মায়ের দুধ আল্লাহর নেয়ামত
মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
রাসূলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘শিশু জন্মের পরপর মায়ের বুক থেকে যে দুধ আসে তা শিশুর জন্য অত্যন্ত সুষম, উপাদেয় ও উপকারী খাবার।’ (জামে তিরমিজি)।
সন্তান জন্মের পর মাতৃদুগ্ধ পান করা সন্তানের জন্মগত অধিকার। শিশুর জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব তাকে মায়ের দুধ দিতে হবে। মায়ের শালদুধ শিশুর জন্য খুব উপকারী। এ দুধে স্নেহ ও শর্করার পরিমাণ থাকে কম। তবে খনিজ লবণ, লৌহ, রোগপ্রতিরোধী পদার্থ ও আমিষের পরিমাণ সাধারণ দুধের চেয়ে বেশি থাকে। মায়ের দুধ গ্রহণকারী শিশুদের অ্যালার্জি, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, মেনিনজাইটিস, অন্ত্রপ্রদাহ জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব অন্য শিশুদের তুলনায় অনেক কম হয়।
নবজাতক শিশু যেহেতু জন্মের পর নিজে খাদ্য সংগ্রহ করে খেতে পারে না, সেহেতু ইসলামি শরিয়ত শিশুর জন্য দুবছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ পান করার অনুমোদন করেছে। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুবছর দুধ খাওয়াবে, যদি দুধ খাওয়ানোর পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়।’ (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত নং-২৩৩)।
মায়ের দুধ শিশুর জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নেয়ামত। শিশু জন্মগ্রহণের আগেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শিশুর উপযুক্ত খাদ্য হিসাবে দুধের সৃষ্টি করেছেন। শিশুকে বুকের দুধ পান করালে একদিকে শিশু পরিমিত পরিমাণে পুষ্টি পেয়ে স্বাভাবিক ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে, অপরদিকে মা ও সন্তানের মাঝে পারস্পরিক গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। যা শিশুর মাঝে তার সামাজিক জীবনেও প্রভাব বিস্তার করে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন স্বীয় বান্দার প্রতি অতিদয়াবান। বিশেষত ছোট শিশুদের প্রতি, যারা দয়া ও অনুগ্রহের বেশি মুখাপেক্ষী। তাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শিশুদের স্তন্য দান করা মায়ের ওপর ওয়াজিব করেছেন। কোনো অসুবিধা ছাড়া ক্রোধের বশবর্তী হয়ে বা অসন্তুষ্টির কারণে দুধ পান করানো বন্ধ করলে মারাত্মক গোনাহ হবে। তার বিপরীতে এ ক্ষেত্রে পিতারও কর্তব্য রয়েছে। তার কর্তব্য হচ্ছে যথারীতি ভালোভাবে শিশুর মায়ের খোরপোষের ব্যবস্থা করা। এ ব্যাপারে উভয়েই সমান দায়িত্বশীল। এ ছোট শিশুর অধিকার সম্পর্কে তাদের উভয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মাতা দুধ পান আর প্রতিপালনের মাধ্যমে শিশুকে সহায়তা করবে, আর পিতা খাদ্য ও পরিধেয় বস্ত্রের ব্যবস্থা করবে। মায়ের দুধ পানের গুরুত্বের ফলে রাসূলে কারিম (সা.) দুধদানরত অবস্থায় নারীদের গর্ভবতী হওয়াকে নিরুৎসাহিত করেছেন। এ মর্মে হজরত ওসামা বিন যায়েদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘একজন লোক রাসূলে কারিম (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে আজল করি। তখন রাসূলে কারিম (সা.) তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কেন তা কর? লোকটি বলল, সন্তানের স্নেহেই তা করি। রাসূল (সা.) বললেন, যদি তা (ঘায়লাহ) ক্ষতিকর হতো তবে পারস্যবাসী ও রোমানদেরও এতে খুবই ক্ষতি হতো।’ (সহিহ মুসলিম)। এখানে ‘ঘায়লাহ’ অর্থ হচ্ছে শিশুর দুধপানকালে স্বাভাবিক নিয়মে যৌন সম্ভোগ না করা, যাতে এ অবস্থায় গর্ভসঞ্চার না হয়।