ্ছে, দুনিয়ার মোহ। ইরশাদ হয়েছে, ‘দুনিয়ার মোহই সব গুনাহের মূল’ (শুআবুল ইমান : ১০৫০১)।
বস্তুত : দুনিয়ার মোহ-মায়া, ধন-সম্পদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা আমাদের ভুলিয়ে রাখে পরম সত্য আখেরাত থেকে, যে আখেরাত আমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল, যে আখেরাত আমাদের আসল আবাসস্থল। ‘হে মানব সম্প্রদায়; নিশ্চয়ই আল্লাহপাকের অঙ্গীকার সত্য। সুতরাং দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদের কোনোভাবেই প্রতারিত না করে। আর বড় প্রতারক শয়তান যেন তোমাদের আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারণা না করে।’ শয়তান তোমাদের শত্রু, সুতরাং তাকে শত্রু রূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে আহ্বান করে যেন তারা জাহান্নামি হয় (সূরা ফাতির : ৫-৬)।
একজন মুমিনের কখনোই এটা মনে করা উচিত নয় যে, সে এই দুনিয়াতে অনন্তকাল বেঁচে থাকবে, বরং তার তো উচিত একজন মুসাফিরের মতো জীবনযাপন করবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ার সঙ্গে আমার কি? দুনিয়া আর আমার সম্পর্ক হলো (এমন যে), আমি তো কেবল একজন আরোহীর মতোই, যে একটি গাছের ছায়ার নিচে বসে, এরপর তা ছেড়ে চলে যায়’ (তিরমিজি : ২৩৭৭)।
ইবনে ‘উমার (রা.) বলতেন, ‘যদি তুমি সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঁচে থাক, তবে সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকার আশা করো না। যদি তুমি সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাক, তবে সন্ধ্যার প্রত্যাশা করো না। সুস্থ থাকা অবস্থায় তুমি অসুস্থতার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো, আর বেঁচে থাকা অবস্থায় নিজেকে প্রস্তুত করো মৃত্যুর জন্য’ (বোখারি : ৬৪১৬)। দুনিয়ার মোহ-মায়া ত্যাগ করে নেক ও পুণ্যবানদের দলে নিজেকে শামিল করতে দৈনন্দিন জীবনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলার চেষ্টা করব।
প্রতিদিন মৃত্যুকে স্মরণ করুন
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, মৃত্যু তোমাদের গ্রাস করবেই, যদিও সুরক্ষিত দুর্গে অবস্থান করো’ (সূরা নিসা : ৭৮)। রাসূল (সা.) বলেন, তোমরা বেশি বেশি দুনিয়ার স্বাদ বিনষ্টকারী মৃত্যুকে স্মরণ কর। (সহিহ ইবনে হিব্বান : ২৯৯৪)। অন্ধকার কবরের কথা কল্পনা করা : রাসূল (সা.) বলেন, ‘কবর পরকালের প্রথম ঘাঁটি। কেউ যদি এখান থেকে মুক্তি পায়, তাহলে পরবর্তী ঘাঁটিগুলো তার জন্য সহজ হবে। আর যদি কেউ কবর থেকে মুক্তি না পায়, তাহলে পরবর্তী ঘাঁটিগুলো তার জন্য আরও কঠিন হবে’ (তিরমিজি : ২৩০৮)।
হাশরের কথা চিন্তা করুন
আল্লাহ বলেন, সেদিন ধন-সম্পদ, সন্তানসন্ততি কোনো কাজে আসবে না। সেদিন ভাগ্যবান হবে কেবল সে, যে আল্লাহর কাছে আসবে বিশুদ্ধ আত্মা নিয়ে’ (সূরা শুআরা : ৮৮-৮৯)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘সেদিন মানুষ নিজের সন্তানকে রেখে পালিয়ে যাবে। তাদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর সেদিন এমন বিপদ নেমে আসবে যে, তখন নিজেকে ছাড়া আর কারও দিকে তাকানোর মতো অবস্থা থাকবে না’ (সূরা আবাসা : ৩৭)।
জবাবদিহির কথা ভাবুন
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব, তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে’ (সূরা ইয়াসিন : ৬৫)।
রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কেয়ামতের দিন পাঁচটি বিষয়ে জবাব না দিয়ে কোনো মানব সন্তান তার প্রতিপালকের সামনে পা বাড়াতে পারবে না। এক. জীবন কীভাবে অতিবাহিত করেছ? দুই. যৌবন কীভাবে নিঃশেষ করেছ? তিন. ধন-সম্পদ কীভাবে উপার্জন করেছ? চার. কোন পথে সম্পদ ব্যয় করেছ?
পাঁচ. অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছ?’ (তিরমিজি : ২৪১৬)। পরকালীন শাস্তির কথা স্মরণ করা : ইরশাদ হয়েছে, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে’ (সূরা শুআরা : ২২৭)। অন্যত্র বর্ণি হয়েছে, ‘জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের ভালোবাসেন না’ (সূরা কাসাস : ৭৭)।