সকল ক্ষমতার উৎস যিনি
মাহমুদ হাসান ফাহিম
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সৃষ্টির প্রথম কর্তব্য হলো, স্রষ্টার পরিচয় লাভ করা। স্রষ্টার পরিচয় জানা ছাড়া তার সঙ্গে সম্পর্ক, তার আদেশ-নিষেধ ও আনুগত্য কতটুক বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কেননা, বস্তুর আসল পরিচয়, গুণাগুণ ও গুরুত্ব জানা না থাকলে তার যথাযথ মূল্যায়ন করা সম্ভব হয় না। তাই আমাদের স্রষ্টা আল্লাহতায়ালার পরিচয় জানতে হবে। যেন তার হুকুম-আহকাম, যথাযথভাবে পালন করা এবং তার আনুগত্যে জীবন সোপর্দ করা সম্ভব হয়।
তিনিই আল্লাহ
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে নিজ সত্তার পরিচয় দিয়েছেন বিভিন্নভাবে। আয়াতুল কুরসিতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব। সর্বসত্তার ধারক। তাকে তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব তারই। কে আছে যে, তার অনুমতি ছাড়া তার কাছে সুপারিশ করবে? মানুষের সামনে ও পেছনে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত। তিনি যা ইচ্ছা করেন তদ্ব্যতীত তার জ্ঞানের কিছুই তারা (সৃষ্টি) আয়ত্ত্ব করতে পারে না। তার ‘কুরসি’ আকাশ ও পৃথিবীময় পরিব্যপ্ত। এদের রক্ষণাবেক্ষণ তাকে বিন্দুমাত্রও ক্লান্ত করে না। আর তিনি মহান শ্রেষ্ঠ।’ (সূরা বাকারা : ৫৫)।
তিনি সবকিছুর নিয়ন্তা
‘তিনিই আল্লাহ। যিনি আকাশমণ্ডলীকে উঁচুতে স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ছাড়া, যা তোমরা দেখতে পাও। অতঃপর তিনি আরশে ‘ইসতিওয়া’ গ্রহণ করেন। সূর্য এবং চাঁদকে নিয়োজিত রেখেছেন বিশেষ কাজে। প্রতিটি বস্তু এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবর্তন করে। তিনি যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি এসব নিদর্শন সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার, (একদিন) তোমাদের স্বীয় প্রতিপালকের কাছে উপস্থিত হতে হবে।’ (সূরা রা’দ : ২)।
তিনি পৃথিবীর নুর
‘আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর নুর। তার নুরের দৃষ্টান্ত যেন এক দীপাধার, যাতে আছে এক প্রদীপ। প্রদীপটি একটি কাচের আবরণে বেষ্টিত। যেন তা (অর্থাৎ কাচ) নক্ষত্র, মুক্তার মতো উজ্জ্বল। প্রদীপটি প্রজ্বলিত হয় বরকতপূর্ণ জয়তুন বৃক্ষের তেল দিয়ে, যা (কেবল) পুবেরও নয়, (কেবল) পশ্চিমের নয়। মনে হয়, যেন আগুনের ছোঁয়া না লাগলেও তা এমনিই আলো দেবে। নুরের ওপর নুর। আল্লাহ যাকে চান তাকে নিজ নুরে উপনীত করেন। আল্লাহ মানুষের কল্যাণার্থে দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেন। আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।’ (সূরা নুর ৩৫)।
তিনি সবকিছুর স্রষ্টা
‘আল্লাহ সে সত্তা, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন দুর্বল অবস্থা থেকে, এরপর তিনি দান করেন শক্তি, শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।’ (সূরা রুম : ৫৪)।
‘আল্লাহ, যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন অবস্থানস্থল এবং আকাশকে করেছেন (উঁচু গম্বুজস্বরূপ) এক ছাদ। তোমাদের আকৃতিকে করেছেন সুন্দর, আর উৎকৃষ্ট বস্তু থেকে তোমাদের রিজিক দান করেন। তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের প্রতিপালক। তিনি অতি বরকতময়, জগৎগুলোর প্রতিপালক। তিনি চিরঞ্জীব। তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। সুতরাং তোমরা তাকে ডাক, তার জন্য আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে। সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জগৎগুলোর প্রতিপালক।’ (সূরা মুমিন : ৬৪-৬৫)।
‘তিনি (আল্লাহ) তো তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, তারপর শুক্রবিন্দু থেকে, তারপর জমাটবাঁধা রক্ত থেকে। তারপর তিনি তোমাদের শিশুরূপে বের করেন; তারপর (তোমাদের প্রতিপালন করেন,) যাতে তোমরা উপনীত হও পূর্ণ বলবত্তায়, তারপর হও বৃদ্ধ। তোমাদের মধ্যে কতক এমনও আছে, যারা তার আগেই মারা যায় আর তোমাদের এজন্য সুযোগ দিই, যেন তোমরা এক নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত পৌঁছাও এবং বুদ্ধিকে কাজে লাগাও।’ (সূরা মু’মিন : ৬৭)।
তিনি আদি-অন্ত
‘তিনি আরও বলেন, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করে। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। তিনি সর্ববিষয়ে সর্ব শক্তিমান। তিনিই আদি, তিনিই অন্ত, তিনিই প্রকাশ্য ও তিনিই গুপ্ত এবং তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত। তিনিই আকামণ্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। তারপর আরশে ইসতিওয়া গ্রহণ করেছেন। তিনি এমন প্রতিটি জিনিস সম্পর্কে জানেন, যা ভূগর্ভে প্রবেশ করে এবং যা তা থেকে বের হয়। জানেন এমন প্রতিটি জিনিস, যা আকাশ থেকে নেমে আসে এবং যা তাতে উত্থিত হয়। তোমরা যেখানেই থাক, তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন। তোমরা যা-ই করো, তা তিনি দেখেন। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব তারই। সবকিছু আল্লাহরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। তিনি রাতকে দিনের ভেতর এবং দিনকে রাতের ভেতর প্রবেশ করান। তিনি অন্তরের খবরও জানেন।’ (সূরা হাদিদ : ১-৬)।
‘আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সাত আকাশ এবং তার অনুরূপ পৃথিবীও। তাদের মাঝে আল্লাহর হুকুম অবতীর্ণ হতে থাকে, যাতে তোমরা জানতে পার আল্লাহ সর্ববিষয়ে পরিপূর্ণ শক্তি রাখেন এবং আল্লাহর জ্ঞান সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে।’ (সূরা তালাক : ১২)।
তিনি এক-অদ্বিতীয়
‘বলুন, তিনিই আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়। তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন, (বরং সবাই তার মুখাপেক্ষী)। তিনি কাওকে জন্ম দেননি আবার কারও থেকে জন্মও নেননি। তার সমতুল্য কেউ নেই।’ (সূরা ইখলাস ১-৪)। এছাড়া পবিত্র কুরআনে বহু আয়াতে আল্লাহতায়ালার পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে।