Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

আল্লাহ ছাড় দেন ছেড়ে দেন না

Icon

মাহমুদ আহমদ

প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আল্লাহ ছাড় দেন ছেড়ে দেন না

কেন জানি আমাদের আচার-আচরণ বদলে যাচ্ছে। মানুষ আজ সামান্য কিছুতেই একে অপরের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ থেকে শুরু করে বড় ধরনের অন্যায় কাজে লিপ্ত হচ্ছে।

মহানবি (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালার কাছে উত্তম আচরণের চেয়ে অধিক ভারী কোনো বস্তু নেই, আল্লাহ পাকের কাছে কোনো ধর্মের ভালো বা মন্দ হওয়ার মানদণ্ড হলো-তার চরিত্র (আবু দাউদ)। মহানবি (সা.)-এর প্রকৃতিই এরূপ ছিল যে, তাঁর মাঝে সব চারিত্রিক উৎকর্ষতা চরম মার্গে পৌঁছে গিয়েছিল। তিনি হলেন মানবতার সর্বত্তোম আদর্শ।

দিনের পর দিন আমরা নানা পাপ কাজ করি। কিন্তু তাৎক্ষণিক তিনি আমাদের পাকড়াও করেন না বরং অবকাশ দিতে থাকেন। তিনি এজন্যই অবকাশ দেন যেন, আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরে তাওবা করে সহজ-সরল পথে চলার অঙ্গীকার করি।

আসলে আল্লাহ তার বান্দাকে শাস্তি প্রদানে অবকাশ দিতে থাকেন। কারণ যদি আল্লাহতায়ালা সব ধরনের শাস্তি তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োগ করতেন তাহলে পৃথিবীর মানুষ অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত। পাপের কারণে মানুষ অকালে শেষ হয়ে গেলে জীবজন্তু ও পশুপাখি বেঁচে থাকারও কোনো প্রয়োজন থাকত না।

মানুষের প্রয়োজনেই এদের সৃষ্টি। তাই মানুষের বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য জীবজন্তুও নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। এক কথায় এ পৃথিবীই থাকত না, আল্লাহ হয়তো নতুন পৃথিবী এবং মানব সভ্যতাকে নতুন করে সৃষ্টি করতেন।

যেভাবে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন : ‘আল্লাহ যদি মানুষকে তার অন্যায় কাজের কারণে তাৎক্ষণিক শাস্তি দিতেন তাহলে কোনো প্রাণীকেই তিনি এ পৃথিবীতে জীবিত ছাড়তেন না। কিন্তু তিনি এক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত তাদের অবকাশ দিয়ে থাকেন। তবে তাদের শাস্তির নির্ধারিত মেয়াদ যখন এসে পড়ে তখন তারা এক মুহূর্ত পেছনেও থাকতে পারে না এবং সামনেও এগোতে পারে না’ (সূরা নাহল : আয়াত ৬১)।

তবে কোনো জাতির শাস্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হয় তখন তা প্রতিহত, বিলম্বিত বা স্থগিত করা যায় না। শাস্তি যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়ে যায়, তখন তাকে কেউ আর প্রতিহত করার শক্তি রাখে না। যেভাবে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন : ‘আর প্রত্যেক জাতির জন্য একটি সময় নির্ধারিত আছে। অতএব, তাদের নির্ধারিত সময় যখন এসে যায়, তখন তারা তা থেকে এক মুহূর্ত পিছিয়েও থাকতে পারে না বা এগোতেও পারে না’ (সূরা আরাফ : আয়াত ৩৪)।

এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ জালিমকে অবকাশ দেন, তারপর যখন পাকড়াও করেন তখন আর কোনো ছাড় দেন না’ (মুসলিম)। আল্লাহ আমাদের অবকাশ দিচ্ছেন বলে আমরা যা ইচ্ছা তা করে যাব তা মোটেও ঠিক নয়। আমাদের উচিত সময় থাকতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।

জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষায় আমরা আল্লাহর কাছে সবিনয়ে এ দোয়া পড়ব-‘রাব্বানা আতিনা ফিদদুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবান নার’ (সূরা বাকারা : আয়াত ২০১)। অর্থ : ‘হে পরওয়ারদেগার! আমাদের দুনিয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদের দোজখের আগুন থেকে রক্ষা কর।’

আজকে আমার অর্থকড়ি আর ক্ষমতা আছে বলে একজন সাধারণ নিরিহ মানুষের সঙ্গে যা ইচ্ছা তাই করছি। কিন্তু একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন যিনি সব হিসাব রাখছেন। তিনি সাময়িকভাবে আমাদের ছাড় দিচ্ছেন। কিন্তু এটা ভাবা মোটেও ঠিক হবে না যে, আমি একেবারেই ছাড় পেয়ে যাব। আমরা যেন তার পাকড়াও থেকে রক্ষা পাই সেজন্য আমাদের সব ধরনের মন্দ কাজ পরিহার করার পাশাপাশি মহানবি (সা.) যেসব দোয়া সব সময় করতেন সেগুলোও আমরা প্রতিনিয়ত করব, যাতে আল্লাহতায়ালা আমাদের ক্ষমা করে তার কৃপার চাদরে আবৃত করে নেন।

তিনি (সা.) এ দোয়া পড়তেন-‘আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি সাময়ি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাসারি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি, ওয়াল ফাকরি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাকে শারীরিক সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান কর। হে আল্লাহ! আমার শ্রবণে সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান কর। আমার দৃষ্টিতে সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান কর। তুমি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি কুফুরি ও দারিদ্র্য থেকে। হে প্রভু-প্রতিপালক! আমি তোমার কাছে পানাহ চাই কবরের আজাব থেকে। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই’ (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)।

আমরা যদি আল্লাহ পাকের পাকড়াও থেকে রক্ষা পেতে চাই তাহলে আমাদের অবশ্যই সব ধরনের মন্দ কর্ম থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে এবং পরস্পরের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, হৃদ্যতা ও কোমলতায় মুমিনের উদাহরণ হলো একটি দেহের মতো। যখন তার একটি অঙ্গে ব্যথা হয়, তখন তার সারা শরীর বিনিদ্রা ও জ্বরাক্রান্ত হয়ে দুঃখে সমান অংশীদার হয় (সহিহ বুখারি)।

আল্লাহপাক আমাদের জাতি, ধর্ম-বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার এবং সব ধরনের মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

masumon@yahoo.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম