Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

রহমত মাগফিরাত আর নাজাতের রমজান

Icon

মাওলানা তোফায়েল গাজালি ও মাহমুদ আহমদ

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রহমত মাগফিরাত আর নাজাতের রমজান

এলো রহমতের রমজান। আজ থেকে মাবুদের অফুরান রহমতের বারিধারায় সিক্ত হবে রোজাদারের রুহ। বরকতের জোয়ারে ফুল-ফল ফুটতে থাকবে মনের জমিনে। নাজাতের সওগাত বিতরণ হবে সারা জাহানে। দৈনন্দিন রুটিনের বাইরে তারাবির নামাজ-কিয়ামুল্লাইল, সেহরি ও ইফতারের মধ্য দিয়ে মুসলমানরা সাধনা করবেন আত্মশুদ্ধি। মাসব্যাপী সিয়ামব্রত এনে দেবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। রোজার মাসআলা-মাসায়িল, গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে লিখেছেন-মাওলানা তোফায়েল গাজালি ও মাহমুদ আহমদ

সিয়াম বা রোজা

মুমিন জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার রমজান। আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংযমের মাধ্যমে আত্ম উন্নয়নের চেতনায় জীবনের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের জন্য করুণাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের অফুরান ভান্ডার নিয়ে আসে রমজান। প্রিয় নবি (সা.) এ মাসকে ‘শাহরুন আজিম’ মহান সম্মানিত মাস এবং ‘শাহরুম মোবারক’ বরকতময় মাস নামে আখ্যায়িত করেছেন।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম রোজা। ইমান, নামাজ ও জাকাতের পরই রোজার স্থান। আরবি ভাষায় রোজাকে ‘সাওম’ বলা হয়। যার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। শরিয়তের পরিভাষায় সাওম বলা হয় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়তে পানাহার, স্ত্রী সহবাস ও রোজা ভঙ্গকারী কাজ থেকে বিরত থাকাকে।

সুতরাং রমজানের চাঁদ উদিত হলে প্রত্যেক সুস্থ, প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর ওপর পূর্ণ রমজানের রোজা রাখা ফরজ। আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ তোমাদের ওপর (রমজানের) রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে করে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)।

নবি করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি ইমানসহ সওয়াবের আশায় কিয়ামে রমজান অর্থাৎ তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী গোনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় শবেকদরের রাত জেগে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে তারও পূর্ববর্তী গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি শরিফ ১/২৫৫, মুসলিম শরিফ ১/২৫৯, মেশকাত শরিফ ১/১৭৩)।

রমজানের তাৎপর্য

হজরত সালমান ফার্সি (রা.) বর্ণনা করেন, শাবান মাসের শেষ দিনে নবি করিম (সা.) মিম্বরে বসে বলেন, হে লোকজন! তোমাদের ওপর এক মহা ও বরকতময় মাস আগত প্রায়। এমন মাস, যার মধ্যে এমন একটি রাত (শবেকদর) আছে যা হাজার মাস থেকে উত্তম। (অর্থাৎ ওই এক রাতের ইবাদতের সওয়াব হাজার মাসের থেকে বেশি) আল্লাহতায়ালা এ মাসে দিনেরবেলা রোজা ফরজ করেছেন আর রাতে ইবাদতকে করেছেন নফল।

এ মাসে যে ব্যক্তি নেক আমলের দ্বারা আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জনের প্রত্যাশী হবে, তার অবস্থা এরূপ যে, কেমন যেন সে অন্য মাসে ফরজ আদায় করেছে। অর্থাৎ নফলের সওয়াব ফরজের সমতুল্য হবে। আর যে ব্যক্তি এ মোবারক মাসে কোনো ফরজ আদায় করবে তার অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায়ের সমান সাওয়াব হবে।

অর্থাৎ রমজানে এক ফরজের সওয়াব সত্তর গুণ বেড়ে যায়। রমজান সবরের মাস, আর সবরের সওয়াব ও বদলা হলো জান্নাত। এ মাস মানুষের সঙ্গে সদাচার ও কল্যাণকামিতার মাস। এ মাসে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়। যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। আর জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরওয়ানা মিলবে। সঙ্গে সঙ্গে রোজাদারের সওয়াব কম করা ছাড়াই ইফতার করানো ব্যক্তি রোজার অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে। এ কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! (সা.) আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ এমন রয়েছে, যাদের এ সামর্থ্য নেই যে, তারা অন্যকে ইফতার করাবে, আর এমন সওয়াব লাভ করবে।

এ প্রশ্ন শুনে নবি করিম (সা.) এমন জওয়াব দিলেন যা শুনে তাদের হতাশা ও কষ্টগুলো আশা এবং আনন্দে পরিণত হলো। তিনি (সা.) বললেন, আল্লাহতায়ালা এসব পুরস্কার ওইসব ব্যক্তিদেরও দেবেন, যারা কোনো রোজাদারকে এক ঢোক দুধ, একটি খেজুর, এমনকি এক ঢোক পানি পান করাবে। তবে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পেট ভরে খাওয়াবে আল্লাহতায়ালা তাকে কেয়ামতের দিন আমার হাউজে কাওসার থেকে এমন পানি পান করাবেন যে, তারপর চিরস্থায়ী জান্নাতে প্রবেশের আগে তার আর পিপাসা লাগবে না।

এরপর নবি করিম (সা.) বলেন, রমজান এমন মাস, যার প্রথম দশক রহমত, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত আর শেষ দশক জাহান্নাম থেকে মুক্তির দশক। যে ব্যক্তি এ মাসে তার গোলাম (কর্মচারী, চাকর, এক কথায় অধীনস্থ প্রত্যেক ব্যক্তি) থেকে কাজের বোঝা বা দায়িত্ব হালকা করে দেবে আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন।

যুগে যুগে রমজান

পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা পবিত্র মাহে রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, ‘হে যারা ইমান এনেছ! তোমাদের জন্য সেভাবে রোজা রাখা বিধিবদ্ধ করা হলো, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য বিধিবদ্ধ করা হয়েছিল, যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পার’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)। ওই আয়াত থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয় তাহলো ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসাবে রোজা অর্থাৎ উপবাসব্রত পালন করা কোনো না কোনো আকারে সব ধর্মেই ছিল, আছে।

পবিত্র মাহে রমজান আসে আমাদের জন্য অবারিত ইবাদত বন্দেগির বাড়তি সুযোগ নিয়ে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর নেক বান্দারা অন্বেষণ করে কীভাবে আল্লাহপাকের নৈকট্য অর্জন করা যায়। ইসলামে রোজার মাহাত্ম্য অতি ব্যাপক। এ মাহাত্ম্য ও মর্যাদাকে বুঝাতে গিয়ে আমাদের প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মাদ মস্তফা (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক জিনিসের জন্য নির্দিষ্ট দরজা থাকে আর ইবাদতের দরজা হচ্ছে রোজা’ (জামেউস সগির)।

তিনি (সা.) আরও বলেছেন, ‘রোজা ঢাল স্বরূপ এবং আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি নিরাপদ দুর্গ’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল)।

হজরত আদম (আ.) থেকে রাসূল (সা.) পর্যন্ত সব যুগের মানুষ, তথা সব নবির শরিয়তের রোজা পালনের বিধান ছিল তা কুরআনুল কারিম দ্বারা প্রমাণিত। আদম (আ.)-এর যুগে প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখার বিধান ছিল। হজরত দাউদ (আ.) একদিন পর একদিন রোজা রাখতেন। হজরত মারইয়াম (আ.)-এর ব্যাপারে কুরআন মাজিদে আছে, ‘আপনি বলুন, আমি আল্লাহর জন্য রোজা পালন করছি, আজ আমি কারও সঙ্গে কথা বলব না। (সূরা মারইয়াম : আয়াত ২৬)।

তাফসিরে হাক্কানিতে তাওরাত তথা বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ইহুদিদের ওপর সপ্তম মাসের ১০ তারিখে কাফফারার রোজা রাখা ওয়াজিব ছিল। প্রাচীন খ্রিষ্টানরাও সেই রোজা রাখত বলে প্রকাশ আছে। হজরত মূসা (আ.) তুর পর্বতে ৪০ দিন রোজা রেখেছেন। হজরত দানিয়াল (আ.) একাধারে তিন সপ্তাহ রোজা পালন করেছেন। বাইবেল থেকে প্রতীয়মান হয়, ইহুদি-খ্রিষ্টানরা এ ছাড়া আরও রোজা রাখত। বর্তমান যুগেও তাদের ধর্মপরায়ণ লোকেরা বছরের বিভিন্ন সময় রোজা পালন করে আসছে।

আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থে বলেন, হিজরি দ্বিতীয় সনে শাবান মাসে বদর যুদ্ধের আগে রমজানের রোজা ফরজ করা হয়।

পানাহার বন্ধ রাখা রোজা নয়

প্রিয়নবি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা এবং এর ওপর আমল করা থেকে বিরত থাকে না আল্লাহতায়ালার জন্য তার উপবাস থাকা এবং পিপাসার্ত থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ তার রোজা রাখা বেকার বলে গণ্য হবে’ (বোখারি, কিতাবুস সওম)। অর্থাৎ যখন মানুষ রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে গাফেল হয়ে যায় তখন সে শুধু নিজেকে উপবাসই রাখে যা আল্লাহতায়ালার জন্য কোনো প্রয়োজন নেই। আল্লাহ মানুষের অন্তর দেখেন, কোন নিয়তে সে রোজা রাখছে এটাই মূল বিষয়। হজরত ফাতেমা যাহরা (রা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি নিজের জিহবা, চোখ, কানসহ অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সংযত করতে পারে না তার রোজা কোনো কাজেই আসবে না’ (বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৯৩, পৃষ্ঠা ২৯৫)।

একজন ব্যক্তির কেবল অভুক্ত আর পিপাসার্ত থাকাই রোজার মূল উদ্দেশ্য নয়। কেননা মহানবি (সা.) বলেছেন : ‘তোমাদের কেউ যখন কোনোদিন রোজা রাখে, সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং গোলমাল ও ঝগড়াঝাঁটি না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা কেউ তার সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করে তবে তার বলা উচিত, ‘আমি রোজাদার’ (বুখারি)। তিনি (সা.) আরেক স্থানে বলেন, ‘যে ব্যক্তি রোজাদার আর সে যদি চুপ থাকে তাহলে সেটাও তার জন্য ইবাদত, তার ঘুমও ইবাদত হিসাবে গণ্য করা হবে। তার দোয়া গ্রহণীয় হবে। আর তার আমলের প্রতিদান বাড়িয়ে দেওয়া হবে’।

রমজানে কুরআন পাঠ

এ পবিত্র মাসে আল্লাহতায়ালা বিশ্বনবি (সা.)-এর ওপর পবিত্র কুরআন নাজিল করেছেন। তাই বলা হয় রমজান কুরআন নাজিলের মাস। রমজানের সঙ্গে পবিত্র কুরআনে কারিমের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেভাবে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে-‘রমজান সেই মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন যা মানবজাতির জন্য হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াত ও ফুরকান (অর্থাৎ হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী) বিষয়ক সুস্পষ্ট প্রমাণাদি। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পায়, সে যেন এতে রোজা রাখে, কিন্তু যে কেউ যদি রুগ্ণ এবং সফরে থাকে তাহলে অন্য দিন গণনা পূর্ণ করতে হবে, আল্লাহ্ তোমাদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য চান এবং তোমাদের জন্য কাঠিন্য চান না, যেন তোমরা গণনা পূর্ণ কর এবং আল্লাহর মহিমা কীর্তন কর, এ জন্য যে, তিনি তোমাদের হেদায়াত দিয়েছেন এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর’ (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)।

পবিত্র রমজান মাসেই মহানবি (সা.) আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে প্রথম বাণী লাভ করেছিলেন। এ রমজান মাসেই হজরত জিবরাইল (আ.) বছরের আগে অবতীর্ণ হওয়া সব বাণী হজরত রাসূল কারিম (সা.)-এর কাছে পুনরাবৃত্তি করতেন। এ ব্যবস্থা মহানবি (সা.)-এর জীবনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

এছাড়া ‘মহানবি (সা.)-এর জীবনের শেষ বছরের রমজান মাসে হজরত জিবরাইল (আ.) পূর্ণ কুরআনকে মহানবি (সা.)-এর কাছে দুবার পাঠ করে শোনান’ (বুখারি)। এ থেকে বুঝা যায়, রমজানের সঙ্গে কুরআনের সম্পর্ক সুগভীর। এ পবিত্র মাসে রোজার কল্যাণ, আজ্ঞানুবর্তিতা এবং কুরআন পাঠ এসব ইবাদত একত্রে মানবচিত্তে এক আশ্চর্য আধ্যাত্মিক অবস্থা সৃষ্টি করে।

বরকতময় সেহরি

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) নবি (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে দিনের রোজা পূর্ণ করার জন্য সাহায্য নাও এবং দুপুরে ঘুমের মাধ্যমে রাতের নামাজের জন্য সাহায্য নাও।’ (ইবনে মাজাহ : ১৬৯৩)। পেটে ক্ষুধা না থাকলেও সেহরি খাওয়া উচিত।

হজরত আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত-হাদিসে নবি (সা.) বলেছেন, ‘সেহরি খাওয়া বরকত। একে পরিত্যাগ করো না, যদিও এক ঢোক পানির মাধ্যমে হয়। আল্লাহ ও ফেরেশতা সেহরি ভক্ষণকারীদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।’ (মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল : ১১১০১)। সেহরি খুবই বরকতময় জিনিস। বিভিন্ন হাদিসে বিষয়টি ব্যক্ত হয়েছে। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত-নবি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সেহরি খাও, সেহরিতে বরকত আছে।’ (বুখারি : ১৮২৩)।

যদি কোনো ব্যক্তি সেহরি খাওয়া ছাড়াই রোজার নিয়ত করে নেয়, তথাপিও তার রোজা হয়ে যাবে। তবে সে সেহরির বরকত পাবে না। [শামী ৩/৪০০]। সেহরি দেরিতে করা মুস্তাহাব। তবে এত দেরি করা কাম্য নয় যে, সময়ের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়ে যায়। যা মাকরুহ। [হেদায়া ১/২২৫ মারাকিল ফালাহ ৩৭৩]।

ইফতারের ফজিলত

সারা দিন রোজা রেখে সূর্যাস্তের পর প্রথম যে পানাহারের মাধ্যমে উপবাস ভঙ্গ করা হয়, তাকে ‘ইফতার’ বলে। ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা উত্তম। ইফতারের আগেই ইফতারি সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা এবং যথাসময়ে ইফতার করা সুন্নাত। মহানবি (সা.) খেজুর আর পানি দিয়ে ইফতার করতেন।

প্রিয় নবি ও বিশ্বনবি (সা.) অত্যন্ত সাধারণ ইফতার করতেন। তিনি (সা.) সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে সামান্য কয়েকটি তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর না পেতেন, তবে শুকনা খেজুর, আর যদি তাও না পেতেন, তবে কয়েক ঢোক পানি পান করে ইফতার করতেন (বুখারি-মুসলিম)।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে রোজাদারের দোয়া আল্লাহর কাছে এতই আকর্ষণীয় যে আল্লাহতায়ালা রমজানের সময় ফেরেশতাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, ‘রমজানে তোমাদের পূর্বের দায়িত্ব মওকুফ করা হলো এবং নতুন দায়িত্বের আদেশ করা হলো, তা হলো আমার রোজাদার বান্দারা যখন কোনো দোয়া মোনাজাত করবে, তখন তোমরা আমিন! আমিন!! বলতে থাকবে।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)।

হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘আমার বান্দাদের মধ্যে তারা আমার বেশি প্রিয়, যারা দ্রুত ইফতার করে।’ (তিরমিজি, আলফিয়্যাতুল হাদিস : ৫৬০, পৃষ্ঠা : ১৩১)। হজরত সাহল ইবনে সাআদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যত দিন লোকেরা ওয়াক্ত হওয়ামাত্র ইফতার করবে, তত দিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে।’ (বুখারি, সাওম অধ্যায়, হাদিস : ১৮৩৩)।

খেজুর দ্বারা ইফতার করা সুন্নাত; যে কোনো ফল দ্বারা ইফতার করলেও সুন্নাত আদায় হবে। মিষ্টান্ন দ্বারা ইফতার করলেও সুন্নাত পালন হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে, খেজুর না হলে পানি দ্বারা; নিশ্চয়ই পানি পবিত্র।’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ; আলফিয়্যাতুল হাদিস : ৫৬২, পৃষ্ঠা : ১৩১-১৩২)।

ইফতার করা যেমন ফজিলতের, ইফতার করানোও তেমনি বরকতের। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াব কম করা হবে না।’ সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! আমাদের অনেকেরই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই।’

রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘পানিমিশ্রিত এক পেয়ালা দুধ বা একটি খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দ্বারাও যদি কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তাতেও সেই পরিমাণ সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে আহার করাবে, আল্লাহতায়ালা তাকে আমার হাউজে কাউসার থেকে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ)।

তারাবির নামাজ

রমজান মাস এলেই রোজার সঙ্গে সঙ্গে যে ইবাদতটির নাম সর্বাগ্রে আসে তা হলো তারাবির নামাজ। তারাবি শব্দের আভিধানিক অর্থ বিশ্রাম বা আরাম। তারাবির নামাজে চার রাকাত নামাজ পড়ার পর কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নেয়া হয়, তাই পরিভাষাগতভাবে এ নামাজকে তারাবির নামাজ বলা হয়। তারাবির নামাজ আসলে তাহাজ্জুদ নামাজেরই আরেকটি নাম, কিন্তু রমজান মাসে সর্বসাধারণ যেন এ থেকে অধিকহারে কল্যাণমণ্ডিত হতে পারে এ জন্য সাধারণ মানুষকে রাতের প্রথম ভাগে অর্থাৎ, ইশার নামাজের পরপরই এ নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন, রমজানের রাতে জামাতসহকারে যে নামাজ আদায় করা হয় তার নাম তারাবিহ রাখা হয়েছে এ জন্য যে, যখন সাহাবায়ে কেরাম এ নামাজের জন্য একত্রিত হতেন তখন তারা দুই সালাম অর্থাৎ চার রাকাতের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম গ্রহণ করতেন। আর এ জন্যই এ নামাজের নাম রাখা হয় তারাবিহ [ফাতহুল বারী ৪/৩১৪]।

সফর ও অসুস্থতায় রোজা

সফর ও অসুস্থতায় রোজার বিধান সম্বন্ধে মহানবি (সা.)-এর সব নির্দেশ হাদিসে আছে, যার ওপর তিনি আমল করেছেন এবং আমল করিয়েছেন। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য, কিছু এমন প্রকৃতির মানুষ আছেন যারা কুরআন হাদিসের বিধিবিধান ছেড়ে দিয়ে নিজের ওপর এমন কষ্টকর বোঝা চাপিয়ে নেয় যা ইসলামবিরোধী। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বিশেষ কিছু অবস্থায় রোজা রাখতে বারণ করেছেন, যেমন সফরে অথবা অসুস্থ অবস্থায় রোজা রাখতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন।

এছাড়া শিশুদের, গর্ভবতীদের এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদেরও রোজা না রাখার নির্দেশ রয়েছে। পবিত্র কুরআনে এ বিষয়ে স্পষ্ট আদেশ থাকা সত্ত্বেও অনেকে গায়ের জোরে অসুস্থ অবস্থায় এবং সফরে রোজা রাখেন, এটা মোটেও আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির কারণ নয়। আল্লাহ যা আদেশ দিয়েছেন তা পালন করার মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মাঝে যে এ মাসকে পাবে সে যেন এতে রোজা রাখে। কিন্তু যে অসুস্থ অথবা সফরে থাকে তাকে অন্যান্য দিনে রোজার এ সংখ্যা পূর্ণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য চান এবং তোমাদের জন্য কাঠিন্য চান না’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ৮৫)।

এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন যে, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য সহজ চান আর তোমাদের কষ্টে ফেলতে চান না।’ কিন্তু আফসোস তাদের জন্য যারা এ রোজাকে কষ্টদায়ক বানিয়ে নেয়। তারা রোজার বিষয়ে বেশ কঠোরতা অবলম্বন করে। সব রোজাকেই তারা ইসলাম মনে করে আর তাই যতই অসুস্থ হোক বা দুর্বল, বৃদ্ধ হোক বা গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী তাদের ক্ষেত্রেও ছাড় দিতে চায় না। অসুস্থতা যদি বেড়েও যায় অথবা স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে তারপরও রোজা ছাড়ে না।

রোজার ক্ষেত্রে এ ধরনের কঠোরতা কোনোভাবেই ইসলামসম্মত নয়। আল্লাহপাক মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য চান, মানুষের কষ্ট হোক এটা তিনি চান না। অপরদিকে কিছু মানুষ এমনও আছে যাদের কাছে রমজানের দিনগুলোর যেন কোনো গুরুত্বই নেই। রমজানুল মোবারক মাস আসে আর তার ফজল ও রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করে চলে যায় কিন্তু তাদের এ দিকে খেয়ালও থাকে না যে, রমজান এলো এবং চলে গেল। এটা যেন না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

ইতেকাফ

ইতেকাফ শব্দের অর্থ-অবস্থান করা, আটকে রাখা। শরিয়তের পরিভাষায় ইতেকাফ বলা হয়-ইতেকাফের নিয়তে পুরুষের এমন মসজিদে অবস্থান করা যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা হয় এবং কোনো মহিলার নিজ গৃহে নামাজের স্থানে অথবা ঘরের এক কোণে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলে।

আল্লাহকে একান্তভাবে লাভ করার জন্য মহানবি (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী মুমিন-মুত্তাকিরা শেষ দশকে ইতেকাফ করে থাকেন। রমজানকে বিদায় দিতে গিয়ে আমাদের প্রিয় নবি (সা.)-এর এমনটি হয়ে থাকত যে, আধ্যাত্মিক বসন্ত নিজের চমক দেখিয়ে যখন বিদায় নেওয়ার ক্ষণে পৌঁছে যেত তখন তিনি (সা.) কোমর বেঁধে নিতেন আর রমজানের কল্যাণরাজিতে নিজ ডালি ভরে নিতে কোনো ত্রুটি করতেন না। মহানবি (সা.)-এর শেষ দশকের ইবাদত সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত একটি হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি। রমজানের শেষ দশকে প্রবেশ করলে তিনি (সা.) কীভাবে রাতগুলো ইবাদতের মাধ্যমে জীবিত করতেন এবং তাঁর (সা.) পরিবার পরিজনকেও জাগাতেন (বুখারি)।

যুগে যুগে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা শবেকদরের সন্ধানে রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। হজরত উমর (রা.) বর্ণনা করেন-নবি কারিম (সা.) রমজান মাসের শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন (বুখারি, মুসলিম)। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন-আল্লাহর রাসূল (সা.) রমজানের মধ্যের দশকে ইতেকাফ করতেন। ২০ রমজান ফজরের নামাজের পর ইতেকাফ আরম্ভ করা উচিত। এ জন্য ১৯ রমজান বাদ মাগরিব ইতেকাফস্থলে এসে যাওয়াই অনেকে ভালো মনে করে থাকেন। ইতেকাফে বসে মুত্তাকিরা একাগ্রচিত্তে ব্যক্তিগত দোয়া ছাড়াও সবার জন্য সময়োপযোগী দোয়া করেন।

ইতেকাফের জন্য উপযুক্ত স্থান হলো জামে মসজিদ। এ প্রসঙ্গে কুরআনে উল্লেখ রয়েছে-‘তোমরা মসজিদে ইতেকাফ কর’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)। হাদিসেও নির্দেশ এসেছে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘জামে মসজিদ ছাড়া ইতেকাফ নেই’ (আবু দাউদ, কিতাবুল ইতেকাফ, পৃ. ৩৩৫)।

মহিলাদের ইতেকাফ

কোনো মহিলা ইতেকাফ করতে চাইলে সে বাড়ির কোনো একটি কামরায় ইতেকাফ করতে পারে। আর ওই কামরা তার জন্য মসজিদের মতো। অর্থাৎ ওই কামরা থেকে প্রয়োজন ছাড়া বের হতে পারবে না। যদি বের হয়, তাহলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে [আলমগিরী ১/২১১]। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিস থেকে জানা যায়, হুজুর (সা.)-এর মৃত্যুর পর তার (সা.) পবিত্র স্ত্রীরাও এ সুন্নতের অনুসরণ করতেন (সহি মুসলিম, কিতাবুল ইতেকাফ)।

শেষ দশকে লাইলাতুল কদর

রমজানের শেষ দশকে মুমিন-মুত্তাকির জন্য বিশেষ এক রাত হচ্ছে লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল কদর এমন এক রাত, যে রাতে আল্লাহতায়ালা তার সেসব ইমানদারের ওপর তার করুণাধারা বর্ষণ করেন, যারা নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে তার ইচ্ছায় বিগলিত অন্তরে নিজেকে সমর্পণ করে আর তার আদেশাবলি পরিপূর্ণরূপে মান্য করে। এটা এমন এক রাত যা সাধারণভাবে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তবে এর আরও অর্থ আছে যা আল্লাহর রহমানিয়ত বৈশিষ্ট্যের মাঝে গভীরভাবে প্রোথিত। শেষ দশকে হুজুর (সা.) লাইলাতুল কদরের অন্বেষণে রাতগুলো ইবাদতের মাধ্যমে জাগিয়ে রাখতেন।

মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘কদরের রাতে যে ব্যক্তি ঐকান্তিক বিশ্বাসের সঙ্গে আল্লাহর পুরস্কার লাভের আশা করে, তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়’ (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড)। অপর এক হাদিসে মহানবি (সা.) লাইলাতুল কদর অন্বেষণের সময় কখন হবে সে বিষয়ে উপদেশ দিয়ে বলেন, ‘রমজান মাসের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ কর’ (বুখারি)।

রোজার নিয়ত

রোজার নিয়তের জন্য মুখ দিয়ে নির্ধারিত শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করা জরুরি নয়। বরং অন্তরের ইচ্ছাই যথেষ্ট। এমনকি রোজার জন্য সেহরি খাওয়াটাও নিয়তের স্থলাভিষিক্ত। কিছু লোক আরবিতে রোজার নিয়ত করাকে আবশ্যকীয় মনে করে থাকেন অথচ তা সঠিক নয় (জাওয়াহিরুল ফিক্হ ১/৩৭৮)। তবে আরবি নিয়ত করলে অসুবিধা নেই।

প্রত্যেক রোজার জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিয়ত করা জরুরি (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১৯৫)। অর্ধ দিনের আগে নিয়ত করলে রোজা বিশুদ্ধ হয়ে যাবে (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১৯৫)।

আরবি নিয়ত : নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম।

বাংলায় নিয়ত : হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব, তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

ইফতারের দোয়া

মহানবি (সা.) ইফতারের আগে দোয়ায়রত থাকতেন। তিনি (সা.) ইফতারের আগে দোয়া করতেন- ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়াবিকা আমানতু ওয়া লাকা রিজকিকা আফতারতু বিরাহমাতিকা’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি, আর তোমারই ওপর ইমান এনেছি এবং তোমারই রহমতের রিজিক দ্বারা ইফতার করছি’ (মুসলিম)। এছাড়া ইফতার শেষেও তিনি মহান আল্লাহপাকের শুকরিয়া জ্ঞাপন করে দোয়া করতেন।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত-তিনি বলেন, হজরত নবি কারিম (সা.) যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন, ‘যাহাবাজ্জামায়ু ওয়াবতাল্লাতি উরুকু ওয়া ছাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ’ অর্থাৎ পিপাসা দূর হলো, শিরা উপশিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান তবে প্রতিদান স্থির হলো’ (আবু দাউদ)।

তারাবির নিয়ত

তারাবির নামাজ এবং সব সুন্নাত ও নফল নামাজের জন্য সাধারণভাবে নামাজের নিয়ত করলেও যথেষ্ট। এতদসত্ত্বেও সতর্কতাবশত তারাবিহ নামাজের জন্য অন্তরে ইচ্ছা পোষণ করে নেওয়া উত্তম [দুররে মুখতার ২/৮৬]। তারাবিহের মধ্যে কমপক্ষে একবার কুরআন খতম করা সুন্নাত। আর একবারের অধিকবার পড়া মুস্তাহাব [দুররে মুখতার ২/৪৩৩, আলমগিরী ১/১৭৭]।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম