Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

আল্লাহপাক উত্তম হেফাজতকারী

Icon

মো. আবদুল গনী শিব্বীর

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আল্লাহপাক উত্তম হেফাজতকারী

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জগৎগুলোর সৃষ্টিকর্তা। তিনিই সব মাখলুকের রিজিকদাতা। তিনিই সব মাখলুকের প্রতিপালক। বিপদাপদ, রোগ-শোক, দুঃখ, বেদনায় জর্জরিত মানুষের তিনিই একমাত্র সহায়। বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে মানুষকে রক্ষাকারী তিনিই।

তিনিই হেফাজতকারী; উত্তম হেফাজতকারী। বিপদকালীন বিপদগ্রস্ত অসহায়জনের ‘মুশকিলে আসান’ তিনিই করেন। পবিত্র কুরআন মাজিদে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন। অতএব, আল্লাহ উত্তম হেফাজতকারী এবং তিনিই সর্বাধিক দয়ালু (সূরা ইউসুফ : আয়াত ৬৪)।

বিপদকালীন মুহূর্তে কোনো মানুষ যখন তারই কাছে সাহায্য চায় তখন তিনি তার ডাকে সাড়া দেন। বিপদগ্রস্তকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন এমনকি তার কষ্টও দূরীভূত করে দেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, বল তো কে; নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন (সূরা আন নামল আয়াত : ৬২)।

তিনি আরও বলেন, ‘তিনিই তোমাদের জলে-স্থলে ভ্রমণ করান। এমনকি তোমরা যখন নৌযানে আরোহণ কর এবং সেগুলো আরোহী নিয়ে অনুকূল বাতাসে বেরিয়ে যায় এবং তারা তাতে আনন্দিত হয়, তারপর যখন দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে এবং চারদিক থেকে উত্তাল তরঙ্গমালা ধেয়ে আসে, আর তারা নিশ্চিত ধারণা করে যে, এবার তারা ঘেরাও হয়ে পড়েছে, তখন তারা আল্লাহকে তার জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে ডেকে বলে, ‘আপনি আমাদের এ থেকে বাঁচালে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে বিপদমুক্ত করেন তখন তারা জমিনে অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করতে থাকে’ (সূরা ইউনুস- আয়াত : ২২-২৩)।’

তিনি আরও বলেন, আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোনো কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা অপসারণকারী কেউ নেই। পক্ষান্তরে যদি তোমার মঙ্গল করেন, তবে তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান (সূরা আল আনআম আয়াত : ১৭)।

মানুষের ওপর আজাব ও গজব আপনা আপনি নেমে আসে না। মানুষের খারাপ ও অবৈধ কৃতকর্মের কারণে পৃথিবীতে আজাব ও গজব নাজিল হয়। মানুষ যতবেশি পাপ কাজ করে এর বিপরীতে যদি তারা তাওবা ইস্তেগফার করে তাহলে ওই বিপদাপদ কেটে যায়। বিপদাপদ মূলত : মানুষের হাতের কামাই। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে সমুদ্রে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে (সূরা রুম : আয়াত : ৪১)।

তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদেরকে যেসব বিপদাপদ স্পর্শ করে, সেগুলো তোমাদেরই কৃতকর্মের কারণে। অনেক গোনাহ তো আল্লাহ ক্ষমাই করে দেন’ (সূরা আশ-শূরা: আয়াত : ৩০)। তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ মানুষকে তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দিলে ভূ-পৃষ্ঠে কোনো জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেন না, কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত তাদের অবকাশ দিয়ে থাকেন’ (সূরা ফাতির : আয়াত : ৪৫)।

আল্লাহ যেভাবে তার বান্দাদের হেফাজত করেন, তার অন্যতম উপমা হলো, তিনি মানুষের সামনে ও পেছনে একের পর একজন প্রহরী ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। তারা বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে আল্লাহর নির্দেশক্রমে বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহপাক ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মানুষের জন্য রয়েছে তার সামনে ও পেছনে একের পর এক আগমনকারী প্রহরী, তারা আল্লাহর আদেশে তাকে রক্ষণাবেক্ষণ করে’ (সূরা আর রাদ : আয়াত : ১১)। আল্লাহপাক বিপদগ্রস্ত বান্দার জন্য যথেষ্ট। তিনিই বিপদ থেকে কাউকে রক্ষা করেন, কাউকে বিপদাবস্থা থেকে উদ্ধার করেন। পবিত্র কুরআন মাজিদে এ সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ কি তার বান্দার পক্ষে যথেষ্ট নন? (সূরা যুমার : আয়াত : ৩৬)।

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ‘প্রত্যেক বান্দার সঙ্গে তার জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছে। সে তাকে তার ঘুম কিংবা জাগ্রতবস্থায় জিন, মানুষ ও পোকামাকড়ের অনিষ্ঠতা থেকে রক্ষা করে। যখনই এগুলোর কোনোটি তার ক্ষতি করতে আসে, তখনই সে বলে তুমি পেছনে ফিরে আস। তবে ততটুকুই তাকে আক্রান্ত করতে পারে, যতটুকু আল্লাহর অনুমোদন রয়েছে।’

নবি করিম (সা.) দিনের দুপ্রান্তে আল্লাহতায়ালার কাছে সার্বিক নিরাপত্তা চেয়ে দোয়া করতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হেফাজত করুন আমার সম্মুখ থেকে, আমার পেছন দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার ওপর দিক থেকে। হে আল্লাহ! আমি আপনার মর্যাদার অছিলায় মাটিতে ধসে যাওয়া থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি’ (সুনানে আবু দাউদ)। অর্থাৎ আমাকে জিন, মানুষ ও পোকামাকড়ের অনিষ্ঠতা থেকে রক্ষা করুন এবং শয়তানের ক্ষতি থেকে। আমাকে আগত মসিবত থেকে, মাটিতে ধসে যাওয়া থেকে, আজাব থেকে ও সাধারণ সব ক্ষতিকারক বস্তু থেকে রক্ষা করুন।

দুষ্ট জিন মানুষের খুব ক্ষতি করে। অকল্পনীয় এ ক্ষতির হাত থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে একটি আয়াত নাজিল করেছেন, যা জিনের ক্ষতি থেকে বাঁচার রক্ষাকবচ। এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ঘুমের সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করে, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিয়োজিত থাকে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তার কাছে আসতে পারে না’ (সহিহ্ আল বুখারি)।

সব রকম বালা মুসিবত থেকে বাঁচার উপায় হলো, আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস তথা ইয়াকিন রেখে যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা, আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করা, তার নির্দেশগুলো খুশুখুজুর সঙ্গে পালন করা, তার নিষেধগুলো মান্য করা, তার ওপর তাওয়াক্কুল করা, তাকেই উত্তম হেফাজতকারী মনে করা।

লেখক : মুহাদ্দিস. নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদ্রাসা, সোনাপুর, নোয়াখালী সদর, নোয়াখালী

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম